কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
বাজার মূল্যের তুলনায় সরকার নির্ধারিত মূল্য কম হওয়ায় দেশের বৃহৎ চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরের চালকল মালিকরা সরকারের ধান চাল সংগ্রহ অভিযানে তেমন একটা সাড়া দিচ্ছে না। আবার নানা জটিলতার ফলে জেলার প্রান্তিক কৃষকরাও সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারছে না।
কুষ্টিয়ায় সরকারের ধান চাল সংগ্রহ অভিযান ভেস্তে যাওয়ার আশংঙ্কা প্রবল হচ্ছে। আপদ কালীন সময়ের জন্য সরকার ধান চাল সংগ্রহ কর্মসূচির উদ্বোধন হয় প্রায় এক মাস আগে। কিন্তু এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রার ১০ ভাগ চালও সংগ্রহ হয়নি। একই অবস্থা ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রেও। এ অবদি ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৬ মেঃ টন। তবে জেলা প্রশাাসন ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করছেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তারা ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান সফলভাবে শেষ করবে।
আপদকালীন মজুদের জন্য সরকার প্রতি বছর আমন ও বোরো মৌসুমে স্থানীয় চাল কল মালিকদের কাছ নির্ধারিত মূল্যে চাল সংগ্রহ করে থাকে। তবে এবার মহামারী করোনার কারণে চলতি বোরো মৌসুমে সরকার এ সংগ্রহ অভিযানকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। এ লক্ষ্যে এবার ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বেশি ধরা হয়েছে। তবে সরকার নির্ধারিত মূল্য কম হওয়ায় কুষ্টিয়ার চালকল মালিকরা এবারের সংগ্রহ অভিযানে একেবারেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলা থেকে এবার ৩৪ হাজার মেট্রিক টন চাল খরিদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত ১৭ মে সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধন হয়। এক মাস পার হতে চললেও সর্বশেষ বুধবার পর্যন্ত মাত্র চার হাজার মেট্রিক টন চাল কেনা সম্ভব হয়েছে।
ধান সংগ্রহ অভিযানের অবস্থা আরো বেশি খারাপ। জেলায় এবার ৬ হাজার মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সর্বশেষ ৬ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।
জেলা চাল কল মালিক সমিতির নেতা জয়নাল আবেদিন প্রধান জানান, দেশের যেসব অঞ্চল থেকে তারা ধান সংগ্রহ করেন সেসব এলাকায় ধানের দাম বেশ চড়া। ওই দামে ধান কিনে সরকার নির্ধারিত মূল্যে চাল সরবরাহ করলে তাদের মোটা অংকের লোকসান গুনতে হবে।
বাংলাদেশ অটো মেজর রাইস এন্ড হাস্কিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, খোলা বাজারেই মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। সেখানে সরকার নির্ধারিত মূল্য ৩৬ টাকা। তিনি বলেন, বিষয়টি সরকারের ওপর মহলে জানানো হয়েছে। আশা করি সরকার চালকল মালিকদের স্বার্থের বিষয়টি ভাববে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে বাজার মূল্যের চাইতে সরকার নির্ধারিত মূল্য কম। যে কারণে কৃষক এবং মিলাররা ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তবে তিনি জানান, নিয়ম অনুযায়ী স্থানীয় চালকল মালিকদের সাথে চুক্তি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হয়েছে। এ বিষয়ে কিছুটা জটিলতা থাকলেও সেটা কাটিয়ে উঠে অভিযান সফল করা সম্ভব হবে।
খাদ্য ক্রয় কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, করোনা পরিস্থিতে অভ্যন্তরীণ খাদ্য সংগ্রহ ঠিক রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তবে সংশ্লিষ্টদের দাবি এখনই কার্যকর ও সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া না হলে চলতি ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যেতে পারে।