ছাদ থেকে ফেলে কলেজ ছাত্র হত্যায় ছয় সহপাঠী আটক

0
49
নিহত রুবেল - ফাইল ছবি

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়া শহরতলীর একটি চারতলা বাড়ির ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে রুবেল হোসেন (২২) নামের এক কলেজ ছাত্রকে হত্যার ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৬ জনকে আটক করেছে। এদিকে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের বিচারের দাবিতে বুধবার দুপুরে সহপাঠীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে নৃশংস এই হত্যাকান্ডের বিচার ও হত্যাকরীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।

কুষ্টিয়া মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দীপেন্দ্র নাথ সিংহ বলেন, ময়নাতদন্তের পর বুধবার দুপুরে লাশ পরিবারের কাছে হন্তান্তর করা হয়েছে। নিহত কলেজ ছাত্রের বাবা শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় এজাহার জমা দিয়েছেন। ঘটনার অধিকতর তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা সবাই ওই ছাত্রাবাসের এবং নিহত ওই কলেজ ছাত্রের সহপাঠী বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (০১ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০ টার দিকে শহরের কোর্টপাড়া এলাকার একটি চারতলা ভবনের ছাদ থেকে রশি দিয়ে হাত-পা ও কাপড় দিয়ে মুখ বাধা অবস্থায় রুবেল হোসেনকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। রুবেল ওই ছাত্রাবাসের তৃতীয় তলায় থাকতেন।

স্থানীয়রা তাকে ওই অবস্থায় উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে রাত সাড়ে ১২টার দিকে রুবেলের মৃত্যু হয়েছে।

নিহত রুবেল হোসেন কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে। তিনি কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাওয়ার ডিপার্টমেন্টের ৬ষ্ঠ সেমিষ্টারের ছাত্র ছিলেন।

রুবেলকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ওই ছাত্রাবাসের সঙ্গী আনিসুর রহমান বলেন, তিন তলায় তিনটি রুমে আমরা ৯ জন থাকতাম। রুবেলের রুমে তিনজন থাকতো।

রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে নিজ কক্ষ থেকে চিৎকারের শব্দ শুনে নিচে নেমে এসে দেখি হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় রুবেল নিচে পড়ে আছে। তখন স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। তিনি আরো জানান, বিকাল থেকে রুবেলকে চিন্তিত থাকতে দেখেছি। সন্ধ্যার পরে এক সাথে ছাত্রাবাসের খরচের হিসাব করেছি। তবে এই ঘটনা কিভাবে, কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে সেটা জানি না।

কামরুল হাসান শুভ নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ধারণা করছি হাত-পা ও মুখ বেঁধে মারধর করে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে তাকে। তার দুই হাত,দুই পা সাদা রশি ও মুখ লাল কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিল। ঘটনার পর পুলিশের সাথে ভবনের তিনতলায় গেলে ওই রুমের বারান্দায় একই রঙের রশি টানানো থাকতে দেখেছি। তিনি দাবি করেন এটা একটা হত্যাকান্ড। তবে কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে এ ব্যাপারে কোন কিছু তিনি জানেন না।

আরও পড়ুন – উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পাহাড় সমান অভিযোগে

রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওই ছাত্রবাসে গিয়ে দেখা যায়,রুবেলের সাথে একই রুমে থাকা হৃদয় ও রাইসুলসহ অন্যান্যদের জিজ্ঞেসাবাদ করছে পুলিশ। এ সময় বিষয়টি তদন্ত করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায় স্থানীয়রা।

মাহিম নামের স্থানীয় এক যুবক জানান,ঘটনার পরেই আমরা ছাত্রাবাসের ছেলেদের কাছে ঘটনা কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করেছি। তারা কেউ কিছু জানে না বলছে। তবে চারতলা ভবনের ছাদ বন্ধ থাকে। বাড়ির মালিক ছাড়া ছাদের চাবি ছাত্রাবাসের এক ছেলের কাছে থাকে জানতে পেরেছি। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক কিছু জানতে পারবে।

জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক মিঠুন চক্রবর্তী বলেন, আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাত ১১টার দিকে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।