ইবি প্রতিনিধি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম নিয়োগ বোর্ড বাতিলের দাবিতে শিক-কর্মকর্তাদের এক অংশ । প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু করেছে। অন্য দিকে উপাচার্যের দাবি, যাঁরা নিয়োগ বোর্ডে আছেন, তাঁদের চেয়ে ফেয়ার (স্বচ্ছ) কেউ হতে পারে না।
মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপাচার্যের কার্যালয়ে উপাচার্যের সঙ্গে শিকদের বাগবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে সেখানে হট্টগোল তৈরি সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে দিনভর উত্তাল ছিল ক্যাম্পাস। শিক-কর্মকর্তারা উপাচার্যের কার্যালয় থেকে ফিরে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছেন। দুপুরের পর ইমাম নিয়োগ বোর্ড প্রশাসনিক ভবন থেকে উপাচার্যের বাংলোতে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন নতুন নিয়োগ বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম নিয়োগের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বোর্ড বাতিলের দাবি করে শিক-কর্মকর্তাদের একটি প। সকালে উপাচার্যের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁরা উপাচার্যের বিরুদ্ধে ওঠা আগের নিয়োগ-সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত নতুন নিয়োগ বন্ধের দাবি জানান। পরে শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতা-কর্মীরা নিয়োগ চালু রাখার দাবিতে উপাচার্যের কার্যালয়ে ঢোকেন। তাঁরা উচ্চ স্বরে শিক-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ¯েøাগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে শিকদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাগবিতন্ডায় জড়ান।
২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম। গত বছরের ২ ফেব্রæয়ারি থেকে উপাচার্যের কণ্ঠসদৃশ ১৭টি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর পরিপ্রেেিত তদন্ত কমিটি গঠন করে দুদক। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও (ইউজিসি) তদন্ত করছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম নিয়োগের বোর্ড ছিল।
প্রত্যদর্শী কয়েকজন জানান, সকালে ওই নিয়োগ বোর্ড বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতি ও প্রগতিশীল শিকদের সংগঠন ‘শাপলা ফোরামের’ নেতারা উপাচার্যের কার্যালয়ে যান। শিক নেতারা বলেন, যতণ পর্যন্ত ভিসির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সুরাহা হবে না, ততণ কোনো নিয়োগ বোর্ড হবে না। অন্যদিকে নিয়োগপ্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে চালু রাখার দাবিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। তখন শিক ও নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্চবাচ্য ও বাগবিতন্ডা হয়।
এ সময় উপাচার্যের পাশে সহ-উপাচার্য মাহবুবুর রহমান, কোষাধ্য আলমগীর হোসেন ভূঁইয়াসহ কয়েকজন শিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন। উপাচার্যের টেবিলের অন্য প্রান্তে ছিলেন সাবেক প্রক্টর মাহবুবুর রহমান, শিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রহমান, শাপলা ফোরামের সভাপতি পরেশ চন্দ্র বর্মণ, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আরেফীন, ছাত্র উপদেষ্টা শেলীনা নাসরীনসহ অন্তত ৩০ জন শিক।
উপাচার্যের কার্যালয়ে ছাত্রলীগকে ডেকে এনে শিকদের অপমান করা হয়েছে দাবি করেন শিকেরা। তাঁরা কার্যালয় থেকে বের হয়ে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন করেন। এ ছাড়া সকাল থেকে কর্মকর্তারা নিয়োগ বোর্ড বাতিলের দাবিতে প্রশাসন ভবনের সামনে আন্দোলন করেন। শিকদের দাবি, ‘দুর্নীতিবাজ’ উপাচার্যকে দিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করাতে চায় একটি প।
মানববন্ধনে ছাত্র উপদেষ্টা শেলীনা নাসরীন বলেন, ‘কেন ছাত্রদের শিকদের মুখোমুখি করা হলো? পরিকল্পিতভাবে তাঁদের ডেকে আনা হয়েছে। শিকেরা লাঞ্ছিত হলেন, অপমানিত করা হলো। যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে ভবিষ্যতে কাসরুম থেকে শিকদের বের করে দেওয়া হতে পারে। এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমি এখানে থাকব।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী ওরফে আরাফাত বলেন, ‘নিয়োগসংক্রান্ত বিষয়ে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ইমাম নিয়োগেও কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। উপাচার্যের কে কারা গিয়েছেন, জানি না।’
বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আরেফীন বলেন, ইমাম নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে। আগেও ভিসির অডিও ফাঁস হয়েছে। সেগুলোর তদন্ত চলছে। সব মিলিয়ে এসব তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ বন্ধ রাখতে বলা হচ্ছিল।