খোকসার একটি মডেল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ দুই মাস অনুপস্থিত

0
56

স্টাফ রিপোর্টার

কুষ্টিয়ার খোকসার গোপগ্রাম এ, জেড ফাজিল মডেল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ টানা দুই মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তার (অধ্যক্ষের) বিরুদ্ধে শিক্ষক-অভিভাবকদের অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখতে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে আত্মগোপনে থাকা অধ্যক্ষ মাদ্রাসা পরিচালনায় এডহক কমিটি অনুমোদন করাতে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন।

মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের সূত্রে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মোঃ সাইদুল ইসলাম গোপগ্রাম এ, জেড ফাজিল মডেল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদ বাগিয়ে নেন। অল্প সময়ের মধ্যে কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান অরুনকে সভাপতিও করে নেন। এবার অধ্যক্ষ প্রভাব খাটিয়ে নিজের জামাই আশরাফুল ইসলামকে শিক্ষক, মেয়ে শেফাকে অফিস সহকারী ও অপর শিক্ষক আব্দুর রহিমের স্ত্রী মাহাফুজাকে শিক্ষক পদে নিয়োগ দেন। এ ছাড়া শিক্ষক কর্মরত থাকা কালীন একাধিক পদে অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে অথ বানিজ্য করেন। শিক্ষক কর্মচারীদের টাইম স্কেল ও উচ্চতর স্কেল প্রদানের সুপারিশ করতে ১০ থেকে ৫৮ হাজার টাকা দিতে বাধ্য করার অভিযোগ অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মোঃ সাইদুল ইসলাম ও তার অনুগত সহকারী শিক্ষক আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দলনের কর্মী, মাদ্রাসার শিক্ষক-অভিভাবকরা আন্দোলন শুরু করে। এরপর থেকে কর্মস্থলে টানা দুই মাস অনুপস্থিত রয়েছেন অধ্যক্ষ ও তার অনুগত সহকারী শিক্ষক।

সূত্রটি আরও জানায়, অধ্যক্ষের কর্মস্থলে দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মাদ্রাসার সভাপতি গত ২২ সেপ্টেম্বর এক সভায় উপাধ্যক্ষ এইচ এম সোহরাব হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়েছেন। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। এর মধ্যে অধ্যক্ষ সাইদুল ইসলাম কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি করতে ইসলামি আরবি বিশ্ব^বিদালয়ের আবেদন করেছেন।

তদন্ত কমিটিতে থাকা নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সাইদুল ইসলামের দুনীতি অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত কাজ শুরু করেছে। সূত্র আরও জানায়, অধ্যক্ষ ইতোপূর্বেও তিনবার বরখাস্ত করা হয়েছিল। তিনি মাসের পর মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও বেতন তুলেছেন। এবারে এসব বিষয় ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।

অধ্যক্ষ সাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির ১৮ জন শিক্ষক কর্মচারীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বর্তমান সভাপতির কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, মাদ্রাসার ল্যাবের জন্য ২৭টি কম্পিউটার খরিদ করা হয়। কিন্তু ইতোমধ্যে ১০টি কম্পিউটার বিক্রি, মাদ্রাস নিজস্ব জমি বিক্রি ও চাষের জমি ইজারার প্রায় ৩০ লাখ টাকা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পদে পদে আদায় করা লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন।

৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মোঃ সাইদুল ইসলাম ও তার অনুগত সহকারী শিক্ষক আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দলনের কর্মী, মাদ্রাসার শিক্ষক-অভিভাবকরা আন্দোলন শুরু করে। এরপর থেকে কর্মস্থলে টানা দুই মাস অনুপস্থিত রয়েছেন অধ্যক্ষ ও তার অনুগত সহকারী শিক্ষক।

মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক আব্দুর রব দাবি করেন, এক যুগেরও বেশী সময় ধরে অধ্যক্ষ ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিয়োগ বানিজ্য, মাদ্রাসার চাষের জমি ইজারার টাকা, ছাত্র-শিক্ষকদের হরানা করে টাকা আদাসহ নানা অপকর্ম করে আসছে। এবারে ছাত্র-জনতা ফুসে ওঠার পর থেকে তিনি আত্মগোপন করেছেন।

তিনি আরও বলেন, আত্মগোপনে থাকা অধ্যক্ষ বিগত সময়েরমত তদন্ত কমিটিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে তিনি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এডহক কমিটি করার জন্য তদবির শুরু করেছেন। অন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের মত তিনিও অধ্যক্ষের বিচার দাবি করেন।

আরও পড়ুন – তারেক রহমান মামলা মোকাবিলা করে দেশে ফিরবেন – আইনজীবী

অধ্যক্ষ সাইদুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু হয়েছে। নিরাপত্তার ঝুকিতে তিনি মাদ্রাসা যাচ্ছেন না। তদন্ত কমিটির লোকদের সাথে ব্যক্তিগত ভাবে দেখা করেছেন। সময় সুযোগ বুঝে তিনি কমিটির কাছে জবাব দাখিল করবেন।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এইচ এম সোবাহান হোসেন জানান, অধ্যক্ষ অনুপস্থিত থাকায় তাকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে সে দোষি প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও তদন্ত কমিটির সদস্য নাজমূল হক বলেন, অনেকদিন ধরে সাইদুল ইসলাম অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। তাই সমস্যা গুলো জটিল হয়ে গেছে। আমরা তদন্ত শুরু করেছি। অল্প সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করবো।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও তদন্ত কমিটির প্রধান রেশমা খাতুনের সাথে কথা বলার জন্য তার সরকারী ফোনে একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাদ্রাসার সভাপতি ইরুফা সুলতানা বলেন, অধ্যক্ষ অনেক দিন প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলামান। প্রতিবেদন পাওয়া গেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা।