কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ায় টেলিটকের মোবাইল এ্যাপসের মাধ্যমে মাত্র ১২০ টাকা ব্যয়ে আবেদন করে পুলিশের চাকরি পেয়েছেন ৭৪ জন নারী পুরুষ।
প্রচলিত ধ্যান-ধারণাকে ভেঙ্গে শতভাগ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন কুষ্টিয়ার পুলিশ। সদ্য সাধারণ কনস্টেবল পদে চাকুরি পাওয়া ৭৪ জন এবং তাদের অভিভাবকদের সামনে হাজির করে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার খাইরুল আলম চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, আমি এবং আমার টিম যারা চাকরি পেয়েছে তাদের কাছ থেকে যদি একটি টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছি এমন প্রমাণ যদি কেউ দেখাতে পারেন তাহলে আপনারা যে শাস্তি দেবেন তা মাথা পেতে নেব।
দৌলতপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের বড়গাংদিয়া গ্রামের আরেজুল ইসলামের সম্বল বলতে পৈত্রিক ভিটার ৫ কাঠা জমি। তার আবার ভাগিদার ২ ভাই ও ৪ বোন। নিজের কোন জমি না থাকায় অন্যের জমি চাষাবাদ করেন। আবার অনেক সময় দিনমজুরি করে সংসার চালান। অভাব-অনাটনের মধ্যেই দুই ছেলেকে পড়ালেখা করাচ্ছেন। বড় ছেলে আশিকুর রহমান রাজিব অনার্সে পড়ছেন। ছোট ছেলে রকিবুল হাসান বিজয় পড়ে ৭ম শ্রেণিতে।
দিনমজুর আরেজুল ইসলামকে ছেলের চাকরি পেতে কোথাও কোন টাকা-পয়সা ঘুষ দিতে হয়েছে কি না? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাড় করায় যেখানে কঠিন সেখানে ঘুষ দেব কোথা থেকে।
চাকরি পাওয়া হামিন (১৯)। গত বছর কুষ্টিয়া পুলিশ লাইন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করেছেন। তার পিতা বাবর আলী ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের ষোলদাগ মোসলেমপুর গ্রামের জিকে কোয়ার্টারে বসবাস করেন। পেশায় দিনমজুর বাবর আলী জানান, নিজের কোন জায়গা-জমি নাই। একবেলা খেয়ে না খেয়ে সংসার চলে তাদের। ছেলে হামিন প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের পড়ালেখার খরচ চালিয়েছে। ছেলের চাকরি হওয়ার সংবাদ শুনে তার খুশির কোন সীমা নেই।
অটো চালক হামিদুল হকের কোন ছেলে সন্তান নেই। দুই মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়েই তার সংসার। বড় মেয়ে হাফিজা খাতুন কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজের দর্শন অনার্স ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী। হাফিজা জানান, পয়সা দিয়ে চাকরি নেয়ার সামর্থ আমার পিতার নেই। শুনেছিলাম পুলিশের চাকরি টাকা ছাড়া হয়না। কিন্তু নিজে চাকরি পেয়ে আমার সেই ধারণা এখন ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার খাইরুল আলম জানান, যখন এদের লাইনে দাঁড় করানো হয় তখন মাইকে একটি ঘোষণা দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, তোমরা কাউকে একটি টাকা ঘুষ দেবে না। যদি তোমাদের কাছে কেউ ঘুষ দাবি করে তাহলে আমাকে কিংবা থানায় ফোন করে জানাবে। আমার ওপর আস্থা রাখতে পারো। যদি তোমার যোগ্যতা থাকে তাহলে এমনিতেই চাকরি হবে। তাই কাউকে চাকরির জন্য টাকা দিয়ে প্রতারিত হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়- চাকরি নয়, সেবা। এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গত বছরের পহেলা ডিসেম্বর পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরির জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। চাকরির জন্য ২৫০২ জন প্রার্থী আবেদন করেন। বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে ৩৪১ জন পরীক্ষার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। একজন প্রার্থী বাদে সবাই লিখিত পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন। এদের মধ্যে উত্তীর্ণ ১২৩ জনকে গত ২৭ ফেরুয়ারি মনস্তাত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য ডাকা হয়। মনস্তাত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে ৭৪ জনকে চুড়ান্ত করা হয়। এদের মধ্যে ৬৯ জন পুরুষ এবং নারী ৫ জন। সংবাদ সম্মেলনে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য মাগুরা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) কামরুল হাসান, নিয়োগ বোর্ডেও সদস্য যশোর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফিরোজ কবিরসহ জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে নিয়োগ প্রাপ্তদের পুলিশ সুপার খাইরল আলম ফুলেল শুভেচ্ছা জানান এবং অভিভাবকসহ সকলকে মিষ্টি মুখ করান।