স্টাফ রিপোর্টার
জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা দুই ভাইয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে হামলা চালিয়ে স’মিলের বৈদ্যতিক মোটর, মোটর সাইকেল, ছাগল ও গুড়ি কাঠসহ ২০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে।
সোমবার সকালে সাতটা থেকে দশট পর্যন্ত খোকসার শিমুলিয়া ইউনিয়নের পাইকপাড়া ফুলতলা গ্রামের ব্যবসায়ী মুক্তার মোল্লা ও আক্তারুজ্জামান মোল্লা সহদরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে তান্ডব চালায় অস্ত্রধারীরা। মুখে মাস্ক পড়া দেড় শতাধিক অস্ত্রধারী এ হামলায় অংশ নেয়।
ভুক্তভোগীর পরিবার দাবি, শরিকানা জমি নিয়ে পরিবারের লোকেরদের সাথে বিরোধ চলে আসছিল। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকে স্থানীয় বিএনপির প্রভাবশালী নেতা তাদের প্রতিপক্ষের পক্ষ অবলম্বন করে এক মাসে দুই দফা আক্রমন চালালো। সোমবার সকালে আগ্নেয় অস্ত্রসহ দেশিয় অস্ত্র নিয়ে দ্বিতীয় দফায় এ হামলা চালানো হয়। অস্ত্রধারীরা প্রথমে তাদের দুই সহদরের পরিবারের সদস্যদের নিজনিজ বাড়িতে আটকে রাখে। এ তান্ডব চালানো হয় প্রায় তিন ঘন্টা ধরে। হামলাকারীরা একটি স’মিলের দুটি বৈদ্যতিক মোটর, বাড়ি করার জন্য আনা ৬ বান্ডিল রড, ব্যবসায়ীক মালামাল, গৃহপালিত ৩টি ছাগল, ব্যবহারের একটি মোটর সাইকেল লুট করে নিয়ে গেছে।
হামলার ঘটনার কিছু সময় পর সরেজমিন গিয়ে স্থানীয়দের কথা বলে জানা গেছে, হামালাকারীরা ২০/২৫টি রিকসা ভ্যান ও স্যালো ইঞ্জিন চালিত নসিমন গাড়িতে আসে। তারা সবাই উঠতি বয়সের। তাদের প্রত্যেকের হাতে ধারালো দেশিয় অস্ত্র ছিল। কয়েকজনের হাতে বন্দুক ও পিস্তল দেখা গেছে। তারা পথচারি ও গ্রামবাসীদের জিম্মি করে ফেলে। প্রায় তিন ঘন্টা ধরে তারা তান্ডব চালায়।
ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী সহদরের এক নিকট প্রতিবেশী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সকালে তিনি দোকানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় স্বসস্ত্র হামলাকারীরা তার বাড়ির প্রধান দরজার বাইরে থেকে ছিটকেনি আটকে দেয়। হামলাকারীদের ১০ জনের হাতে আগ্নেয় অস্ত্র ছিল। তারা সবাই দুর্ধষ্য সন্ত্রাসী।
ব্যবসায়ী মুক্তার মোল্লা ও আক্তারুজ্জামান মোল্লা জানান, তাদের শরিক আব্দুল্লাহ আল মজিদে সবুজের সাথে শরিকানা জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। ৫ আগস্টের পর স্থানীয় বিএনপির নেতার লোকজন একমাসে দুই দফা হামলা করলো। প্রথম দফায় মুক্তারের মাথা ফাটিয়েও খান্ত হয়নি চক্রটি। সোমবার সকালে লুটের প্রস্তুতি নিয়ে গাড়ি ও লোকজন নিয়ে হামলা করে সন্ত্রাসীরা। এ দিনের হামলার শুরুতেই তারা সিসি ক্যামেরা ভেঙ্গে দেয়। এর পরে তাদের দুই ভাইেয়ের পরিবাবারের সদস্যদের বাড়িতে আটকে রাখে। এরপর তিন ঘন্টা ধরে তান্ডব চালায়। মোটর সাইকেল, স’মিলের দুটি মটোর, চেড়াই ও গুড়ি কাঠ, নদগ টাকাসহ প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
ভুক্তভোগীরা আরও জানায়, প্রথম দফায় হামলার পর তারা দুইবার থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। সোমবারের হামলার সময় তারা থানা পুলিশকে ফোন দিয়েছে। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে সারা পাওয়া যায়নি।
বিবাদপূর্ন জমির মালিকানা দাবিদার আব্দুল্লাহ আল মজিদ সবুজের সাথে কথা বলার জন্য তার মুঠো ফোনে কল করা হয় কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। দেওয়া হয় ম্যাসেজ। তার পরেও সারা পাওয়া যায়নি।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ আমজাদ আলী হামলার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তবে বলেন, এখানে বিএনপির একাধিক গ্রæপ রয়েছে। সহসভপতি আলাউদ্দিন খানের গ্রামের এলাকা। ওখানেই একটি স’মিল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করা হয়েছে।
উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আলাউদ্দিন খানের সাথে কথা বলা হয়। তিনি জানান, জমিটা নিয়ে মামলা আছে। আওয়ামী লীগের সময় আক্তার-মুক্তার সহদর জমিটি অবৈধ ভাবে দখল নেয়। তিনি নিজেও বিবাদ মেটানোর চেষ্টা করে ব্যথ হন। পরে এ বিষয় থেকে তিনি নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আননুর যায়েদ বলেন, ঘটনাটির মূল সূত্রপাত জায়গা-জমি নিয়ে। এ ঘটনায় কোটে মামলা চলছে। আজকের ঘটনা জানার পর তিনি নিজে গিয়েছিলেন। তবে রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন অভিযোগ পান নি।