খোকসার বৃষ্টির লাশের অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হচ্ছে

0
131

মেয়ের লাশের অপেক্ষা শয্যাশায়ী মা

স্টাফ রিপোর্টার

সাংবাদিক ও ইডেন কলেজের নিহত ছাত্রী বৃষ্টি খাতুনের গ্রামের বাড়িতে মেয়ের মৃতদেহের অপেক্ষা থাকা মা বিউটি খাতুন দুই দিন দুই রাত জল স্পর্শ করেন নি। তিনি ক্রমাগত অসুস্থ হয়ে পরেছেন। ভুল তথ্যে বৃষ্টির বাড়ির সামনে পুলিশের চৌকি বসানো হয়েছে।

রাজধানীর বেইলী রোডের অগ্নিকান্ডে নিহত সাংবাদিক ও ছাত্রী বৃষ্টি খাতুনের লাশ পাওয়ার অপেক্ষার প্রহর গভীর হচ্ছে। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরের বনগ্রাম পশ্চিম পাড়া জুড়ে যেন শোক বইছে। বংশের বড় মেয়ে বৃষ্টি খাতুনের লাশের অপেক্ষায় মা বিউটি খাতুন শয্যাশায়ী হয়ে পরেছেন। দুই দিন দুই রাত জলও স্পর্শ করেনি তিনি। তাকে ঘিরে প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনরা জটলা করে আছেন। বাড়িতে শোকাহত মানুষের ঢল পরেছে।

নিহত মেয়ে বৃষ্টির স্পর্শ পেতে মা বিউটি তার বিছানা-বালিশ ছুয়ে লাশের অপেক্ষায় পরে আছেন। মায়ের আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। বাবা ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় পিতৃত্বের দাবি নিয়ে মেয়ে বৃষ্টির লাশের অপেক্ষা ঘুরছেন।

নিহত সাংবাদিক ও ছাত্রী বৃষ্টি প্রাথমিক পড়েছে গ্রামের ব্রাক স্কুলে। মাধ্যমিক পড়েছে বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। উচ্চ মাধ্যমিক করেছে সকারী মহিলা কলেজ কুষ্টিয়ায়। দর্শনে স্নাতক সন্মান করছিলেন ইডেন কলেজে। সব লেখা পড়ার খবরই জানে গ্রামের সবাই।

শনিবার সকালে নিহতের দাফনের বাধা দেওয়ার গুজব ছড়িয় একটি চক্র। কিন্তু এ ঘটনার সত্যতা মেলেনি। দুপুরে সরেজমিন গিয়ে স্থানীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, পুলিশ ও শোকাহুতদের সাথে কথা বলা হয়। বৃষ্টির বাড়িতে তিল ধরানোর জায়গা নেই। সমবেদনা জানাতে দলে দলে নারী পুরুষের ঢল নেমেছে।

সকাল ১০ টায় নিহত বৃষ্টির বাবা শাবলুল আলম সবুজ শেখের সাথে মুঠো ফোনে কথা বলা হয়। তিনি জানিয়ে ছিলেন বেলা ১২টার দিকে কলেজ ও পুলিশ এক হয়ে লাশ হস্তান্তর করা হবে। কিন্তু রাতে এ রিপোট লেখা পর্যন্ত লাশ হস্তার পক্রিয়া দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হয়েছে।

শারমিন তার বাল্যবান্ধবি বৃষ্টির মৃত্যুর সংবাদ শুনে স্বামী বাড়ি থেকে ছুটে এসেছেন। গত মাসেও তার সাথে ফোনে কথা হয়েছিল। দুই জন প্রাথমিক পড়েছিল ব্র্যাকের স্কুলে। ৬ ষ্ঠ থেকে এসএসসি পড়েছিলেন বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। অনেক স্মৃতি তার মনের মধ্যে। তারা দুইনে রোজা থেকেছেন। নামজা পড়েছেন। আর লেখা পড়া করেছেন। কিন্তু বৃষ্টি অন্য ধর্ম গ্রহন করতে পারে তা তিনি বিশ্বাসই করেন না।

কথা হয় গ্রামের উদম শরীরের ১০/১২ বছর বয়সের আপন নামের এক কিশোরে সাথে। সেও বৃষ্টিকে চেনে। সে তাকে কয়েকয় সপ্তাহ আগে ভ্যানে আসতে দেখেছিল।

নাজরুল ইসলাম বয়স সত্তর উদ্ধ। ভালো কানে শোনেন না। তিনি বৃষ্টিকে চিনতেন। তার বাবা দাদাকেও চিনতেন। মেয়েটা খুবই ভালোছিল।

বৃষ্টির ব্র্যাক স্কুলের একমাত্র শিক্ষিকা মিনা পারভিন। বৃষ্টির মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর থেকে তার হাতে কাজ উঠছে না। বৃষ্টি খুবই মেধাবি ছাত্রী ছিল। ছোট বেলা থেকে মেয়েটি নামাজি ছিল বলে দাবি করেন তিনি । অনেকটা শান্ত স্বভাবের ছিল। বৃষ্টি ধর্ম ত্যাগ করেছে এ খবর গুজব বলে জানান তিনি।

বিকালে বৃষ্টির মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বেতবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের সাথে কথা বলা হলে তিনি বলে, বৃষ্টির মৃতদেহ পেতে আদালতের অনুমতি নিতে হতে পারে। এ কারণে লাশ গ্রহনের জন্য বাবা সবুজ শেখ অপেক্ষায় রয়েছেন।

তিনি আরো জানান, নিহত বৃষ্টির দাফন নিয়ে যা রটেছে তা শুধুই গুজব।

থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আননুর যায়েদের সাথে নিহতের বাড়ির বাইরে কথা হয়। তিনি বলেন, এলাকার মানুষের মধ্যে শোক বইছে। এলাকার সার্বিক আইন শৃক্সক্ষলা স্বাবাভাবিক রাখকে পুলিশ রয়েছে। নিহতের পরিবারকে সব ধরনের সহযোগীতা দেওয়া হচ্ছে।