কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
কুষ্টিয়া সরকারি শিশু পরিবার (বালক) থেকে শিক্ষার্থী নিখোঁজ, শিক্ষার্থীদের অমানবিক নির্যাতন ও নানা অনিয়মের অভিযোগে দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্তের পর এবার একযোগে দু‘জনের বদলীর আদেশ হয়েছে। এদিকে উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে এক শিক্ষার্থী নিখোঁজ ও শিশুদের উপর নির্যাতন ও নানা অনিয়মের বিষয়ে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি সোমবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত দু‘জনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। কুষ্টিয়া সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: আব্দুল লতিফ সেখ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ৯ নভেম্বর সরকারি শিশু পরিবারের (বালক) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্ত ওই প্রতিষ্ঠানের উপ-তত্ত¡াবধায়ক আসাদুজ্জামান ও সহকারী তত্ত¡াবধায়ক ইলিয়াস হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এদিকে সোমবার (১২ নভেম্বর) একযোগে ওই প্রতিষ্ঠানের উপ-তত্ত¡াবধায়ক আসাদুজ্জামানকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে ও সহকারী তত্ত¡াবধায়ক ইলিয়াস হোসেনকে বাগেরহাটের রামপালে বদলী করা হয়েছে। কুষ্টিয়া সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: আব্দুল লতিফ সেখ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে একই দিন সরকারি শিশু পরিবারের (বালক) উপ-তত্ত¡াবধায়ক হিসেবে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসের সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা আফসার উদ্দিনকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। গত ৯ নভেম্বর থেকে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের উপ-তত্ত¡াবধায়ক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সরকারি শিশু পরিবার (বালক) থেকে এক শিক্ষার্থী নিখোঁজ, শিক্ষার্থীদের অমানবিক নির্যাতন ও নানা অনিয়মের বিষয়ে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত টিম সোমবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: আব্দুল লতিফের কাছে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এর আগে গত ৯ নভেম্বর রাতে এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে ছিলেন সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মুরাদ হোসেন, শুভংকর ভট্টাচার্য ও প্রবেশন অফিসার আতাউর রহমান। কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল।
সোমবার তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে মো: আব্দুল লতিফ জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত দু‘জনের বিরুদ্ধে শিশুদের উপর শারীরিক নির্যাতনসহ নানা অনিয়মের বিষয় উঠে এসেছে। শাস্তি হিসেবে দু‘জনের জন্য শুধু বদলীই যথেষ্ট কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো জানান, ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাদেরকে বদলী করেছে। তদন্ত প্রতিবেদনের সাথে এই বদলীর কোন সম্পর্ক নেই। এখন তদন্ত রিপোর্টের আলোকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের দু‘জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে।
প্রসঙ্গত গত ২ নভেম্বর কুষ্টিয়া সরকারি শিশু পরিবার (বালক) থেকে দুই শিক্ষার্থী রিজভী ও নাহিদ প্রধান ফটক দিয়ে বের হয়ে যান বলে দাবি করেন উপতত্ত¡াবধায়ক আসাদুজ্জামান।
নিখোঁজ শিশু রিজভীর পরিবার জানায়, গত ২ নভেম্বর নিখোঁজের ঘটনা ঘটলেও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ পরিবারের কাছে বিষয়টি সম্পূর্ণ গোপন করে রাখে। পরবর্তীতে গত ৪ নভেম্বর নিখোঁজ রিজভীর মামা লোকমান হোসেনের কাছে মোবাইল ফোনে খুলনা থেকে একটি কল আসে।
আরও পড়ুন – অবৈধ পথে ভারতে প্রবেশের চেষ্টাকালে ৩৬ বাংলাদেশী আটক
জানায়, ট্রেনের ভেতরে রিজভীর ব্যাগ পাওয়া গেছে। এরপর তারা বিষয়টি উপ-তত্ত¡াবধায়ক আসাদুজ্জামানকে জানালেও এ ব্যাপারে তারা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গড়িমসি করতে থাকে। পরবর্তীতে পরিবারের চাপে ঘটনার দুই দিন পর গত ৪ নভেম্বর কর্তৃপক্ষ থানায় জিডি করে। এদিকে রিজভীর নিখোঁজের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর গত ৯ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানের শিশু শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ গড়ে তোলে ও তাদের উপর দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক-মানষিক নির্যাতন, নি¤œ মানের খাবার পরিবেশনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে অভিযুক্ত দু‘জনের শাস্তির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। শিশু শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের মুখে ওই দিন রাতে অভিযুক্ত ওই প্রতিষ্ঠানের উপ-তত্ত¡াবধায়ক আসাদুজ্জামান ও সহকারী তত্ত¡াবধায়ক ইলিয়াস হোসেনকে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে আসে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওই দিনই দু‘জনকে সাময়িক বরাখাস্ত করে।