কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ায় করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে গত দুই মাসে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজন নারী ও ৯ জন পুরুষ।
মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ১জন, কুমারখালী ৩, ভেড়ামারা ৩, দৌলতপুর ২ ও মিরপুর উপজেলার ২জন রয়েছেন। দুই নারীর মধ্যে ১জন দৌতলপুর এবং অপরজন ভেড়ামারা উপজেলার বাসিন্দা। শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় নতুন ১ জনসহ করোনা ভাইরাসের সাথে লড়াই করছেন ২০২ জন রোগী।
জানা গেছে, কুষ্টিয়ায় সর্বপ্রথম করোনা উপসর্গ নিয়ে গত ৩০ মার্চ সকালে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে মারা যান কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস এলাকার এক ইজিবাইক চালক। আইইডিসিআর এর নিয়ম মেনে ওই দিন দুপুরে ভেড়ামারার ফারাকপুর গোরস্থানে তার মরদেহটি দাফন করা হয়। মৃত ওই ব্যক্তির গ্রামের বাড়ী ভেড়ামারা পৌরসভার নওদাপাড়া এলাকায়।
২ এপ্রিল শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে সালেহীন (৩৪) নামের এক নৌ-বাহিনীর সদস্যের মৃত্যু হয়। সালেহীন খুলনা নৌ-ইয়ার্ডে কর্মরত ছিলেন।
১০ এপ্রিল বিকেল ৩টায় নিজ বাড়ীতে জ্বর-শর্দি ও শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মৃত্তিকাপাড়ার আশরাফুল ইসলাম (৪৫)। এদিকে ১২ এপ্রিল করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি থাকা ময়না খাতুন (৪৩) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়। পরিবারের দাবী বিনা চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়। ময়না খাতুন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের মহদীপুর ঈদগাহ পাড়া এলাকার আব্দুর রহিমের স্ত্রী ছিলেন। মৃত্যুর পর নমুনা পরীক্ষায় তার নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়া যায়।
১৫ এপ্রিল বুধবার দুপুরে জ্বর-বোমি ও করোনা উপসর্গ নিয়ে দৌলতপুর উপজেলার শাওন (৩) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়। শাওন দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর গ্রামের জুয়েল প্রামানিকের ছেলে। টানা দশদিন আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকার পরে করোনা উপসর্গ নিয়ে ১৫ এপ্রিল বুধবার সন্ধ্যায় শিল্পী খাতুন (২৮) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়। জেনারেল হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীরা তাকে শহরের কোর্ট ষ্টেশন চত্বর থেকে নিয়ে এসে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত ১৯ এপ্রিল সকালে করোনা উপসর্গ নিয়ে ষাটোর্দ্ধ এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়।
সর্বশেষ ২৯ মে সকালে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার ধরমপুর গোরস্থানপাড়ায় মেয়ের বাড়ীতে বেড়াতে এসে করোনা উপসর্গ নিয়ে ৬৫ বছর বয়সী এক অবসর প্রাপ্ত নার্সের মৃত্যু হয়। তিনি ঢাকায় থাকতেন। ওই নার্সের মৃত্যুর পর তার ছেলের করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে।
কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডাঃ এ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম জানান, করোনা লক্ষণ নিয়ে মৃত্যুর বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক বিবেচনায় নেয়ার বিষয় না হওয়ায় কেবলমাত্র স্থানীয়ভাবে এসব সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার কারণে তারা মৃত ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে থাকেন। করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তিদের বিষয়ে তাদের কাছে তেমন কোন তথ্য নেই বলে তিনি জানান। এদিকে এ জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একশো এক বছর বয়সী বৃদ্ধ কুমারখালী উপজেলার শেরকান্দি এলাকার মোকাদ্দেস হোসেন নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় এটিই প্রথম। মঙ্গলবার করোনা উপসর্গ নিয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এক দিন পর বুধবার পরীক্ষার রিপোর্টে তার করোনা পজিটিভ আসে।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় ২০২ জনের করোনা সনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী কুষ্টিয়া সদরে ৮৫ জন। এছাড়া ভেড়ামারায় ৩৩ জন, দৌলতপুরে ২৯, কুমারখালীতে ২৬, মিরপুরে ১৮ ও খোকসা উপজেলাতে ১২ জন। সুস্থ হয়েছেন ৩৭ জন। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ১৫৬ জন।
সিভিল সার্জন জানান, গত ২২ এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলায় প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হয়। ঈদের পর থেকে প্রতিদিনই করোনা সনাক্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সিভিল সার্জনের মতে, কুষ্টিয়ায় এখন সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ জনের মধ্যে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে।