কুমারখালীর পেঁয়াজ চাষীরা দাম নিয়ে হতাশ

0
135

ফুরফুরে মেজাজে মজুতদার ও ব্যবসায়ীরা

কুমারখালী প্রতিনিধি

বীজের দাম এবার কিছুটা কম ছিল, কিন্তু সারের দাম বেশি, শ্রমিকের মজুরী দিতে হয়েছে বেশি, বিক্রির সময় হাটের খাজনাও দিতে হয় বেশি, ওজনে ৪২ কেজিতে মণ হিসেবে বিক্রি করতে হয়। সবকিছু শেষে মাঠ থেকে পেঁয়াজ বাড়িতে আনা এবং বিক্রি করতে হাটে নেওয়া পর্যন্ত লোকসান গুনতে হয় কৃষকের।

তাই পেঁয়াজ চাষের আর আগ্রহ নেই বলে আক্ষেপ করে কথাগুলো বলেন, কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম। গত শুক্রবার স্থানীয় পান্টি হাইস্কুল মাঠের সাপ্তাহিক পেঁয়াজের হাটে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, খুব ভালো মানের পেঁয়াজ নিয়ে গিয়েছিলেন হাটে, সেগুলোর দাম ১২-১৩’শ টাকা মন হওয়া দরকার ছিল। কিন্তু পাইকাররা প্রতি মন পেঁয়াজের দাম বলেছেন ৭’শ থেকে ৮’শ টাকা।

সরেজমিন ঘুরে দেখাগেছে, উৎপাদন খরচের তুলনায় পেঁয়াজের দাম কম হওয়ায় হতাশায় ভুগছেন উপজেলার অধিকাংশ চাষীরা। দামের পরিবর্তন না হলে কৃষকের ব্যাপক লোকশান হবে এবং পেঁয়াজ চাষে অগ্রহ হারাবে কৃষক।

স্থানীয়দের সূত্রে জানাগেছে, প্রতি শুক্রবার পান্টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বসে সপ্তাহিক পেঁয়াজের হাট। জেলা ও জেলার বাইরে থেকে কয়েক হাজার কৃষক ও ব্যবসায়ীর আনাগোনা হয়। প্রায় ৪-৫ হাজার টন পেঁয়াজের আমদানি হয় এই হাটে।

হাটে আসা পান্টি ইউনিয়নের বশিগ্রামের কৃষক জহুরুল ইসলাম ও ডাঁসা গ্রামের কৃষক তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, পেঁয়াজ চাষীরা এবার বিরাট ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। কেজিতে ১০ -১৫ টাকা লোকসান যাচ্ছে। এমন দাম হলে সামনের বছর আর পেঁয়াজের চাষ করবনা। তারা আরো বলেন, কৃষক মেরে দেশ চলবে না। এই মুহুর্তে সরকারের উচিত দাম বাড়ানো।

বাগুলাট ইউনিয়নের বাঁশগ্রামের কৃষক তফিজ উদ্দিন বলেন, চাষের খরচ মেটাতে ১২ মণ পেঁয়াজ হাটে এনেছি। কেউ ৭০০ কেউ ৮০০ টাকা মণ বলছে। এক হাজার থেকে বারোশ টাকা মন হলে অন্তত উৎপাদন খরচ উঠানো যেতো।

স্থানীয় পেঁয়াজের মজুতদার ব্যবসায়ী সুরুজ মোল্লা বলেন, আজকের হাটে পেঁয়াজের আমদানি বেশি। প্রায় দেড়শ মণ পিঁয়াজ কিনেছি মজুত করার জন্য। আকার ভেদে ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকা মণ খরচ পড়েছে।
কুমিল্লা থেকে পান্টি হাটে আসা ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, এক গাড়ি (ট্রাক) মাল কিনেছি। প্রায় ৪৫০ মণ হবে। প্রতি মণে ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা খরচ পড়েছে। তিনি আরো বলেন, বাইরে থেকে পেঁয়াজের আমদানি করা এবং উৎপাদন বেশি হওয়ায় এখন পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম কম।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, এবছর উপজেলায় ৫ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়েছে। প্রতিকেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয়েছে ২৩ থেকে ২৫ টাকা। যা বর্তমান বাজারদরের চেয়ে বেশি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাইসুল ইসলাম বলেন, এবার প্রতিকেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকের ২৩ থেকে ২৫ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু বর্তমান পেঁয়াজের বাজারদর উৎপাদনের খরচের চেয়ে অনেক কম। পেঁয়াজের দাম না বাড়লে কৃষকরা তিগ্রস্থ হবেন।