কুষ্টিয়া পৌরসভা বিরুদ্ধে আদালতে গ্রাহকরা

0
128

শতভাগ গ্রাহকের কাছ থেকে পানির বিল আদায়ের অভিযোগ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়া পৌরসভার বিরুদ্ধে ৪০ ভাগ মানুষকে পানি সরবরাহ করে শতভাগ গ্রাহকের কাছ থেকে পানি বিল আদায়ের প্রতিকার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ভুক্তভোগী পৌরবাসীরা।

জেলা সদরের ৪২ দশমিক ৭৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ পৌরসভায় ৮৬ হাজার পরিবারের বসবাস করে। জনসংখ্যার প্রায় আড়াই লক্ষ। আর এ বিশাল পৌর এলাকায় সাপ্লাহ পানি উৎপাদন সরবরাহের সক্ষমতা মাত্র ১০ হাজার ৪শ ঘনমিটার। অর্থাৎ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ মাত্র ১০ হাজার ৬৫৩ জন গ্রাহককে পানি সরবরাহ করতে পারবে। পৌর কর্তৃপক্ষের পানি সরবরাহের এই ব্যবস্থার বাইরে তিন হাজার ৫শ টি হস্তচালিত চাপ কল, এক হাজার ৩শ ৬৫টি সাবমার্র্সেবল মটর এবং জেড টাইপ মটর। এছাড়াও পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতিরেকেই অবৈধভাবে আরও অন্তত সহ¯্রাধিক সাবমার্সেবল এবং জেড পাম্প চলছে। যা দিয়ে চাহিদার তুলনায় মাত্র ৪০ ভাগ গ্রাহককে পানি সরবরাহ করা যায়। কিন্তু শতভাগ গ্রাহকের কাছ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে পানির বিল আদায় করছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় পৌর কর্তৃপক্ষের এই আচরণকে চরম নৈরাজ্য ও স্বেচ্ছাচারিতা আখ্যা দিয়ে এর প্রতিকার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন পৌর এলাকাধীন প্রায় অর্ধশত পৌর নাগরিক। কুষ্টিয়া সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক রাশেদুর রহমান অভিযোগটি আমলে নিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে কুষ্টিয়া পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা তলব করেছেন। বিজ্ঞ আদালত আগামী ২০ এপ্রিল পৌর কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

এ মামলার বাদী পক্ষের প্রতিনিধিত্ব করছেন নওশের আলী দিং এবং বিবাদী করা হয়েছে কুষ্টিয়া পৌসভার মেয়র, নির্বাহী প্রকৌশল, সচিব, সহকারী প্রকৌশলী (পানি) এবং মোকাবিলা বিবাদি করা হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসককে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, এজাহারকারীগণ কুষ্টিয়া পৌরসভা কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে ইস্যুকৃত বে-আইনী, ভুয়া, বেদারা, অকার্য্যকর, উদ্দেশ্য প্রণোদিত হীন স্বার্থ চরিতার্থে এখতিয়ার বর্হির্ভুত ও পৌর নাগরিকদের উপর বাধ্যকর নহে এমন প্রায় দেড় শতাধিক স্মারক নং সহ সীল মোহরযুক্ত নোটিশের কপি সংযোজন করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে কুষ্টিয়া পৌরভা নাগরিকদের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহে সক্ষমতা বহির্ভুত এলাকার মানুষ জীবন ধারনের জন্য নিজ নিজ উদ্যোগে টিউবয়েল, সাবমার্সেবল বোরিং করে বাসাবাড়িতে পরিবার পরিজনের নিত্য এই পানি সংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। অথচ কুষ্টিয়া পৌরসভার পানি বিভাগের লোক দাবি করে প্রতিদিন প্রতি নিয়ত বিভিন্ন জন এসে নানা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে পানির বোরিং বন্ধ করে অথবা অপসারণ করে নেয়ার হুমকি দিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করে আসছে। কখনোবা পৌরসভার সিল মোহরযুক্ত নোটিশ এনে হাতে ধরিয়ে দিয় পানি বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়ে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত এমন অন্যায় ও অবৈধ টাকা আদায়ের মাধ্যমে চরমভাবে তিক্ততার সৃষ্টিসহ বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে পৌর নাগরিক সমাজকে। তাই পৌর কর্তৃপক্ষের এই অন্যায় স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিকার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন মামলার বিবাদীগণ।

কুষ্টিয়া উপজেলা সড়কের বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, পানি না দিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ অন্যায় ভাবে জুলুম করে তাদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, পাবনা পৌরসভার কলেজ পাড়ার বাসিন্দা তাঁর বড়ভাই মেজবা উদ্দিন এবং ঝিনাইদাহ আরাপপুর মোড়ের বাসিন্দা তাঁর ননদের বাড়িতে এ ধরণের পানি সেবা খাতে সংশ্লিষ্ট পৌর কর্তৃপক্ষ কোন টাকা আদায় করেনা। যে কারণে তাঁরা বাধ্য হয়ে প্রতিকার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।

কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের পরিচালক ও জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম কাদরী শাকিল জানান, পানি সরবরাহের জন্য একজন গ্রাহককে পৌরসভাকে সাড়ে ৫ হাজার থেকে শুরু করে ক্ষেত্র বিশেষে ৮৭ হাজার টাকা করে পৌরসভাকে প্রদান করতে হচ্ছে। একজন গ্রাহকের পৌরসভার পানি সংযোগ না থাকলেও তার কাছ থেকে মাসিক পানি কর আদায় করা হচ্ছে। হিসেব মতে এখাত থেকে কোটি কোটি টাকা আদায় করলেও পানি সেবা খাতের উন্নয়নে ওই টাকা ব্যবহারের তেমন কোন দৃষ্টান্তও নেই কুষ্টিয়া পৌরসভার।

সংক্ষুব্ধ নাগরিকদের এলাকা কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মীর রেজাউল ইসলাম বাবু ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমাদের পৌরসভার পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা এখনও পর্যন্ত চাহিদার তুলনায় একেবারেই সামান্য। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে আমার এলাকার জনগণ পানি দুর্ভিক্ষের শিকার হয়ে থাকি। এনিয়ে অনেকবার পৌর পরিষদে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, পৌর বিধি মতে, কুষ্টিয়া পৌর এলাকার যেখানেই বসবাস করেন না কেন গ্রাহক অবশ্যই পানি সেবা কর দিতে বাধ্য।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী বলেন, কুষ্টিয়া পৌর এলাকায় নাগরিক সেবার গুরুত্বপূর্ন খাত হলো পানি সরবরাহ। দীর্ঘদিন ধরেই এখানে চাহিদার তুলনায় পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। ঘাটতি পূরণে ইতোমধ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন এলাকায় সাবমার্সেবল বোরিং স্থাপনসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে করে শুষ্ক মৌসুমে শতভাগ না হলেও পৌর এলাকার একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পারিবারকে পানির যোগান দেয়া সম্ভবপর হবে।

এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মৃনাল কান্তি দে বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে পৌরসভা একটি স্বয়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। স্থান-কাল বাস্তবতায় উন্নয়ন ও নাগরিক সেবার ক্ষেত্রে পৌর পরিষদের কিছু এখতিয়ার আছে। সেবা খাত বা অন্য কোন বিষয় নিয়ে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে অবশ্যই তারা প্রতিকার চেয়ে আইন-আদালতের আশ্রয় চাইতে পারেন।