কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের পক্ষ নিয়ে পুলিশের পোষাক পরিহিত অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে বক্তব্য প্রদান করা পুলিশের সেই এএসআই গোলাম রাব্বানীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
সোমবার সকালে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গত ৪ এপ্রিল তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। এএসআই পদবীর ওই পুলিশ কর্মকর্তা বর্তমানে কুষ্টিয়ার ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত ছিলেন। প্রত্যাহারের আগের দিন ওই পুলিশ কর্মকর্তা গায়ে পুলিশের পোশাক পরিধান করেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের গুণকীর্তন করেন এবং সাংবাদিকদের চরম বিষোদগার করেন। পুলিশ কর্মকর্তার ওই ফেসবুক লাইভটি ইতোমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে।
ফেসবুক লাইভে এসে এএসআই গোলাম রাব্বানী বলেন, কালকে মোবাইলে দেখলাম মামুনুল হক হুজুরের একটি ভিডিও। যে ভিডিওতে তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে একটা রিসোর্টে গেছেন। সেখানে আমার প্রশ্ন হলো যে অধিকাংশ সাংবাদিকরা সেখানে তাকে চিল্লাপাল্লা করে তার কাবিননামা দেখতে চাচ্ছে। আপনাকে এই অধিকার কে দিয়েছে? আপনি যে কাবিননামা দেখবেন আপনাকে এই অধিকার কি রাষ্ট্র দিছে? কোন সাংবাদিকদের যদি জানা থাকে এই ধরণের আইনসঙ্গত বিষয় আমি তো পুলিশে চাকরি করি। আমার এটা জানা নেই। কিন্তু ভন্ডামির একটা সীমা আছে। সে যদি তার স্ত্রী ব্যতীত অন্য কাউকে নিয়ে যেত তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যেত। তাকে মিডিয়ার মাধ্যমে সে (মামুনুল হক) একটা আলেম মানুষ। তাকে একটা ষড়যন্ত্রমূলক এ ধরণের হেনস্তা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণটা কি? ওনার মত একজন আলেম এই ধরণের কাজ করবে এটা আমি বিশ^াস করি না। ওনার স্ত্রীকে নিয়ে গেছে আর আপনি ভিডিও টিডিও করে দিয়া ওনারে ব্যাভিচারিনী বানাচ্ছেন, এগুলো ভন্ডামি বাদ দেন। বাংলাদেশের যে মিডিয়াগুলো আছে আপনারা অধিকাংশ বদমাশ। সাংবাদিকদের তিনি ভন্ড বলেও অভিহিত করেন। লাইভে তিনি আরো বলেন, এই বাংলাদেশে অনেক নাস্তিকরা বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম তুলে দেবে। এই তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন না কেন? ও কোন কুত্তার বাচ্চা এইডা কথা বলে। কোন জারজ সন্তান সে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম সংসদ থেকে তুলে দিবে। সংসদের আর সদস্যরা চুপ করে বসে থাকে, পুলিশ বাহিনী চুপ করে থাকে। আমাদের সিনিয়র অফিসাররা চুপ করে থাকে। তাদের ভিতরে কি আল্লার কালাম নাই? বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম তুলে দেবে? তাদের ভিতর আল্লার কালাম থাকলে সবাই সবার পক্ষ থেকে কথা বলত। আমাদের মুখ বন্ধ। কোন আলেম যদি এ ধরণের কাজ করে তাহলে ওই আলেমকে পাথর মেরে তাকে মেরে ফেলা হোক। মামুনুল হক কেন, চরমোনার পীরও যদি এটা করে, আজাহারীও যদি করে তারা যদি এ কাজ করে ইসলামের নেতৃত্ব দিতে আছে পাথর মেরে তাদেরকে কে মেরে ফেলা হবে। কারণ তাদের মুখ থেকেই তো আমরা এগুলো শুনব। আর যদি মামুনুল হক ভালো হয়ে থাকে। আমরা যারা সাধারণ জনগণ আছি, মিডিয়ারা তাকে কলংকিত করার চেষ্টা করছে। ছবি প্রচার করে মানুষকে কলংকিত করা যায় না। দেশবাসীকে তিনি আলেম-ওলামাদের সাথে থাকার অনুরোধ জানান। পাপ ছাড়া পৃথিবীতে কোন মানুষ নেই। দোষ-ক্রুটি হতেই পারে। সেনাপ্রধান, আমাদের পুলিশ প্রধান কেউ বলতে পারবেন না আমি পাপ ছাড়া আছি। আলেমদেরকে আমরা অনুসরণ করি। আমাদের সিনিয়র স্যাররা আলেমদের পক্ষে আমরা অবশ্যই থাকব। কারণ এই আলেমরা আমাদেরকে আল্লাহ ও আল্লার রাসুলের পক্ষে কিভাবে চলতে হবে সে বিষয়ে শিক্ষা দেয়।
মামুনুল হকের পক্ষ নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তার এই ফেসবুক লাইভের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. মুহিদ উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে এরই মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। পেশার বাইরে গিয়ে কেন অপেশাদার আচরণ করেছে- এটা জানতে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।