আজ সুনীলের জন্মতিথি

0
193
সংগৃহিত ছবি

দ্রোহ সাহিত্য ডেস্ক

‘কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো কেউ কথা রাখেনি’ সর্বাধিক পঠিত এই কবিতার রচয়িতা কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। বিশ শতকের শেষার্ধে আবির্ভূত প্রথিতযশা এই বাঙালি সাহিত্যিক আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি। তিনি আধুনিক এবং রোমান্টিক ধাঁচের লেখার জন্য পাঠকমহলে তিনি ছিলেন বিশেষভাবে সমাদৃত।

বাংলাভাষী এই ভারতীয় সাহিত্যিক একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট হিসেবে অজ¯্র স্মরণীয় সাহিত্যসৃজন উপহার দিয়েছেন। যদিও তিনি পরিচিতি পেয়েছেন কবি ও ঔপন্যাসিক হিসেবে। তবে বলা হয়ে থাকে সুনীল সব ধরনের লেখা লিখলেও মনেপ্রাণে তিনি ছিলেন একজন কবি। আর তাই তরুণ কবি ও লেখকরা সবসময়ই তার প্রশ্রয় পেয়েছেন। পৃথিবীতে অখ- বাঙালির আত্মপরিচয়ের যে-ক’জন ব্যক্তিত্ব ছিলেন বা রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।

৭ সেপ্টেম্বর বাংলা সাহিত্যের নন্দিত এই লেখকের জন্মবার্ষিকী। ১৯৩৪ সালের এইদিনে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম অধুনা বাংলাদেশের মদারিপুরে। বর্তমান যা বাংলাদেশের অন্তর্গত। জন্ম বাংলাদেশে হলেও তিনি বড় হয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি কলকাতায় চলে যান।

পড়াশোনা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর বাবা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। ছেলেবেলায় সুনীলের পিতা তাকে টেনিসনের একটা কাব্যগ্রন্থ দিয়ে বলেছিলেন,প্রতিদিন এখান থেকে দুটি করে কবিতা অনুবাদ করবে। এটা করা হয়েছিল তিনি যেন দুপুরে বাইরে যেতে না পারেন। সুনীলও তাই করতেন। সুনীল তখন পিতৃআজ্ঞা শিরোধার্য করে দুপুরে কবিতা অনুবাদ করতেন। অনুবাদ একঘেঁয়ে হয়ে উঠলে তিনি নিজেই লিখতে শুরু করেন।

ছেলেবেলার প্রেমিকাকে উদ্দেশ্য করে লেখা কবিতাটি তিনি দেশ পত্রিকায় পাঠালে তা ছাপা হয়। নীললোহিত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছদ্মনাম। নীললোহিতের মাধ্যমে সুনীল নিজের একটি পৃথক সত্ত্বা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।

তিনি ছিলেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অনন্য দিকপাল। তারপর থেকে সাংবাদিকতায় যোগ দেন সুনীল।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বেশ কিছু গল্প-উপন্যাসের কাহিনি চলচ্চিত্রে রূপায়ণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত অরণ্যের দিনরাত্রি এবং উল্লেখযোগ্য। এছাড়া কাকাবাবু চরিত্রের চারটি কাহিনি সবুজ দ্বীপের রাজা, কাকাবাবু হেরে গেলেন? মিশর রহস্য এবং ইয়েতি অভিযান চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। ২০০২ সালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতা শহরের শেরিফ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭২ ও ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে আনন্দ পুরস্কার এবং ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।

তার লেখা উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে- পূর্ব-পশ্চিম, সেই সময়, প্রথম আলো, একা এবং কয়েকজন। আত্মজীবনীর মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে- অর্ধেক জীবন, ছবির দেশে কবিতার দেশে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের আলোচিত কবিতার মধ্যে-সুন্দরের মন খারাপ মাধুর্যে জ্বর, সেই মুহূর্তে নীরা, স্মৃতির শহর, সুন্দর রহস্যময় উল্লেখযোগ্য।

তার লেখা কবিতাগ্রন্থের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ‘একা এবং কয়েকজন’, ‘আমার স্বপ্ন’, ‘জাগরণ হেমবর্ণ’, ‘আমি কীরকম ভাবে বেঁচে আছি’, ‘ভালোবাসা খ-কাব্য’। এ ছাড়াও নাটক, গল্প, প্রবন্ধসহ অসংখ্য সাহিত্য রচনা করেছেন।

বাংলা সাহিত্যের কীর্তিমান এই সাহিত্যিক ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর হৃদযন্ত্রজনিত অসুস্থতার কারণে মৃত্যুবরণ করেন। সশরীরে তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেও নন্দিত এই লেখক তার অনন্যসব সাহিত্য-সৃজনের মাঝে বেঁচে থাকবেন।