খোকসার প্রতিবন্ধি শামীম হাত দিয়ে পাথর ভাঙ্গে

0
324
বিকলঙ্গ হাতের আঘাতে পাথর ও ইট ভাঙ্গা শামীম

স্টাফ রিপোর্টার

শারীরিক প্রতিবন্ধি শামীমের বাম হাতের কব্জীর নিচের অংশ নেই। তবুও সেই হাত দিয়ে আঘাত করে প্রতিদিন ২শ থেকে আড়াই’শটি রেলের পাথর ভেঙ্গে প্রদর্শনী করে। এখান থেকে বাক প্রতিবন্ধি স্ত্রী বিথী ও তার জীবিকা জোঠে। আর এই অমানবিক কাজের কারণেই তার দুটি চোখ নষ্ট হবার উপক্রম হয়েছে বলে দাবি পরিবারের।

বিকলঙ্গ হাতের আঘাতে পাথর ও ইট ভাঙ্গা প্রদশনী করছে শামীম

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার গোপগ্রাম ইউনিয়নের স্থানীয় বাজারের চাউল ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ বিশ্বাসের তৃতীয় সন্তান শারীরিক প্রতিবন্ধি শামীম। জন্মগত ভাবে তার বাম হাতের কব্জির নিচের অংশ নেই। ছেলে বেলায় জিদ হলে বিকলঙ্গ বাম হাত দিয়ে আঘাত করে ঘরের মেঝেতে গর্ত করতো। বয়স বাড়ারা সাথে সাথে রোজগারের কারণে বিকলঙ্গ হাত দিয়ে শক্ত মাটিতে আঘাত করে গর্ত করা, কলা গাছ ছিদ্র করা, খড়ির ছোট টুকরা করা, ইট ভাঙ্গা তার প্রদর্শনীর বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। বছর পাঁচেক আগে পোড়াদাহ রেল স্টেশনে বসে তার মাথায় আসে রেলের পাথর টুকরা করার। তিনি নিজে নিজে ছয় মাস ট্রেনিং করে। ৫ থেকে ১০ সেকেন্ডের বিকলঙ্গ হাতের বাহুদিয়ে দুই থেকে তিনটি আঘাতে পাথর ভাংতে সফল হন। এর পর থেকে পাথর ভাঙ্গা তার প্রদর্শনীর নতুন আইটেম হিসেবে সংযোজন করেন। তিনি পশ্চিম রেলে বিভিন্ন ট্রেনের কামরায় প্রদর্শনী করে আসছেন। পাথর ভাঙ্গার এই অমানবিক কাজের ফলেই ইতোমধ্যে তার দুটি চোখের দৃষ্টি শক্তি কমে গেছে। সম্প্রতি তার একটি চোখে অপারেশন করা হয়েছে। চিকিৎসক তাকে পাথর ভাঙ্গার কাজ না করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান প্রতিবন্ধি শামীমের ছোট বোন শ্যামলী। ছয় সাত বছর আগে পাশের উপজেলা কুমাখালীর বাক প্রতিবন্ধি বিথীর সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ে দেওয়া হয়। বৃদ্ধ বাবা ভাই থেকে তার সংসার পৃথক।

রবিবার সকালে খোকসা রেল স্টেশনে শামীমের দেখা মিলে যায়। একটা আন্তঃ নগর ও সার্টেল ট্রেনের ক্রচিং এর সিগনাল দেয়া হয়েছে। সকালের প্রথম প্রদর্শনী শুরু করবেন তিনি। এখান থেকে দিনের আয় রোজগার শুরু হবে। অনেক চেষ্টা করে সময় দিলেন। জানালেন, দেড়শো টাকা হাজিরায় সারা রাত গোপগ্রাম বাজার পাহারার কাজ করেছেন। দ্বিতীয় চোখ অপারেশনের জন্য টাকা লাগবে তাই ঈদের আগে একটু বেশী ব্যস্ত। সে জানায় প্রতি দিন ২শ থেকে আড়াই শো পিস রেলে পাথর ভাংতে পারেন। শামীম আর এই পাথর ভাঙ্গার প্রদর্শনী করতে চায় না। কিন্তু এই কাজ তার নেশায় পরিনত হয়েছে। মানুষের সামনে মজমা (প্রদর্শনী) না করলে তার ভালোলাগে না। তবে এলাকায় একটি ভালো কাজ পেয়ে গেলে সে পাথর ভাঙ্গার মজমা করা ছেড়ে দেবে বলেও জানায়।

আরো পড়ুন – খোকসায় সোনালী ব্যাংকের গ্রাহক ও সিএমএসএমই সমাবেশ

রবিবার দুপুরে গোপগ্রামে শামীমের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা আব্দুল্লাহ বিশ্বাসের সাথে কথা বলা হয়। তিনি জানান, মায়ের গর্ভ থেকে শামীম শারীরিক প্রতিবন্ধি হয়ে জন্ম গ্রহন করে। ছেলে বেলা থেকে সে ঘর সংসার ছাড়া। স্কুলে পাঠালে সে বাজারের দোকানে দোকানে ফাই-ফরমাস খাটতো। জিদ হলে ঘরের মেঝেতে হাত দিয়ে আঘাত করে গর্ত করত। পরে আর তাকে ঘরে আটকাতে পারেনি। এক বছর আগে তার প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ড হয়েছে। হাত দিয়ে আঘাত করে পাথর ভাঙ্গার অমানবিক কাজ করায় তার দুটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। ওর এক চাচার টাকায় একটি অপারেশনা করা হয়েছে। কিন্তু আর একটি অপারেশন করা জরুরী।