খোকসার কোমরভোগে দ্বিতীয় দফাই হামলা, অর্ধশত বাড়ি ভাংচুর

0
202

স্টাফ রিপোর্টার

কুষ্টিয়ার খোকসার গ্রামে আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে বিবাদমান দুই পক্ষের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীরা অর্ধশত বসত বাড়ি ভাংচুর করেছে। এ হামলায় নারী পুরুষ ও শিশুসহ ২০ জন আহত হয়েছেন।

পূর্ব শত্রæতার জের ধরে বৃহস্পতিবার প্রত্যুশে কোমরভোগ গ্রামে দ্বিতীয় দফায় হামলা ও লুট তরাজ চালায় দুই পক্ষ। বুধবার রাতে প্রথম দফায় হামলা পাল্টা হামলা বাড়ি ভাংচুর ও লুটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। আটক ১৯জন নারী পুরুষকে পুলিশ আদালতে প্রেরণ করেছে।


জানা গেছে, উপজেলার কোমরভোগ গ্রামের বিবাদমান ইউপি সদস্য জাবেদ আলী ও স্থানীয় সমাজপতি নয়ন এর লোকদের মধ্যে বাকবিতান্ডা হয়। এ ঘটনার সূত্র ধরে বুধবার রাতে দুই পক্ষ প্রথম দফায় হামলা পাল্টা হামলা চালায়। দুই পক্ষের লোকেরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা অংশ নেয়। রাতে গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করা হয়। এ ঘটনার জবাব দিতে ও নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে দুই গ্রæপের লোকেরা বৃহস্পতিবার প্রত্যুশে পুলিশের উপস্থিতিতে দ্বিতীয় দফায় হামলা চালায়। প্রায় ১ ঘন্টা স্থায়ী এ হামলা পাল্টা হামলার সময় দুই পক্ষই গ্রামের রাস্তার দুই পাশের প্রায় অর্ধশত বাড়ি ভাংচুর করে। হামলা কারীদের বিরুদ্ধে লুটের অভিযোগ করে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যরা।

দুই দফায় হামলায় শাজাহান আলী (৪৫), আমিরুল ইসলাম (৪০), রাশিদুল (৩৫), সাইদুল (৪০), মুন্নু ((৬০), তুহিন (২৩), আলমাস (২০)সহ দুই পক্ষের ২০ নারী পুরুষ ও শিশু আহত হয়েছেন। শাজাহানের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। এ ঘটনায় আহত দুই পুলিশ সদস্য জালাল ও নাহিদ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

হামলাকারীরা জাবেদ মেম্বরের অনুসারী আমিরুল, খাইরুল, শরিফ, লুইচ, হাফিজুল, পলাশ তুহিন, আলতোন, নিকাম উদ্দিন, শাহাদত অপর পক্ষ নয়ন এর অনুসানরী জিয়ারুলের মুদিদোকান, আবু বক্কর, শহীদ, বাদশা, আজিজ, হামিদ, রিপন, বিল্লাল, আরব, শিপন, মিলন, মস্তোর বাড়িসহ প্রায় অর্ধশত বাড়ি ভাংচুর করে।

বৃহস্পতিবার দুপুরের কোমরভোগ গ্রামে সরেজমিন গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দুই পক্ষের সমর্থক ও গ্রামবাসীদের সাথে কথা বলা হয়। গোটা গ্রামটি এখন পুরুষ শুন্য। গ্রামের পিসঢালা রাস্তা জুড়ে হামলায় ব্যবহার করা ইটের টুকরা পরে আছে। পুলিশের ভয়ে গ্রামের নারীরা বাগানে বাগানে আশ্রয় নিয়েছে। রাস্তার দুই পাশের প্রতিটি বাড়ি হামলার ক্ষত নিয়ে দাড়িয়ে আছে। হামলাকারীরা ধারালো প্রতিটি ঘরের টিনের বেড়া টুকরো টুকরো করে রেখে গেছে। হামলার আহত অনেক নারী ও শিশুদের গ্রাম্য ডাক্তার ডেকে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। এ হামলার রেশ আশে পাশের গ্রামে ছড়িয়ে পরতে পারে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে।

হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ্য গ্রামের মুদিদোকানের সামনে দাঁড়িয়ে হামলার ঘটনার বর্ননাদিচ্ছিলেন নাসরিন নামের এক নারী। তিনি বলেন, গ্রামে সামান্য ঘটনা ঘটলেই পক্ষা-পক্ষি শুরু হয়। রাত হোক আর দিন হোক দুই পক্ষ হামলা ভাচুর শুরু করে। বুধবার গ্রামের মানুষ যখন রাতের খাবার খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন শুরু হয় হামলা পাল্টা হামলা। দুই পক্ষই দেশী অস্ত্র নিয়ে হামলায় যোগ দেয়। বৃহস্পতিবার যখন সাধারণ মানুষের ঘুম ভাঙ্গেনি তখন আবার ঢাল সর্কি নিয়ে হামলা পাল্টা হামলা চালায়। এদের আচরণে গ্রামের সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিন কাটায় বলেও তিনি দাবি করেন।


ওসমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর জাবেদ আলী জানান, মঙ্গলবার রাতে দুই পক্ষের লোকদের মধ্যে কথা কাটা কাটি হয়। সে সময় প্রতিপক্ষের নেতার লোক লিটন মাষ্টার হামলা করার ঘোষনা দেয়। সে ঘটনা মাফিক বুধবার দুপুরে প্রতিপক্ষ তার লোকদের বাড়িতে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। রাতে ওই মাষ্টারের নেতৃত্বে হামলা করা হয়। এসময় প্রতিক্ষ তার লোকদের ২০টি বাড়িতে ভাংচুর চালিয়েছে বলে ওই মেম্বর দাবি করেন।

প্রতিপক্ষে নেতা নয়নের সাথে কথা বলার জন্য চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। তবে লিটন মাষ্টারের সাথে মুঠো ফোনে কথা বলা হয়। তিনি ঘটনা সম্পর্কে জানেন না বলে দাবি করেন।

থানা ভারপাপ্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান তালুকদার জানান, কোমরভোগে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। পুলিশ সদস্য আহত হয়নি বলে তিনি নিশ্চিত করেন। ১৯ জনকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করা হযেছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন আছে। পরিস্থিতি শান্ত আছে।