কুষ্টিয়া-২ আসনে ইনু’র প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন আ.লীগ নেতা কামারুল

0
134

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে স্বেচ্ছায় উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা কামারুল আরেফিন। এ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু’র প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন তিনি। কামারুল আরেফিন পর পর দুই বার মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন।

মঙ্গলবার দুপুরে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজার কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপর বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় তার সঙ্গে মিরপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা ছাড়াও জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

কামরুল আরেফিন বলেন, ‘আমি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কুষ্টিয়ার-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে নির্বাচন করব এবং এ নির্বাচনে জয়লাভও করব, ইনশাল্লাহ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কুষ্টিয়া-২ আসনটি ফাঁকা রেখেছে। যদি আমাকে দল নৌকা দেয় তাহলে আমি দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করব। আর দল না দিলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করব। আর সেজন্যই উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করলাম। আমাদের দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি ঘোষণা দিয়েছেন নির্বাচন উৎসবমুখর ও প্রতিদ্ব›দ্বীতাপূর্ণ হতে হবে। তাই আমি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে জনতার কাতারে চলে এসেছি।’

এ সময় তিনি হাসানুল হক ইনু এমপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘এই আসনে জাসদ নেতা ইনু সাহেব আওয়ামী লীগের ৮০ ভাগ ভোটের ওপর ভর করে বিগত তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এ বছর উনার (ইনুর) ২০ ভাগ ভোট নিয়ে এবার নির্বাচন করতে হবে। তার সময় মিরপুর ভেড়ামারায় আওয়ামী লীগের চারজন নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাই তাকে আর এমপি হিসেবে দেখতে চাই না। দুই উপজেলার নেতাকর্মীরা মুখিয়ে আছে আমাকে ভোট দেওয়ার জন্য। দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের নেতা আমি, আমি জনগনের সঙ্গে থাকতে চাই।’

আওয়ামীলীগের অন্যতম শরীক ১৪ দলীয় জোট (মহাজোটের) প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতিক নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসন থেকে পর পর তিন বার এমপি নির্বাচিত হন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। এর মধ্যে ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্ব›দ্বীতায় এমপি নির্বাচিত হয়ে তথ্যমন্ত্রী হন তিনি। এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩শ আসনের মধ্যে দুটি আসনে আওয়ামী লীগ তাদের কোন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। এর মধ্যে কুষ্টিয়া-২ আসনে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি। আসনটি এখনও ফাঁকা রাখা হয়েছে।

১৪ দলীয় জোটের অন্যতম রুপকার জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে ছাড় দেওয়ার জন্য আসনটি ফাঁকা রাখা হয়েছে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। এদিকে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকায় এবার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ইনুকে কোন প্রকার ছাড় না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের অত্যন্ত ঘনিষ্ট ও মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

দলটির নেতা-কর্মীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে জাসদ’র সাথে আওয়ামী লীগের সাপে নেউলে অবস্থা বিরাজ করছে। একাধিকবার এখানে আওয়ামী লীগ এবং জাসদ নেতা-কর্মীদের সাথে রক্তয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় একাধিক নেতা-কর্মী আহতসহ উভয়পরে অন্তত হাফ ডজন নেতা-কর্মী রাজনৈতিক সংঘর্ষের বলি হয়েছেন। দু’ দলের মধ্যে বিরোধ এখানে এতটায় প্রকট যে কোন নির্বাচন আসলেই এখানে দুই দলের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারও মিরপুর-ভেড়ামারা উপজেলায় দুই দলের মধ্যে রক্তপাত-সংঘর্ষের আশংকা করছেন নেতা-কর্মীরা।

কুষ্টিয়া-২ হাসানুল হক ইনু’র আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতা কামারুল আরেফিনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণার বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেলা জাসদ’র সভাপতি গোলাম মহসীন বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা প্রত্যেকের গণতান্ত্রিক অধিকার। যে কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতেই পারেন। তবে আওয়ামী লীগ যদি ১৪ দলীয় জোটের প থেকে হাসানুল হক ইনুকে এ আসনে আবারও দলীয় মনোনয়ন (নৌকা) প্রতিক দেয় তাহলে নৌকার বিপে কে মনোনয়ন তুললো বা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করলে তাতে কোন কিছু যায় আসেনা। কেননা, আওয়ামী লীগ যারা করেন, যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করেন, শেখ হাসিনার রাজনীতি করেন তারা কখনো নৌকা প্রতিকের বাইরে ভোট দেবে না। অতীতেও দেখা গেছে অনেক জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা নৌকা প্রতিকের বাইরে গিয়ে আস্তাকুঁড়ে নিপ্তি হয়েছেন। এ আসনে হাসানুল হক ইনু’র বাইরে বা নৌকা প্রতিকের বাইওে যে বা যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক না কেন তাতে কোন প্রভাব পড়বে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।


এদিকে শুধু কুষ্টিয়া-২ হাসানুল হক ইনু’র আসনেই শুধু নয়; কুষ্টিয়ার বাঁকি তিনটি আসনেই আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক দুই এমপিসহ আওয়ামী লীগ নেতা কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলীর পুত্র।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসন থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন মেয়র আনোয়ার আলীর ছেলে ক্রীড়া সংগঠক পারভেজ আনোয়ার তনু। সোমবার দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে কর্মী-সমর্থক নিয়ে সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার শহিদুর রহমানের কাছ থেকে তিনি মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেন। তিনি কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন।

মনোনয়ন না পাওয়ায় কুষ্টিয়ার আরো দুইটি আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক দুই এমপি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা হচ্ছেন কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি রেজাউল হক চৌধুরী ও কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সাবেক এমপি আব্দুর রউফ।