ইবি-কুমারখালী রুটে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চালুর দাবীতে স্মারকলিপি পেশ

0
47

কুমারখালী প্রতিনিধি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে কুমারখালী পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস সার্ভিস চালুর দাবীতে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা।

রবিবার সকালে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা কুমারখালী থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পর্যন্ত বাস চালুর দাবি করে। এ স্মারকলিপিতে আরও জানানো হয়, জেলার কুমারখালী-খোকসা অঞ্চল থেকে প্রায় ১৫০-২০০ জন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাতায়াত করে। এদের অধিকাংশই মেয়ে শিক্ষার্থী। প্রতিমাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত বাবদ তাদের অতিরিক্ত তিন থেকে চার হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়। এর সাথে সড়ক দুর্ঘনার ঝুঁকিও রয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস সার্ভিসের ফি পরিশোধ করার পরও বাস সার্ভিস থেকে বঞ্চিত রয়েছি। আমাদের পরিবহন সমস্যার কারণে অনেক সময় বিলম্বে পৌঁছাতে হয়। পরীক্ষার সময় এ ধরণের বিলম্বের কারণে আমাদের অনেক বড় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কিন্তু আমরা যারা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান, তাদের পক্ষে নিয়মিত অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া দিয়ে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করা ব্যয়সাধ্য। প্রতিনিয়ত আমাদেরকে অটো, ভ্যান ইত্যাদি যানবাহনের মাধ্যমে যাতায়াত করতে হয়, যা আমাদের জন্য ব্যয়বহুল। তাই আমাদের এলাকার শিক্ষার্থীদের স্বার্থে ক্যাম্পাস-পান্টি-কুমারখালী রুটে বাস সার্ভিস চালু করার দাবি জানাই।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুনির হোসেন সিএনজিতে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায়। প্রতিনিয়তই অনেক শিক্ষার্থী ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের সড়ক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছে।

এ বিষয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী চায়না খাতুন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস শিডিউলে কুমারখালী পর্যন্ত দেওয়ার দাবি জানাই। সেই সঙ্গে রাস্তা সংস্কারের দাবি জানাই। একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর প্রাণ এভাবে ঝরে যাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে হলেও এটির বাস্তবায়ন দেখতে চাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কুলসুম খাতুন বলেন, যদি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিগত ৩০ বছর ধরে কুমারখালী-খোকসা অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের একটি যৌক্তিক দাবিকে উপেক্ষা, অবজ্ঞা এবং অবহেলা না করতো। তাহলে হয়ত ঠুনকোভাবে কোনো শিক্ষার্থীর প্রাণ ঝরবে না।

নিহত শিক্ষার্থী মনিরের বাবা বিল্লাল হোসাইন বলেন, কুমারখালী থেকে বাস চললে হয়তো এমন দুর্ঘটনা নাও ঘটতে পারতো। আর যেন কারো সন্তান না হারায়, সেজন্য তিনি দ্রæত বাস চালুর দাবি জানান।

২০২১ – ২০২২ শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রাকিব জোর্য়াদ্দার বলেন, শরীর নিয়ে চলাফেরা সমস্যা। হোস্টেলে বা মেসে থাকাও সমস্যা। বাস চললে খুবই উপকার হতো, খরচও বাঁচতো। তাঁর ভাষ্য, পার্শ্ববর্তী শৈলকুপা উপজেলায় যদি বাস চলাচল করে। তাহলে কুমারখালী থেকে কেন নয় ? এটা আমাদের যৌক্তিক দাবি।

সোহানুর রহমান সোহান নামের আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, তার মা হোটেলে কাজ করে। বিভিন্ন জনের আর্থিক সহযোগীতায় ক্যাম্পাসে ভর্তি হয়েছি। এখন টিউশনি করে পড়াশোনা চালিয়ে নিচ্ছি। বাড়ি থেকে ইজিবাইক করে প্রতিদিন ক্যাম্পাসে যাওয়া আসি করি। এতে প্রতিদিন ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা খরচ। আবার অনেক সময় ক্লাস মিস হয়ে যায়। অথচ প্রতি পরীক্ষায় ৯০০ টাকা বাস সার্ভিস পরিশোধ করা লাগে। যদি বাস চলতো মাসে প্রায় দুই – তিন হাজার টাকা বেঁচে যেত। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২ – ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র এবং কুমারখালীর যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের মৃত শহিদুল ইসলামের ছেলে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ কে বার বার ফোন দিলেও তিনি কলটি রিসিভ করেন নাই। আবার ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ইবির নতুন পরবিহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী বলেন, এ সেক্টরে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি দেখেছি। আমি সকল প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতি নির্মূল করতে কাজ করবো। শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।