ক্লিনিকের ছাদে জ্বলে উঠলো আগুন : আতঙ্কে ছুটাছুটি

0
64
অগ্নিকান্ডের পর সাংবাদিকের ক্যামেরার সামনে থেকে সরেযাওয়ার চেষ্টা করছেন এক কর্মচারী।

স্টাফ রিপোর্টার

বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে ক্লিনিকের ছাদে আগুন লাগিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগ পাওয়া গেছে। আগুন আতঙ্কে সদ্যপ্রসূত শিশু ও মাদের নিয়ে পরিবারের লোকেরা ছুটাছুটি করতে দেখা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, বুধবার রাত পৌনে ৮টার দিকে খোকসা উপজেলা সদরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় খোকসা হেলথ কেয়ার ক্লিনিকের তিন তলার ছাদে আগুন জ্বলতে দেখে এলাকাবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। অগ্নি সংযোগের সময় ক্লিনিকটির ভর্তি রোগীর আত্মীয় স্বজন ও কর্মচারীরা দিকবিদিক ছুটাছুটি শুরু করে। সাময়ীক ভাবে গোটা এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। ফায়ার সাভিসের একটি ইউনিটের কর্মীরা ঘটনা স্থলে হাজির হয়। তারা আগুন নেভাতে তিন তলার ছাদে পৌচ্ছালে সেখানে বাধা হয়ে দাড়ায় বাড়ির মালিক হাবিবুর রহমান হাবিব নিজে। দমকল কর্মীদের চাপের মুখে হাবিব নিজের ফ্লাটে গিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। পরে দমকল কর্মীরা আগুন নেভায়।

খোকসা বাস স্ট্যান্ডের ১০০ মিটার পূর্বদিকে তিনতলা বাড়ির প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় খোকসা হেল্থ কেয়ার ক্লিনিক। তিন তলায় বাড়ির মালিক হাবিব ও অপর এক ভারাটিয়া বাস করেন।

অগ্নিকান্ডের ঘটনার বর্ননা দিচ্ছেন আজিজাল সরদার

বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে শিমুলিয়ার কালিশঙ্করপুর গ্রামের আজিজাল সরদারের স্ত্রী চম্পা খাতুনের সিজার অপারেশন করা হয় এই ক্লিনিকে। তখনও প্রসূতি যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন। এমন সময় আগুন জ্বলে উঠতে দেখে অসুস্থ্য স্ত্রীকে ফেলে নবজাত কন্যাকে নিয়ে ক্লিনিকের দোতলা থেকে দৌড়ে নিচে নেমে আসেন তিনি (আজিজাল)। তার মত অন্যরোগীর লোকেরাও ছুটাছুটি শুরু করেন।

অগ্নি সংযোগের ২ ঘন্টা আগে সিজার অপারেশন করা দ্বিপালী খাতুনের স্বামী শুকুর আলী একই ভাবে ঘটনার বর্ননা দিলেন। তিনি জানান, তারা সবাই আতঙ্কিত হয়ে পরেছিলেন। এমন ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন তিনি।

ক্লিনিকটির ল্যাবসহকারী ইমরান জানান, তিনি সবে কাজ শেষ করেছেন। এমন সময় ছাদে হঠাৎ দাউদাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। এ সময় দুই ঘন্টা আগে সিজার অপারেশ করা দুইজন রোগীনিসহ তিনজন সিজার অপারেশনের রোগী ও তাদের পরিবারের কমপক্ষে ১৫ জন লোক ছিল। আগুনের খবর শুনে রোগীদের লোকজনের সাথে তিনি নিজেও অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করলে বাড়ির মালিক হাবিব ছাদের দরজা আটকে তামাসা করতে থাকেন। তাদের কাছে থাকা অন্য চাবি দিয়ে ছাদের দরজা খোলা হয়।

ঘটনা স্থলে উপস্থিত ফায়ার সাভিসের গ্রæফ লিডার রওশন আলী জানান, তিন তলা ভবনের মাথায় তীব্র আগুন জ্বলতে দেখে তারা নিজেরাই অভিযান শুরু করেন। কিন্তু তিন তলার ছাদে উঠার সময় মালিক হাবিব তাদের বাঁধাদেন। ভবনের অন্য ভারাটিয়াদের সহযোগীতায় তারা ছাদের দরজার তালা খুলে আগুন নেভাতে গেলেও মালিক তাদের আবার বাঁধা দেন।

তিনি আরও জানান, ভবন মালিক নিজে পায়রার ঘর ও কিছু পুরাতন ফানিচার জড়ো করে তাতে আগুন দেন। আগুনের পাশেই এসি ছিল। এসি বিস্ফোরন হলে ভয়ানক ক্ষতি হতে পারতো। অল্পের জন্য একধিক নবজাতক ও প্রসূতির জীবন রক্ষা পেয়েছে।

বাড়ির মালিক হাবিবুর রহমান হাবিরের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। তিনি তার ফ্লাটের দরজা খোলেননি। তাবে তার বাবা ব্যবসায়ী আব্দুস ছাত্তার জানান, তার ছেলে হাবিব মাদকাশক্ত। তাকে হত্যা করার জন্য রামদা নিয়ে ঘুরে রেড়ায়। ইতোমধ্যে কয়েকদফায় পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশের মাধ্যমে জেল হাজতেও পাঠানো হয়েছে। ছাড়া পেলেই আবার মাদকের সাথে জড়িয়ে পরে। তিনি নিজেও ছেলের প্রতি অতিষ্ট।

খোকসা হেলথ কেয়ার ক্লিনিকের মালিক পক্ষ আবুল কালাম বলেন, মালিক তার বাসায় আগুন লাগালে তার কি করার আছে। আগামী কাল বৃহস্পতিবার থানায় অভিযোগ দিয়ে রাখবেন বলেন জানান।

থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আননুর যায়েদ বলেন, এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাননি। তবে ঘটনাটি খতিয়ে খেদখবেন বলে জানান।