কুষ্টিয়ায় ট্রিপল মার্ডার : এএসআই সৌমেন আদালতে স্বীকার উক্তি দিয়েছে

0
158

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক বন্ধ ও সংশোধন না করতে পেরে স্ত্রী আসমা তার প্রেমিক ও শিশুকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন এএসআই সৌমেন।

সোমবার আদালতে জবানবন্দিতে এসব কথা বলেছেন তিনি।

কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনের ডিবি কার্যালয় থেকে দুপুর ১টার কিছুপর একটি মাইক্রোবাসে করে এএসআই সৌমেনকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিয়ে আসা হয়। এসময় সৌমেনের মাথায় লাল হেলমেট ও হাতে হাতকড়া পরানো ছিল। পরবর্তীতে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এনামুল হক ১৬৪ ধারায় তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেন। জবানবন্দি রেকর্ডের পর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

সাড়ে ৪টার সময় সৌমেনকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সকাল থেকে আদালত চত্বরে অপোর গণমাধ্যমকর্মীদের জবানবন্দির বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুষ্টিয়া মডেল থানার (ওসি) তদন্ত নিশি কান্তা সাহা ।

গণমাধ্যমকর্মীরা কোর্ট ইন্সপেক্টর আল ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনিও বলেন, সংশ্লিষ্ট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন।

সংশ্লিষ্ট কোর্টের পেশকার এম এ আলিম সাংবাদিকদের জানান, জবানবন্দির বিষয়ে তারা কেউ কোনো কথা বলবেন না।

নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জবানবন্দির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন।

সূত্রমতে, আদালতকে সৌমেন জানান, ৪-৫ বছর আগে আসমার মা হাসিনা বেগমের সঙ্গে কুমারখালী থানায় থাকাকালীন একটি মামলা সংক্রান্ত ঘটনায় সৌমেনের পরিচয় হয়। পরবর্তীতে হাসিনা বেগমের মাধ্যমে তার মেয়ে আসমার সঙ্গে পরিচয় এবং প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে পরিবারের কাউকে কোনো কিছু না জানিয়ে গোপনে আসমাকে বিয়ে করেন।

সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু শাকিলই তাদের সংসারে অশান্তি ডেকে আনেন। স্ত্রী আসমার সঙ্গে শাকিলের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কের ঘটনায় তিনি তার স্ত্রীর ওপর চরম প্তি ছিলেন। বারবার নিষেধ করা সত্তে¡ও স্ত্রী আসমা খাতুন সংশোধন হননি। শাকিলের সঙ্গে পরকীয়া চালিয়ে যেতে থাকেন।

পরবর্তীতে কুষ্টিয়ার হালসা ক্যাম্প থেকে সৌমেনকে খুলনার ফুলতলা থানায় বদলি করা হলে শাকিলের সঙ্গে আসমার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক আরও গভীর হতে থাকে। এনিয়ে আসমার সঙ্গে তার একাধিকবার ঝগড়া-বিবাদও হয়।

এএসআই সৌমেন আদালতকে জানান, তিনি আসমার মোবাইলের কল রেকর্ডও সংগ্রহ করেন। তিনি স্ত্রী আসমাকে পরকীয়া প্রেমের জাল থেকে বের করতে না পেরে তার প্রেমিক শাকিল খানকে একাধিকবার হুমকি দেন। এমনকি শাকিলের বাড়িতে গিয়েও এ ব্যাপারে শাসিয়ে আসেন। কোনো কিছুতেই আসমাকে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক থেকে পথে আনতে না পেরে তিনি শেষ পর্যন্ত এই হত্যাকানোড সিদ্ধান্ত নেন।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী থানা থেকে ছুটি না নিয়েই রবিবার ভোরে খুলনা থেকে বাসযোগে কুষ্টিয়ায় আসেন এএসআই সৌমেন। এসময় তিনি তার পিস্তল, দুটি ম্যাগজিন ও গুলি সঙ্গে নিয়ে আসেন।

সৌমেনের ভাষ্য অনুযায়ী, রবিবার বেলা ১১টার দিকে স্ত্রী আসমাকে শহরের কাস্টমস মোড়ে পরকীয়া প্রেমিক শাকিল খানের সঙ্গে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। সেখানে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে নিজের গুলি ভর্তি সার্ভিস রিভলবার দিয়ে প্রথমে শাকিলকে গুলি করেন। এরপর আসমাকে গুলি করেন। এসময় শিশু রবিন দৌড়ে পালাতে গেলে তাকেও গুলি করেন। তিনজনকেই দুটি করে গুলি করেন সৌমেন। একটি ম্যাগজিনের গুলি শেষ হয়ে গেলে ব্যবহার করেন আরেকটি ম্যাগজিন।

সূত্র জানায়, সৌমেন আদালতে স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আলাদাভাবে রিমান্ডের আবেদন করেননি।

ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় রবিবার রাতে কুষ্টিয়া মডেল থানায় এএসআই সৌমেন রায়কে আসামি করে নিহত আসমা খাতুনের মা হাসিনা বেগম একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-৩৯।

এদিকে এই ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় খুলনা রেঞ্জ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। খুলনা রেঞ্জের দুজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ কুষ্টিয়ায় এক পুলিশ কর্মকর্তাকে তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। ঘটনার পর পরই সৌমেন রায়কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

কুষ্টিয়া পুলিশ সূত্র জানায়, সৌমেন রায় ২০১৫ সালে কনস্টেবল থেকে এএসআই পদে উন্নীত হন। পরে ২০১৬ সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানায় যোগ দেন। সেখান থেকে জেলার অন্যান্য থানায়ও কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ মিরপুর থানার হালসা ক্যাম্পে ছিলেন। এরপর বাগেরহাট হয়ে খুলনা ফুলতলা থানায় যোগ দেন।

উল্লেখ্য, রবিবার বেলা ১১ টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের কাস্টমস মোড় এলাকায় পুলিশের এএসআই সৌমেন রায় তাঁর সার্ভিস রিভলবার দিয়ে গুলি করে তাঁর স্ত্রী আসমা খাতুন (২৫), তার শিশু পুত্র রবিন (৬) ও আসমার প্রেমিকা বিকাশ কর্মী শাকিল খানকে (২৮) গুলি করে হত্যা করে। হত্যাকান্ডের পর জনতা ঘাতক এএসআই সৌমেন রায়কে রিভলভারসহ আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।