কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতার দখল থেকে সরকারি জমি উদ্ধার

0
85

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ায় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার দখলে থাকা প্রায় ৫০ কোটি টাকার সরকারি জমি উদ্ধার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত¡াবধানে ওই জমিতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।

বিপুল সংখ্যাক আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে গুড়িয়ে দেওয়া হয় এসব অবৈধ স্থাপনা। জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি হাউজিং আবাসিক প্রকল্পের ওই জমি জবর দখল করে সুরম্য গেট ও বাউন্ডারি নির্মাণ করেন।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন ১৯ দশমিক ৫ একর জমি লটারির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে বরাদ্দ দেয় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। ১৭৩ জন মানুষ এই জমি বরাদ্দ পান। তাদের অনেকেই জমির নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করে রেজিস্ট্রি দলিল করে নেন। পরে জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলাম সরকারি নিয়ম নীতি লংঘন করে দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের সহায়তায় সাধারণ মানুষের নামে বরাদ্দকৃত ওই জমিতে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। মাহবুব উল আলম হানিফের দক্ষিণ হস্ত বলে পরিচিত প্রভাবশালী এই আওয়ামী লীগ নেতা বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের জমি বুঝিয়ে না দিয়ে সরকারি অর্থ ব্যয় করে সেখানে মসজিদ অডিটোরিয়াম এবং আইটি পার্কসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ কাজ শুরু করেন।

সেইসঙ্গে রবিউল ইসলাম ওই জমির মধ্য থেকে প্রায় দুই বিঘা জমি নিজের দখলে নেন। যে জমির আনুমানিক মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ওই জমি এই আওয়ামী লীগ নেতা সুরম্য বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে ঘিরে দখল করে রেখেছিলেন।

এ ঘটনায় জমি বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিরা আদালতে একাধিক মামলা দায়ের করেন। এসব মামলায় আদালত প্রকৃত জমি মালিকদের জমি বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল ইসলাম ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের চাপের কারণে এতদিন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ সেখানে কোন ধরনের অভিযান পরিচালনা করতে পারেনি।

সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত থেকে রায় পেলেও হাজী রবিউল ইসলামের রাজনৈতিক পেশি শক্তির কাছে পরাজিত হন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালা বদলের পর মঙ্গলবার সেই জমি নিজেদের দখলে নিতে সক্ষম হয়েছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। এদিন তারা রবিউল ইসলামের ব্যক্তিগত দখলে থাকা জমি উদ্ধারের পাশাপাশি ওই জমিতে সরকারি অর্থে চলমান আইটি পার্কের নির্মাণ কাজ বন্ধ ও অবকাঠামো ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়।

এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আর এম সেলিম শাহনেওয়াজ।

এ সময় ভুক্তভোগী ও হয়রানির শিকার প্লট মালিকরা বলেন, সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দিয়ে এবং বারবার আইনের দ্বারস্থ হয়েও এতদিন প্লট বুঝে পাচ্ছিলেন না। তারা আওয়ামী লীগ আমলে রায় পেলেও প্রভাবশালী নেতারা জায়গা জোর করে দখল করে রেখেছিলেন উন্নয়ন করার নামে। উল্টো মামলা তুলে নিতে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিলেন। এখন তারা ন্যায় বিচার পাবেন বলে আশা করছেন।

আরও পড়ুন – কোটচাঁদপুরে কাঠ রিফাইন কারখানার বয়লার বিস্ফোরণে নিহত দু’জন

গৃহায়ণ কতৃপক্ষের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাহসুদুর রহমান বলেন,‘আমাদের প্রায় ২০ একর জায়গা নিয়ে সমস্যা আছে। আমরা সেগুলো আজ দখলমুক্ত করছি। নতুন করে ডিজাইন করে ১৭৩ প্লট মালিকের মধ্যে বিভাজন করা হবে। আর মসজিদ ও অডিটরিয়াম বাদে সেখানে আর কোন স্থাপনা রাখা হবে না।