কূপি’র আলো বাস করেন বৃদ্ধা মিনতি
স্টাফ রিপোর্টার
কুষ্টিয়ার খোকসায় পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যানের দাবিকৃত ঘুষের টাকা পরিশোধের দেড় বছর পার হলেও বৃদ্ধার বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ লাগে নি। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ করায় বৃদ্ধাকে হুমকী-ধামকি দিচ্ছেন বিদ্যুতের ওই লাইনম্যান নিজে।
উপজেলার জানিপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া জমিতে নতুন বাড়ি তৈরীর কাজে হাত দেন পুত্র সন্তানহীন বৃদ্ধ মিনতি রানী মজুমদার (৬৫)। বাড়ি নির্মান ও বসবাসের জন্য বিদ্যুত জরুরী হওয়ায় খোকসা পল্লী বিদ্যুত সমিতির স্থনীয় লাইনম্যান উজ্জল নামের একজনের সাথে যোগাযোগ করেন। প্রায় দেড় বছর আগে ওই লাইনম্যানের দাবির প্রেক্ষিতে ১১ হাজার টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হন তিনি। টানা ৫/৬ মাস ঘোরানোর পর বৃদ্ধার বাড়ির জমির সীমানায় পল্লী বিদ্যুতের একটি ভাঙ্গা খুটি গেড়ে রেখে আসে। তার পর লা-পাত্তা হয়ে যায় লাইনম্যান। পুত্র সন্তানহীন বৃদ্ধা প্রায় ৪ মাইল পথ পয়ে হেটে কমপক্ষে ১০ বার উজ্জলের বাড়িতে গেছেন। সম্পতি উপজেলা সদরের পল্লী বিদ্যুত সমিতির সাব-জোনাল অফিসে ঘুড়তে থাকেন। মাস খানেক আগে পল্লী বিদ্যুত অফিস আর একজন লাইনম্যানকে সরিজমিন পাঠান। সে পরিদর্শনে গেলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসে। বৃদ্ধাকে এই লাইম্যান জানান, যে খুটি তার বাড়ির আঙ্গিনায় পোতা হয়েছে সেটি পল্লী বিদ্যুতেরই না। অতএব বৃদ্ধার বাড়িতে আর সংযোগ পাওয়া সম্ভব না।
অবশেষে লাইনম্যান উজ্জলের বিরুদ্ধ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর বৃদ্ধা আবেদন করেন। গত ২০ মার্চ লাইনম্যান উজ্জলকে তার (ইউএনও) দপ্তরে হাজির হতে নোটিশ নির্দেশ দেন। কিন্তু লাইনম্যান উজ্জল আর হাজির হননি। এখানেই হতদরিদ্র বৃদ্ধার দেওয়া ঘুষের টাকা ফেরতের আশা ফিকে হতে শুরু করে।
রবিবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঈশ্বরদী – ভবানীগঞ্জ পাকা সড়কের খাগড়বাড়িয়া মাঠের পূর্বের পাশে একতলা পাকা বাড়ির নির্মান কাজ চলছে। নতুন দেয়ালের সাথে একটি মিটার বোর্ড ও প্রয়োজন মাফিক ওয়ারিং করেছেন। ঘর থেকে প্রায় ৫০ গজ দূরে একটি ইলেকট্রিক খুটি পুতা হয়েছে। বৃদ্ধা খাবার পানির জন্য সাব-মার্সেবল নলকুও পুতেছেন। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ লাগেনি। এখন মাঠের মধ্যের নতুন বাড়িতে কুপি জ্বেলে (কেরসিনের তেলের বাতি) রাত কাটান। খাবার পানি আনেন আঁধা কিলোমিটার দূরের এক প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে।
বৃদ্ধা মিনতি রানী মজুমদার বলেন, তার বাড়ির থেকে রাস্তা বেশ খানিক দূরে হওয়ায় নতুন খুটি দেওয়ার কথা বলে ১১ হাজার টাকা দাবি করেন লাইনম্যান উজ্জল। জমি ইজারার টাকায় খাবার না কিনে বিদ্যুতের লাইনের জন্য ঘুষ দিয়ে ছিলেন। একমাত্র বিবাহীত মেয়ে মিতালী রানিকে সাথে নিয়ে অনেক বার উজ্জলের বাড়িতেও গেছেন। তিনি ঘরে লুকিয়ে থেকে তাদের সাথে দেখা করেন নি। পল্লী বিদ্যুতের লোক এসে জানায় তার বাড়িতে চুরি করা খুটি পুতে রেখে গেছে। এর পর তিনি ইউএনও’র কাছে আবেদন করেন। কিন্তু তাতেও তার টাকা আর উদ্ধার হয়নি। উল্টো করে তাকে আবার হুমকী ধামকী দিচ্ছে লাইনম্যান উজ্জল ও তার ছেলে।
খোকসা পল্লী বিদ্যুত সমিতির লাইনম্যান উজ্জলের সাথে কথা বলার জন্য তার মুঠো ফোনে একাধিক বার কলা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
খোকসা পল্লী বিদ্যুতের সাব-জোলার অফিসের এজিএম (কম) মোঃ রওনক হোসেন বলেন, উজ্জল নামের তার কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী নেই। এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবেন।
আরও পড়ুন – খোকসায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত
উপজেলা নির্বাহী প্রদীপ্ত রায় দ্বিপন বলেন, বৃদ্ধার আবেদনের প্রেক্ষিতে উজ্জলকে নোটিশ করা হয়েছিল। তিনি হাজির হননি। তা সাথে মুঠো ফোনে কথা বলার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে আইন গত জটিলতা না থাকলে এজিএমকে বলে বৃদ্ধার সংযোগটা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।