খোকসার পেঁয়াজ চাষীদের মুখে হাসি নেই

0
145

স্টাফ রিপোর্টার

কুষ্টিয়ার খোকসায় চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। তার পরেও বাজারে পেঁয়াজের দাম পরে যাওয়া, অপর দিকে দাদন ব্যবসায়ী মহাজনের চাপে আছেন কৃষকরা। ফলে কৃষকের মুখে হাসি নেই।

প্রতিদিনই কমছে দেশী পেঁয়াজের দাম। সোমবার স্থানীয় হাট-বাজার গুলোতে প্রতিমন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬শ টাকায়। তবে সর্বোচ্চ ভালো পেঁয়াজ ৬৫০ টাকা মন দরে বিক্রি হতে দেখো গেছে।

কৃষক বলছেন, উৎপাদন ব্যয়সহ বাজারজাতকরা পর্যন্ত প্রতিমন পেঁয়াজ খরচ পড়েছে ৭৪০ টাকা। দাদনে টাকা নেওয়া কৃষকরা পরেছেন আরো বিপাকে। অনেক কৃষককেই হালের বলদ বিক্রি করে অথবা সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে মহাজনের দাদনের পেঁয়াজে কিনে দিতে হবে।

উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে এ বছর মোট ২৭০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রায় ৩২৩৯ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। প্রতি বিঘায় ফলনের যে লক্ষা মাত্রা ভাবা হয়েছিল তার থেকে অনেক বেশী ফলন হয়েছে। এই বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, বিঘা প্রতি ৭০ থেকে ৮০ মন পেঁয়াজ হয়েছে। ফলন হয়েছে আশার থেকে বেশী।

মানিকাট মাঠে নতুন কৃষক ও পাংশা সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক ছাত্র আলী আহম্মেদ জানান, এ বছর তিনি ২৪ কাঠা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছিলেন। তার ব্যয় হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। ৬০ থেকে ৭০ মন পেঁয়াজ হবে বলে আশা করছেন। এখন মাঠ থেকে পেঁয়াজ ঘরে তোলার পালা। এখন আবার প্রতি মন পেঁয়াজে আরো ১৮০ থেকে ২শ টাকা খরচ হচ্ছে। তিনি বলেন, ফলন ভালো হয়ে লাভ নেই। উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে কিন্তু বিক্রির সময় বাজারের দাম কমতে কমতে তলানিতে ঠেকেছে। তিনি জানান, বাজার মুল্যের থেকে প্রতিমন পেঁয়াজ উৎপাদনে ২৫০ টাকা বেশী ব্যয় হয়েছে।

কৃষক আলী আহম্মেদ জানান, মাঠের অনেক কৃষক মহাজনের কাছ থেকে দাদনে টাকা নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করেছে। তাদের এখনই মহাজনের পেঁয়াজ পরিশোধ করতে হবে। প্রতিমন পেঁয়াজে মহাজন সুদ বাবদ ২শ টাকা কেটে নেবে। ফলে দাদন নেয়া কৃষকের পেঁয়াজ বিক্রি হবে ৪শ থেকে ৪৫০ টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঈশ্বরদী গ্রামের এক কৃষক জানান, এ বছর তিনি ১৫ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। ১শ মন পেঁয়াজের উপর ২শ টাকা হারে লাভে দাদন নিয়েছিলেন। বর্তমান বাজার মূল্যে মহাজনের পেঁয়াজ পরিশোধ করতে ৪শ টাকা মন দরে পেঁয়াজ দিতে হবে। এ বছর দাদনের টাকাসহ জমির মালিকদের ইজারার টাকা দিতে তাকে লোন করতে হবে বলে মনে করছেন। তাই লোকসান ঠেকাতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে তিনি মাঠে নেমেছেন। যা তার জন্য খুবই অপমানের।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সবুজ কুমার সাহা বলেন, এখন পেঁয়াজের ভরা মৌসুম। দাম একটু কম হবে এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় বারী জাতের পেঁয়াজ বেশী চাষ হয়েছে। এই পেঁয়াজ অনেক দিন সংরক্ষন করা যায়। কৃষক একটু অপেক্ষা করলে দাম ঠিক হয়ে যাবে। এ ছাড়া পেঁয়াজ আমদানী বন্ধে তারা উপরমহলে সুপারিশ করেছেন।