কৃষক দল নেতার বিরুদ্ধে ভূমিহীনদের জমি দখলের অভিযোগ

0
79

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ায় কৃষক দলের এক নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও ভূমিহীনদের উচ্ছেদ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ঘন্টাব্যাপী কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন ভুক্তভোগীরা। এ সময় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হয়েছে।

বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১ টার দিকে কুষ্টিয়া শহরতলির ত্রিমোহনী মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সুমন সরকার নামের কৃষক দলের এক নেতার নেতৃত্বে জমি দখলের জন্য বারখাদা হঠাৎ পাড়ায় বসবাসরত ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করার পাঁয়তারা চলছে। সুমন সরকার কুষ্টিয়া জেলা কৃষক দলের আহবায়ক।

জানা গেছে, কুষ্টিয়া পৌরসভার বারখাদা মৌজায় ৭.৩৬ একর সম্পত্তি রয়েছে। প্রায় ২২ বিঘা জমির ২১ বিঘাতে ভূমিহীনরা ৫০ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। বাকি ১ বিঘা জমিতে একটি মসজিদসহ ফাঁকা জায়গা রয়েছে। বুধবার সকালে জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক সুমন সরকারের নেতৃত্বে ৩০-৪০টি মোটরসাইকেল যোগে এসে মসজিদসহ ফাঁকা জায়গা ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়। একই সাথে পৌরসভার সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলে পিলার পুঁতে সীমানা নির্ধারণ করে দেয় তারা। এ ঘটনার প্রতিবাদে ত্রিমোহনী মোড়ে ভূমিহীনরা জড়ো হয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ সময় নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ ও শিশুরাও অংশ নেই। তারা বিভিন্ন শ্লোগান সম্বলিত ব্যানার হাতে শ্লোগান দিতে থাকে। পরে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা অবরোধ তুলে নেই।

ভূমিহীন ফাতেমা খাতুন বলেন, বিন্দুমাত্র জায়গায় নেই আমার। মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসাবে কপালে জুটেছে সরকারি এই জায়গাটুকু। সেটিও দখল করতে এসেছে কৃষক দল নেতা সুমনের লোকজন। কেন আমাদের উচ্ছেদ করবে।

হঠাৎ পাড়ায় বসবাসরত শিমুল হোসেন বলেন, কুষ্টিয়া জেলা কৃষক দলের আহবায়ক সুমন সরকার, সুজন সরকার, ছানোয়ার ডাক্তার, তাজ ও মাহাবুলের নেতৃত্বে একাধিক বার চেষ্টা করেছে এই জায়গা জবরদখল করার। সকালে প্রায় ৩০টি মোটরসাইকেলে এসে জোর করে সিমেন্টের খুঁটি দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে যায়।

উজ্জল হোসেন বলেন, বারখাদা ত্রিমহোনী হঠাৎ পাড়াতে ৪০ বছর ধরে আমরা বসবাস সরকারি জায়গায় বসবাস করে আসছি। আমার মত আরও ২’শ ঘর এখানে রয়েছে। এ ঘরগুলো উচ্ছেদ করে দখলের চেষ্টা চলছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এমপি হানিফ ও তার ভাই আতা মিলে পৌর সভার এই জায়গা একাধিকবার দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে। তখনও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে এখানে বসবাসরত পরিবার। সরকার পরিবর্তনের পর আবার এখন যারা ক্ষমতায় আছে তারা দখলে নেওয়ার চেষ্টা চলাচছে। মূলত মসজিদসহ ফাঁকা জায়গাটুকু দখল নিতে পারলে এখানে বসবাসরত ভূমিহীনদের উচ্ছেদে দখলদারদের সুবিধে হবে। তারা আরো বলেন, পরিবারগুলো নিজেরাই বালি ফেলে মসজিদটি নির্মাণ করেছে।

আর ও পড়ুন – কবিতা উৎসব উপলক্ষে কবিদের মিলন মেলা

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কুষ্টিয়া জেলা কৃষক দলের আহবায়ক সুমন সরকার নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, আমি বা আমার দলের কোন লোক সেখানে ভূমিহীনদের জায়গা দখল করতে যায়নি। তার বিরুদ্ধে ভূমিহীনদের জায়গা দখলের অভিযোগটি সম্পন্ন ভিত্তিহীন।

আরও পড়ুন – খোকসায় বিএনপির কর্মী সমাবেশে ঐক্যের ডাক

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিহাবুর রহমান শিহাব বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এর মাধ্যমে সড়ক অবরোধের বিষয়টি জানতে পারি। পরে ঘটনাস্থলে এসে জানি এখানে ২২ বিঘা মতো পৌরসভার জমি রয়েছে। সেখানে ভূমিহীনরা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে। সেই জমি কে বা কারা দখলের চেষ্টা করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসে ভূমিহীনরা অবরোধ তুলে নেই।