স্টাফ রিপোর্টার
কুষ্টিয়ার খোকসায় পাওনা টাকার দাবিতে এক খ্রিস্টান ধর্মালম্বির মৃতদেহ প্রায় ৮ ঘন্টা আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে পাওনাদারদের বিরুদ্ধে। অবশেষে পরিবার ও আত্মীয়রা জোর করে ওই ব্যক্তির সৎকার (দাফন) করে।
প্রয়াত খ্রিস্টান ধর্মালম্বীর নাম মাইকেল এম রহমান ওরফে মতিন (৫৫)। বুধবার রাত ৯টায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন। সে উপজেলার খোকসা ইউনিয়নের হিলালপুর গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে। প্রায় ২৫ বছর আগে সে খ্রিস্টান ধর্মের দীক্ষা গ্রহন করেন। মৃত্যুকালে তিনি দুই স্ত্রী ও ৫ কন্যা সন্তান রেখে গেছে।
খ্রিস্টান ধর্মের দীক্ষা নেওয়ার পর মাইকেল এম রহমান বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিদেশে পাঠানো, প্রকল্পের ঋন পাওয়া দেওয়ার কথা বলে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। ভুক্তভোগীরা তার কাছে থেকে টাকা ফেরৎ পাওয়ার জন্য ধর্ণা দিতে থাকে। কিন্তু সে আর টাকা ফেরৎ দেয়নি।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে মাইকেল এম রহমানের মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে গ্রামের বাড়ি হিলালপুরে আনা হয়। এ খবর ছড়িয়ে পরলে পাওনাদার নারী-পুরুষ মৃত ব্যক্তির বাড়িতে ধর্ণা দিতে শুরু। তার মৃতব্যক্তির সৎকারে বাধা প্রদান করেন। এ নিয়ে পাওনাদারদের সাথে মাইকেল এম রহমানের পরিবারের সদস্যরা বাকবিতান্ডায় জড়িয়ে পরে। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত পাওনা দার ও পরিবারের মধ্যে উতপ্ত কথা কাটা-কাটি থেকে ধস্তাধস্তি পর্যায়ে পৌছায়। পরে পরিবারের লোকেরা জোর করে মৃতদেহটি কমলাপুর চালর্সে নিয়ে যায়। সেখানে খ্রিস্টান ধর্মমতে সমাধিক্ষেত্রে তার সৎকার (দাফন) করা হয়।
নিহতের বাড়িতে উপস্থিত সাইফুলে ইসলাম দাবি করেন, তাকে অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর কথা বলে নগদ ৯ লাখ টাকা ও সাত লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকার চেকসহ ১৬ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়েছেন মাইকেল এম রহমান। প্রায় ৩ বছর ধরে তাকে আর বিদেশে পাঠাতে পারেনি। তার টাকা ও ফেরতও দেয়নি। পরিবার তার টাকার দায়িত্ব নিলে তিনি লাশ আটকাতে যাবেনা।
ঘটনা স্থলে উপস্থিত বিথি খাতুন জানান, তার স্বামী আরিফ হোসেনকে গরুর ফার্মের উপর ১ কোটি টাকা ঋন করে দেওয়া কথা বলে ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রায় ২ বছর ধরে ঘুড়াতে থাকে। কিন্তু টাকাও ফেরত দেয়নি আবার প্রকল্পের ঋণ বরাদ্দ করে দিতে পারেনি। তিনিও টাকার দাবি তুলেছেন বলে স্বীকার করেন।
শোমসপুর ইউনিয়নের জাহিদ হোসেনকে গরুর খামারের ঋণ করিয়ে দেওয়ার কথা বলে এম রহমান চার লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কিন্তু ঋণ করে দিতে পারেনি। টাকাও ফেরত দেয়ানি। সে নিজের জীবন ও পরিবার রক্ষায় বাধ্য হয়ে মৃতদেহ আটকানো দের সাথে যোগ দিয়েছেন।
নিহতের দুই স্ত্রী সনিকা ও মারি দাবি করেন, তার স্বামী কারো সাথে প্রতারণা করেনি। উল্টো করে সেই অন্য মানুষের কাছে প্রায় কোটি টাকা পাবেন। অনেকেই তার কাছে চেক দিয়ে টাকা নিয়েছে। সে যাতে টাকার দাবি না করতে পারে সেই জন্য তাদের উপর উল্টো চাপ দিচ্ছে।
আরও পড়ুন – নির্বাচন কমিশনে বিএনপি-জামায়াতের লোক – আওয়ামী লীগ
প্রয়াত ব্যক্তির ছোট ভাই মোক্তার হোসেন জানান, মতিন ওরফে মাইকেল এম রহমান ইসলাম ধর্ম ত্যাগের পর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এক সপ্তাহ আগে তিনি ব্রেনস্ট্রোক রোগে আক্রান্ত হন। দেনা পাওনার বিষয়ে কথিত পাওনাদার ও মৃতব্যক্তিই জানেন।