স্টাফ রিপোর্টার
কুষ্টিয়ার খোকসায় স্বামীর পরকিয়ায় বাধা দেওয়ায় গৃহবধূকে গলাটিপে হত্যার পর ঘরের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজানোজ অভিযোগ পাওয়া গেছে। গৃহবধূর নিথর মৃতদেহ ঘরের বারান্দায় রেখে স্বামীসহ পরিবারের লোকেরা পালিয়ে যায়।
উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের গোসাইডাঙ্গী গ্রামের বুধবার দিনগত সন্ধ্যায় নিজের ঘরের বারান্দা থেকে এক সন্তানের জননী গৃহবধূ জহুরা খাতুন (২৫) এর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের স্বামী ইসারত বিশ্বাস এ গ্রামের আজগর বিশ্বাসের ছেলে। তিনি পেশায় একজন প্রসাধনী ব্যবসায়ী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিন বছর আগে জয়ন্তী হাজরা গ্রামের স্বামী পরিতক্তা ইসারতের সাথে মোটা অংকের যৌতুকে পাশের গ্রাম গোসাইডাঙ্গীর ইসরাত বিশ্বাসের বিয়ে হয়। তাদের ঘরে জন্ম নেওয়া প্রতিবন্ধি মেয়ে শিশুটি তিন মাস আগে মারা যায়। বড়ভাই এনামূল প্রবাসে থাকায় ভাবীর সাথে পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে পরেন ইসারত। এ নিয়ে স্বামীর সাথে জহুরা খাতুনের বিরোধ চরম পর্যায়ে পৌছায়। এ ঘটনা কেন্দ্র করে বুধবার সারাদিন গৃহবধূ জহুরার উপর শরীরিক নির্যাতন চালায় স্বামী ও তার মা। সন্ধ্যার পর স্বারীর নির্যাতনে জহুরা মারা যায়। পরে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে নাটক সাজানোর চেষ্টা করে স্বামী ও শ্বশুরী।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জয়ন্তী হাজরা গ্রামে নিহত গৃহবধূর বাবার বাড়িতে শোকার্ত আত্মীয় স্বজনরা মৃতদেহ ময়না তদন্ত থেকে আসার অপেক্ষায় ছিলেন। অন্যদিকে পাশের গ্রাম গোসাইডাঙ্গীতে ঘাতক স্বামীর বাড়িতে উৎসুক নারীরা ঘৃনা আর প্রতিবাদ জানাতে ভিড় জমিয়েছেন। এ দিন (বৃহস্পতিবার) সকালে আত্মগোপন থেকে নিজের বাড়িতে ফিলে আসা ঘাতক শ্বশুর-শ্বাশুরীর পরেছেন জনরোশের মুখে। এসব নারীরা গৃহবধূ হত্যার বিচারের দাবি করেন।
নিহতের ভাবী শামসুন্নাহার জানান, মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার কয়েক মিনিট আগেও ননদ জহুরার সাথে তার মুঠোফোনে কথা হয়। তখন সে সারা দিনের নির্যাতনের কথা জানিয়েছিল। সন্ধা ৭টার পর ফোন দেওয়া হলে অপর প্রান্ত থেকে সাইফুল নামের এক শিশু জানায় তার চাচী (জহুরা) আত্মহত্যা করেছে। এই সংবাদ শোনার পর তার গৃহবধূর শ্বশুর বাড়ি ছুটে গিয়েছিলেন। তার আগেই গৃহবধূর মৃতদেহ ঘরের বারান্দায় ফেলে রেখে স্বামী তার ভাবী নাজমাসহ শ্বশুর বাড়ি লোকেরা আত্মোগোপন করে।
তিনি দাবি করেন, জহুরার স্বামীর সাথে তার এক প্রবাসী ভাইয়ের স্ত্রী নাজমারর পরকিয়া রয়েছে। এ ঘটনায় বাঁধা দেওয়ায় তার(জহুরার) উপর স্বামী শ্বাশুরীর নির্যাতন চরমে পৌচ্ছায়। ঘটনার দিন সন্ধার পর থেকে গৃহবধূর উপর স্বামী ও শ্বাশুরী শারীরিক নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে গলা টিপে শ্বাস রোধ করে গৃহবূকে হত্যা করা হয়েছে।

নিহত গৃহবধূর ভাই আনারুল ইসলাম জানান, ঘাতক স্বামী ইসারতের সাথে তার সেজো ভাবি নাজমার পরকিয়া রয়েছে। এ নিয়ে তারা দুই পক্ষ কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করে। কিন্তু তার বোনের উপর নির্যাতনের মাত্রা চরম আকার ধারণ করে। বুধবার রাতে তাদের বাড়িতে আসতে চাওয়া তার বোনের উপর নির্যাত মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে তারা স্বামীই শ্বাসরোধ করে জহুরাকে হত্যা করেছে। তারা মালা করবেন বলে জানা।
তিনি জানান, বিয়ের সময় ইসরাতকে নগদে আড়াই লাখ টাকা, সোনার গহনা ও বাড়ির ব্যবহারের জিনিস পত্র দেওয়া হয়েছিল। তার পরেও তার বোনের কপালে সুখ হলো না।
নিহত গৃহবধূর শ্বাশুরী আছিয়া খাতুন পুত্রবধূ জহুরার উপর নির্যাতনের বিষয়ে অস্বীকার করেন। তিনি জানান, জহুরা তার নিজের ঘরে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তারা টের পেয়ে ঘরের আড়া থেকে তাকে উদ্ধার করে সুস্থ্য করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার আগেই সে মারা যায়।
শ্বশুর আজগর আলী জানান, যখন জহুরা মারা যায় তখন তার ছেলে ব্যবসায়ীক কাজে পাশের উপজেলায় গিয়েছিল। লাশ রেখে সবাই পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছেলে কেনো পালিয়েছে জানেন না। নিজে বৃদ্ধ বয়সে নাজেহাল হওয়া থেকে বাঁচার জন্য পালিয়েছিলেন।
থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আশিকুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় গৃহবধূর ভাই মনরুজ্জামান বাদি হয়ে হত্যা মামলা করেছে। নিহতের স্বামীসহ ৪ জনকে আসামী করা হয়েছে।