কুমারখালীতে ২৯ লাখ টাকাসহ স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনায় আটক ৩

0
38

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

একটি ফাঁকা বাড়ি থেকে প্রথমে মোটা অংকের টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরি করে চোর চক্র। পরে সেই টাকার দুই লাখ টাকা দিয়ে সুজুকি জিক্সার মডেলের একটি মোটরসাইকেল কিনেন তারা। এরপর মোটসাইকেলটির মালিকানা নিয়ে নিজেদের মধ্যে শুরু হয় দ্বন্ধ। এনিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে চক্রটির মো. আলিফুজ্জামান বাদী হয়ে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানায় মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে একটি মামলা করেন। আর মামলার তদন্তে বেড়িয়ে আসে আসল চুরির রহস্য।

এরপর ওইদিন রাতেই চোর চক্রের মূলহোতা মো. আব্দুল্লাহ ও কথিত মোটরসাইকেল চুরি মামলার বাদীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার ( ১৩ নভেম্বর) দুপুরে আসামিদের আদালত পাঠানো হলে বিজ্ঞ আদালত তাদেরকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় ক্রয়কৃত মোটরসাইকেলটি জব্দ করা হলেও চুরির মালামাল এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এ তথ্য জানিয়েছে কুমারখালী থানা পুলিশ।

এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের যদুবয়রা গ্রামের গৃহিণী দেলোয়ারা হোসেন ডলির বাড়িতে নগদ প্রায় ২৯ লাখ টাকা ও আনুমানিক প্রায় সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনা ঘটে। এঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতে ওই গৃহিণীর জামায় কোহিনূর ইসলাম বাদী হয়ে চোর চক্রের মূলহোতা মো. আব্দুল্লাহ (২৩)সহ ৭ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এছাড়াও মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৩-৪ জনকে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন – উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের যদুবয়রা গ্রামের হাফেজপাড়ার আব্দুল মোমিনের ছেলে মো. আব্দুল্লাহ ও স্ত্রী জাহানারা বেগম (৩৮)। অপরজন একই এলাকার শফিকুল ইসলামের ছেলে মো. আলিফুজ্জামান (২৪)। চোর চক্রের মূলহোতা আব্দুল্লাহর নামে কুমারখালীসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক চুরি ও মাদক মামলা রয়েছে।

মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন – যদুবয়রা গ্রামের হাফেজপাড়ার কামাল হোসেনের ছেলে সাব্বির হোসেন (২১), মৃত আজিজুল হকের ছেলে মোহাম্মদ আলী (৩৫), জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হাসিমপুর গ্রামের পিয়াস হাসান স্নেহ (২১), পৌরসভার কাজীপাড়া এলাকার খন্দকার লিটন মাহমুদের স্ত্রী পাপিয়া খাতুন (৩৬)।

মামলার বাদী কোহিনুর ইসলাম জানান, আমার শ্বশুর ঢাকায় চাকুরি করেন। সেই সুবাধে আমার শ্বাশুড়ি প্রায়ই ঢাকা ও গ্রামের বাড়িতে যাওয়া আসা করেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে শ্বাশুড়ি এসে দেখেন টিনের চালা বিশিষ্ট আধাপাকা ঘরের বারান্দায় গ্রিলের তালা ভাঙা। এরপর রুমের মধ্যে ঢুকে দেখেন একটি ষ্টীলের আলমারীর তালা ভাঙা এবং আলমারীর মধ্যে থাকা জমি বিক্রয়ের নগদ ২৯ লাখ টাকা, সাড়ে ৩ ভরি ওজনের ২ টি স্বর্ণের সীতা হার, এক ভরি ওজনের ৪ টি স্বর্ণের চেইন ও ৪ টি আংটি, ২ ভরি ওজনের দুই জোড়া স্বর্ণের রুলি বালা নেই।

কোহিনুরের শ্বাশুড়ি দেলোয়ারা হোসেন ডলি বলেন, সম্প্রতি আমার বাবার বাড়ি থেকে প্রায় ৬ বিঘা জমি বিক্রি করে ২৯ লাখ টাকা এনে বাড়িতে রেখে ঢাকা গিয়েছিলাম। ফিরে দেখি আমার সব শেষ। আমি আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানান, সম্প্রতি চোর চক্রের মূলহোতা আব্দুল্লাহ যেন আলাদ্বীনের চেরাগ হাতে পেয়ে যান। হঠাৎ ব্যাগভর্তি টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে বাড়িতে এসে শুরু করেন বাড়ি নির্মাণের কাজ। ধুমধাম করে সেরেছেন নিজের বিয়ের কাজটিও। বাবা ও চাচার কাঠের ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করেছেন লাখ লাখ টাকা। স্বজন সাব্বিরকে বিদেশে পাঠানোর জন্য দিয়েছেন প্রায় সাত লাখ টাকা। কিনেন একটি মোটরসাইকেলও। তবে মোটরসাইকেল কেনা ও চুরির টাকা নিয়ে চক্রটির মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে আসল চুরির ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।

মোটরসাইকেল চুরি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আশরাফুল ইসলাম বলেন, একটি মোটরসাইকেল চুরির মামলায় আসল চুরির রহস্য বেড়িয়ে এসেছে। গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই গৃহিণীর বাড়ি থেকে প্রায় ২৯ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরির দায় স্বীকার করেছে।

আরও পড়ুন – মীর মশাররফ হোসেন’র ১৭৭ তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমলার উদ্বোধন

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, একটি মোটরসাইকেল চুরি মামলার তদন্তে ক্লুলেস চুরির আসল রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ক্লুলেস চুরি মামলায় মোটসাইকেল চুরি মামলার বাদী, চোর চক্রের মূলহোতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মূলত চুরির টাকা দিয়ে মোটরসাইকেলটি কিনেছিল তারা। চুরির মালামাল উদ্ধার ও চক্রটির অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারে বিজ্ঞ আদালতের কাছে রিমান্ড শুনাণীর প্রার্থনা করা হয়েছে বলে জানান ওসি।