স্টাফ রিপোর্টার
কুষ্টিয়ার খোকসায় বকেয়া জরিমানার দায়ে অর্ধশতাধীক পরীক্ষার্থীর খাতা কেড়ে নিয়ে হল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।
উপজেলার পাইকপাড়া-মির্জাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির প্রায় ৫৯ পরীক্ষার্থীর জরিমানা বকেয়া থাকায় তাদের পরীক্ষার হল থেকে তাড়িয়ে (বেড় করে) দেওয়া হয়েছে। সাথে খাতাও কেড়ে নিয়েছেন শিক্ষকরা। ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার সকাল ১০টা ১৫ মিনিটের সময়। এ দিন বিদ্যালয়টির দশম শ্রেণির মানবিক, বানিজ্য ও বিজ্ঞান শাখার ৭৬ জন শিক্ষার্থী অর্ধবাষিকী পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে খাতা (উত্তরপত্র) সরবরাহ করা হয়। এক পর্যায়ে শ্রেণি শিক্ষক আবুল কালাম কক্ষে প্রবেশ করে তালিকা অনুয়ায়ী শিক্ষার্থীদের রোল নম্বর ধরে ডেকে দাঁড় করান। তাৎক্ষনিক ভাবে শিক্ষার্থীদের বকেয়া জরিমানা পরিশোধ করে হলে আসতে বলেন। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে তাদের কাছ থেকে খাতা (উত্তরপত্র) কেড়ে নেওয়া হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা হল থেকে বেড়িয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের দপ্তরে যায়। সেখানে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। বিকাল ৩ টার পর প্রশাসনের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে যায়।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষাক ব্যক্তিগত মুনাফার আশায় বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির জন্য প্রতিদিন জনপ্রতি ১০ টাকা হারে জরিমানা ধার্য করেন। অর্ধবাষিকী পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জরিমানা আদায়ের সুযোগ নেন প্রধান শিক্ষক। দশম শ্রেণির মানবিক শাখার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সেশন ফি বাবাদ ৬শ ও পরীক্ষা ফিস বাবদ ২৫০টাকার সাথে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির জরিমানা আদায় করেন। শিকার্থীদের জরিমানার কিছু টাকা মওকুপ করেন বিদ্যালয়ের সভাপতি। কিন্তু প্রধান শিক্ষক এই টাকা আদায়ে মারয়া হয়ে ওঠেন। শেষ পর্যন্ত বকেয়া জরিমানার জন্য শিক্ষার্থীদের খাতা কেড়ে নিয়ে হল থেকে বেড় করেও দেন।
আরো পড়ুন – ইসির পদত্যাগ দাবি অযৌক্তিক : মাহবুবউল আলম হানিফ
দশম শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্র সজিব মিয়া জানান, তাকে ৩৪ দিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত দেখানো হয়ছে। পরীক্ষার ফিস নেওয়ার সময় ২১ দিনের জরিমানা ২১০ টাকা নিয়ে বাঁকি টাকা মওকুপ করা হয়। কিন্তু তার কাছে আবার নতুন করে ১৩০ টাকা দাবি করছে স্কুল। আর এ কারণেই তাকেও পরীক্ষার হল থেকে তারিয়ে দেওয়া হয়।
মাত্র ১০ টাকা বাঁকীর অভিযোগে পরীক্ষার হল থেকে বেড় করে দেওয়া হয়েছে মানবিক শাখার ছাত্র বায়োজিদকে। একই শাখার ছাত্র হাসান জানান, তার এক টাকাও বকেয়া নেই কিন্তু তাকেও পরীক্ষা হল থেকে বেড় করে দেওয়া হয়েছে।
শ্রেনি শিক্ষক আবুল কালাম জানান, প্রধান শিক্ষক তার কাছে দশম শ্রেণির ছাত্রদের জরিমান আদয়ের জন্য একটি তালিকা দিয়েছে। সাথে বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ হলে তার পরীক্ষার হলে খাতা সরবরাহ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই তিনি ছাত্রদের বকেয়া পরিশোধ করে হলে আসতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি পরীক্ষা হলের ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে খাতা কেড়ে নেয়ার কথা স্বীকার করেন।
প্রধান শিক্ষক আরিফুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার তিনি ছুটিতে ছিলেন। তাই এ ব্যারে কিছু জানেন না। তবে সকারের নির্দেশের আলোকে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত জন্য প্রতিদিন ১০ টাকা জরিমানা আদায়ের কথা স্বীকার করেন।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাজমূল হক বলেন, ছাত্রদের যে কোন বিষয়ই মানবিকতার সাথে দেখতে হয়। ছাত্রদের লিখিত অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি তদন্ত করে রিপোর্ট দেবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন বিশ্বাস জানান, শিক্ষার্থীদের অভিযোগটি হাতে-হাতে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্তের জন্য দেওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিতে নিদের্শ দেওয়া হয়েছে। জরিমানা আদায় ও পরীক্ষা হল থেকে শিক্ষার্থীদের বেড় করে দেওয়ার বিষয়ে কোন আইনে ব্যত্যয় হলে ব্যবস্থা নেওয় হবে। এ ছাড়া মাধ্যমিক শিক্ষা প্রশাসনেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে বলে জানান।