মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় ১১ জন নিহত, গেটম্যান আটক

0
157

দ্রোহ অনলাইন ডেস্ক

ছুটির দিনে ঘুরতে বেরিয়ে কোচিং সেন্টারের ১১ জন লাশ হয়ে ফিরলেন। তারা চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক-শিার্থী। কোচিং সেন্টারের উদ্যোগে চাঁদা তুলে খৈয়াছড়া ঝরনায় পিকনিক করতে গিয়েছিলেন তারা।

শুক্রবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে মীরসরাইয়ের বারতাকিয়া রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাস। এতে ১১ জন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও পাঁচ জন। এ ঘটনায় রেলওয়ের এক গেটম্যানকে পুলিশ আটক করেছে।

জানা গেছে, আর অ্যান্ড জে কোচিং সেন্টারের শিক-শিার্থীসহ ১৬ জন শুক্রবার সকাল ৮টায় হাটহাজারীর আমান বাজার থেকে মাইক্রোবাসযোগে খৈয়াছড়া ঝরনায় ঘুরতে যান। ঘোরাঘুরি শেষে ফেরার পথে দুপুর পৌনে ২টার দিকে বারতাকিয়া রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দেয় চট্টগ্রামমুখী মহানগর প্রভাতী ট্রেন। এতে ঘটনাস্থলেই ১১ জন নিহত হন। আহত হন আরও পাঁচ জন। তাদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আর অ্যান্ড জে কোচিং সেন্টারের শিার্থী কাজী এম সাজিদ বলেন, আমান বাজার এলাকার যুগিরহাটে আমাদের কোচিং সেন্টারটি অবস্থিত। কোচিং সেন্টারের ১৬ শিক-শিার্থী খৈয়াছড়া ঝরনাসহ মীরসরাইয়ের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র দেখতে ৫০০ টাকা করে চাঁদা তুলেছিলেন। এর মধ্যে চার জন শিক ছিলেন। তারা হলেন জিসান, রিদুয়ান, সজিব ও রাকিব। বাকিরা শিার্থী। এর মধ্যে ছয় জন এসএসসি পরীার্থী বাকি চার জন একাদশ শ্রেণির ছাত্র। একজন মাইক্রোবাসের চালক অপরজনের পরিচয় আমার জানা নেই। ১৬ জনের মধ্যে ১১ জন নিহত হয়েছেন। পাঁচ জন আহত হয়েছেন।

কাজী এম সাজিদ আরও বলেন, পিকনিকে আমারও যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ আমার ফুটবল ম্যাচ থাকায় যাওয়া হয়নি।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিক্যাল কর্মকর্তা নিবেদিতা ঘোষ বলেন, মীরসরাইয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত পাঁচ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে চার জন এবং ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে এক জনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এ ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ছয় জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেনÑ মাহিন (১৮), তানভীর হাসান (১৮), জুনায়েদ হোসেন (১৮), জিয়াউল হক সজীব, মোছহাব আহমেদ হিসাম, মাইক্রোবাসচালক গোলাম মোস্তফা নিরু (২৮)।

ঘটনায় খৈয়াছড়া রেলক্রসিংয়ের গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনকে আটক করেছে রেলওয়ে পুলিশ। তার ঘটনা স্থলে থাকার বিষয়নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে রেলক্রসিংটির সামনে কথা হয় রেল পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার (জি এম) জাহাঙ্গীর হোসেন সঙ্গে। তিনি বলেন, ক্রসিং এলাকার এক দোকানি জানিয়েছেন দুর্ঘটনার সময় গেটম্যান সাদ্দাম দোকানে বসে ভাত খাচ্ছিলেন। এ ঘটনা সত্য নাকি মিথ্যা এটা যাচাই করার জন্য ইতোমধ্যে তাকে আটক করা হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয়দের কেউ কেউ বলছেন, মাইক্রোবাস চালকের অবহেলায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। নামানো গেট তুলে তিনি প্রবেশ করেছেন।

গেটম্যান সাদ্দামকে সন্ধ্যা ৬টার দিকে ক্রসিং এলাকা থেকে আটক করা হয়। মীরসরাই রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশ সুপার মো. হাসান চৌধুরী বলেন, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামমুখী মহানগর প্রভাতী ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহত হয়েছেন। আরও পাঁচ যাত্রী আহত হয়েছেন। উদ্ধার তৎপরতা শেষ করেছে ফায়ার সার্ভিস। ধাক্কা দিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার মাইক্রোবাসটি নিয়ে গেছে ট্রেনটি। সেটি উদ্ধার করা হয়েছে।

রেলের তদন্ত কমিটি গঠন

চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপ।

শুক্রবার বিকালে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) আনছার আলীকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের এই তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন।

আরো পড়ুন – ঝিনাইদহ অজ্ঞাত ব্যক্তির মৃত্যু

কমিটির অপর চার সদস্য হলেন, বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী-১ আবদুল হামিদ, বিভাগীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (লোকো) জাহিদ হাসান, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট রেজানুর রহমান এবং বিভাগীয় মেডিক্যাল অফিসার (ডিএমও) আনোয়ার হোসেন।

জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, দুর্ঘটনার বিষয়টি তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দ্রæত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।