খোকসায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটি নিয়ে বিএনপিতে দ্বন্দ্ব

0
120

স্টাফ রিপোর্টার

কুষ্টিয়ার খোকসায় এমপিও ভুক্ত মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার এডহক কমিটি নিয়ে বিএনপির বিভক্ত নেতারা মুখোমুখি হয়ে পরেছেন। অন্যদিকে নেতাদের চাপে সুপারিশ করা নিয়ে বেকায়দায় পরছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। ইতোমধ্যে শোমসপুর আবু তালেব ডিগ্রী কলেজের এডহক কমিটির বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত।

জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর উপজেলা ২৪ টি এমপিও ভুক্ত মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩টি কলেজ ও ৮টি মাদ্রাসার কমিটি করা নিয়ে বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা দৌড় ঝাঁপ শুরু করেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুপারিস পেতে অনেকের বিরুদ্ধে প্রতিষ্টান প্রধানের উপর বল প্রয়োগ করেন। ইতোমধ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পৃথক ভাবে ৩টি কলেজসহ বেশ কিছু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির অনুমোদনও দিয়েছে। অনুমোদিত ও অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা একাধিক কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কমিটি নিয়ে দলটির নেতাদের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে রুপ লাভ করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটিতে বিএনপি নেতাদের পৌষ্যদের ঠাই হওয়া নিয়ে দলের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

শোমসপুর আবু তালেব ডিগ্রী কলেজের বিএনপি নেতা মারুফ মোরশেদ সুনাম কে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি পদে নিয়োগ দেয় কিন্তু এক মাসের মধ্যে তাকে অব্যহতি দিয়ে ওই পদে আসেন উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব আনিস উজ্জ জামান। ঘটনাটি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। ইতোমধ্যে ১১ মার্চ হাইকোটের একটি ব্রেঞ্চ বিএনপির সদস্য সচিব আনুস উজ্জ জামানের কমিটি’র উপর ৪ মাসের স্থগিত আদেশ দিয়েছেন।

উপজেলা সদরের খোকসা জানিপুর পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের কমিটি কেন্দ্র করে মুখো-মুখি অবস্থানে আছেন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ও দলটির আর এক সাবেক ছাত্রদল নেতা জামাল উদ্দিন। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে জিম্মি করে যশোর বোর্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অস্বীকার করেন নি বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষিকা সালমা খাতুন।

উপজেলার এমপিও ও নন এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সদ্য অনুমোদিত এডহক কমিটি নিয়ে কোন তথ্য দিতে পারেনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস। সেখান থেকে জানানো হয়, সব তথ্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে। সেখানে গিয়ে জানা যায়, নতুন ঘোষনার আলোকে মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড যশোর ২৩ টি এমপিও ভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির অনুমোদন দিয়েছে। এখানেও কলেজ ও মাদ্রসার কোন তথ্য পাওয়া গেলো না।

অপসারণ হওয়া শোমসপুর আবু তালেব ডিগ্রী কলেজের সভাপতি বিএনপি নেতা মারুফ মোরশেদ সুনাম বাদি হয়ে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন দায়ের করেন। (যার আবেদন নম্বর ৪১৯৪/ ২০২৫)। ১১ মার্চ বিচারপতি ফাতেমা নাজিব ও বিচারপতি শিকদার মাহামুদুর রাজিবের ব্রাঞ্চ বাদির অনুকূলে ৪ মাসের স্থগিতাদের দিয়েছেন।

ভারপ্রাপ্ত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমানকে তার অফিসে পাওয়া যায়নি। ফোনও রিসিভ করেন নি। তবে উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার মিলন হোসেন খান জানান, কমিটি সংক্রান্ত তাদের কাছে তেমন কোন তথ্য নেই। যা আছে সব উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নাজিরের কাছে।

সাবেক ছাত্রদল নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক জানান, নেতারা তাদের পৌষ্য ও পছন্দের লোকদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বানাতে মারিয়া। এর সাথে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিএনপির নেতারাও কলকাঠি নাড়ছেন। এ কারণেই দলীয় কোন্দোল মিটছে না।

একই বিদ্যালয়ের সভাপতি পদের জন্য প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী আর এক সাবেক ছাত্রদল নেতা জামাল উদ্দিন দুষলেন বিএনপির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের। তার অভিযোগ অনেক। তিনি দাবি করেন, উপজেলা ও জেলা বিএনপির নেতার তার বিরুদ্ধের এক প্রার্থীর অনুকুলে নিজেদের প্যাডে সুপারিশ করেছেন। যার আইনগত কোন ভিত্তি নাই।

উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও শোমসপুর আবু তারেব ডিগ্রী কলেজের সভাপতির বিরুদ্ধে রিটকারী মারুফ মোরশেদ দাবি করেন, তার পিতাও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব তার সাথে পায়ে পা দিয়ে বিরোধিতা করেছেন।

তিনি আরও জানান , উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনিস উজ্জ জামান একাই চারটি স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি হয়েছেন। তার বিপক্ষে আদালত আদেশ দেওয়ায় তিনি আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

খোকসা জানিপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষিকা সালমা খাতুন বলেন, আইনের বাইরে গিয়ে কিছু করার নেই। তবুও সবাই চেষ্টা করেছেন। তার কাছে বিভিন্ন পর্যায় থেকে সুপারিশ এসেছে। আইনের বাইরে গিয়ে কাজ করার জন্য।

শোমসপুর আবু বালেব ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ রায়হানুল হক জানান, বর্তমান সরকারের আমলে অনুমোদিত প্রথম কমিটির সভাপতি মহামান্য হাইকোট থেকে চলতি কমিটির উপর ৪ মাসের স্থগিতাদেশ এনে দিয়েছেন। আমরা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যে সিদ্ধান্ত দেবে সেটাই প্রতিপালন করা হবে।

উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও শোমসপুর আবুতালেব ডিগ্রী কলেজের এডহক কমিটি (স্থগিত)’র সভাপতি আনিস উজ্জ জামান এর সাথে মুঠো ফোনে কথা বলা হলে তিনি বলেন, আমিতো দেখিনি। না দেখে শুনে মন্তব্য করতে পারছি না। হাইকোটের কাগজ দুই রকমের হয়। একটা হাই কোটের আদেশ, আর একটা এডভকেট কপি। সেটা আমি জানি না। এ নিয়ে মন্তব্য করতে পারছি না।

আরও পড়ুন – সর্বনিম্ন ফিতরা ১১০ টাকা

উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সিনয়র যুগ্ন আহবায়ক নাফিজ আহমেদ রাজু বলেন, উপজেলা পর্যাযের অনেক নেতাই ক্ষমতা এক কেন্দ্রিক করে রাখতে চাচ্ছে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও পৌষ্য আধিপত্য বাদ দিলে কোন্দোল মিটতে পারে।

আরও পড়ুন – দৌলতপুরে অস্ত্র-গুলিসহ আওয়ামী লীগ কর্মী আটক

উপজেলা বিএনপির আহবায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন খানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেনি।