খোকসায় শিশু ও বৃদ্ধাকে পৃথক যৌন হয়রানির অভিযোগ

0
118

শিশুর ঘটনা পঞ্চাশ হাজার টাকায় রাফা

স্টাফ রিপোর্টার

কুষ্টিয়ার খোকসার গ্রামে এক শিশু ও বৃদ্ধার পৃথক শ্লীলতাহানীর চেষ্টার ঘটনায় গ্রাম্য বিচারের আর্থিক জরিমানা এবং লম্পটদের শারীরিক শাস্তি দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃদ্ধার শ্লীলতাহানীর চেষ্টার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের ও লম্পটকে আটক করা হয়েছে।

স্থনীয়দের সূত্রে জানা গেছে, রবিবার সকাল ৯ টার দিকে উপজেলার ওসমানপুর ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামে জিকে খালের পশ্চিম পাড়ের এক কৃষি শ্রমিকের ৭/৮ বছরের মেয়েকে ফাঁকা বাড়িতে পেয়ে এলাকার হাফিজ (৪৭) যৌন হয়রানি (পশুবিত্তি চরিতার্থ) করে। এ সময় শিশুটির চাচা ওই লম্পটকে আটক করে। গ্রামবাসী এসে লম্পট হাফিজকে গাছের সাথে বেঁধে মারপিট করে।

এক পর্যায়ে ওসমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় একজন মেম্বরের নেতৃত্বে সকালেই গ্রামেই লম্পট হাফিজের বিচার বসানো হয়। ১৫ মিনিটের শোনানির পর শিশুর যৌন নিপীড়নের দায়ে হাফিজকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে হাফিজকে তার পরিবারের লোকের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

রবিবার সকাল ১০টার দিকে রায়পুরে যৌন নিপীড়নের শিকার শিশুর বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। গ্রামে মেম্বরের নেতৃত্বে সালিশের পর শিশুটির পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপন করেছেন। তবে শিশুর যৌন নির্যাতনকারী জরিমানা হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করেন। এ সময় স্থানীয় মেম্বর তোফাজ্জের সাথে দেখা হয়। তিনি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করেন।

গত শুক্রবার সন্ধায় উপজেলা শিমুলিয়া ইউনিয়নের সিংঘড়িয়া গ্রামে ৫০ বছর বয়স্ক বৃদ্ধা জামাই বাড়ি থেকে ইফতার শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় জহুরুল শেখ ওই বৃদ্ধার উপর যৌন নির্যাতন চালানোর চেষ্টা করে। বৃদ্ধার চিৎকারে গ্রামবাসী এগিয়ে আসেন। পর দিন শনিবার সকালে গ্রামের মসজিদের পাশে সালিশী বৈঠক ডাকা হয়।

সাবেক মেম্বর ও বিএনপি নেতা হজ্জরত আলী হজাই এর নেতৃত্বে বৃদ্ধাকে যৌন নিপীড়নের বিচার বসানো হয়। যৌন নির্যতনের ঘটনায় অভিযুক্ত জহুরুলকে শারীরিক ভাবে শাস্তি প্রদান করা হয়। সাথে এমন অভিযোগ আবার পাওয়া গেলে অভিযুক্ত জহুরুল ৫ লাখ টাকা জরিমানা দিতে বাধ্য থাকবে বলে মুচলেকা নেওয়া হয়।

এ দিন শনিবার দুপুরের সালিশে নির্যাতনে আহত জহুরুককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। যৌন নির্যাতনের শিকার বৃদ্ধার দায়ের করা মামলায় শনিবার বিকালে থানা পুলিশ জহুরুলকে আটক করেছে।

ওসমানপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তোফাজ্জেল হোসেন সাথে কথা বলা হয়। এ সময় তিনি সালিশ করে বাড়ি ফিরছিলেন। তিনি বলেন, ছোট একটি পারিবারিক সমস্যা হয়েছিল। বিষয়টি নিস্পত্তি হয়ে গেছে।

কথিত যৌন নিপীড়ণ দায়ে অভিযুক্ত হাফিজের সাথে দেখা করার জন্য তার বাড়ি ওসমানপুর ব্যাপারী পাড়ায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।

সিংয়ঘড়িয়া গ্রামের বৃদ্ধাকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় অভিযুক্ত জহুলের বাবা আমদ আলী শেখ অভিযোগ করে বলেন, তার ছেলের বিরুদ্ধে গ্রামে সালিশে ৫ লাখ টাকার মুচলেকা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। এ ছাড়া সাবেক মেম্বর হজ্জরত আলী ও আবু ছালহে নামে দুইজনসহ একাধিক ব্যক্তি শালিসে বৈঠকে তার ছেলেকে বেধর পিটিয়েছেন। পরে ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে পুলিশ তার ছেলে আটক করে কোটে পাঠিয়েছে। তিনি সালিশের নামে নির্যাতন ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেন।

যৌন নিপীড়নের শিকার বৃদ্ধা বলেন, জহুরুল যে অপরাধ করেছে গ্রাম্য সালিশে তার বিচার হয়েছে। তিনি আর মামলা করতে চান নি। পুলিশ মামলা দিয়েছে।

সিংঘড়িয়া বৃদ্ধার যৌন নিপীড়নের ঘটনায় গ্রাম্য সালিশের নেতৃত্বদেওয়া সাবেক মেম্বর হজ্জরত আলী বলেন, তারা সালিশ করেছে। অপরাধীর সাজাও দেওয়া হয়েছে। তার পর পুলিশ কি ভাবে মামলা নিয়েছে তা তিনি বুঝতে পাছেন না।

আরও পড়ুন – আরশি নগর কতদূর

এ ব্যাপারে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মাঈনুল ইমলাম বলেন, সিংঘড়িয়া বৃদ্ধার যৌন নিপীড়নের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে । ইতোমধ্যেই বৃদ্ধার যৌন নিপীড়ক জহুলকে আটক করা হয়েছে। তবে ওসমানপুরে শিশুর যৌন নিপীড়নের ঘটনাটি তার জানা নেই।