গ্যাসের গন্ধে প্রথমে দু’পা পিছিয়ে আসেন কলেজ ছাত্রী মাসুমা

0
188
কলেজ ছাত্রী মাসুমা

স্টাফ রিপোর্টার

সে দিন শতশত মানুষের মধ্যে বিস্ফোরন মুখো গ্যাস সিলিন্ডার নিষ্কৃয় করে লোক লজ্জার ভয়ে ঘটনা স্থল থেকে দ্রæত বেড়িয়ে পরেন কলেজ ছাত্রী মাসুমা খাতুন। কিছু না ভেবেই স্কাউট ও পরিবার থেকে পাওয়া শিক্ষায় এই ঝুকি নিয়ে ছিলেন। তার প্রচেষ্টায় দুই নারীসহ একটি পরিবার রক্ষা পায়। সেদিন বিবেকের তারনায় গ্যাস সিলিন্ডারটি সুইচ অফ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বন্ধ ঘরে ছড়িয়ে পরা গ্যাসের বিকট গন্ধে প্রথমে দু’পা পিছিয়ে আসেন। পরে নিজের হেজাব দিয়ে নাক ঢেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিস্ফোরণ মুখি গ্যাস সিলিন্ডারের সুইচটি অফ করেন।

মঙ্গলবার দুপুরে খোকসা পৌর সভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মাঠ পাড়ার নিজের বাড়িতে সদআলাপি মাসুমার সাথে দেখা হয়। খোকসা সরকারী ডিগ্রী কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। প্রাথমিকের সমাপনী ও অষ্টম শ্রেনিতে জিপিএ ৫ পেয়ে ছিলেন। করোনার কারণে এসএসসিতে জিপিএ ৪.৩৫ পান। তবে এবারে পরীক্ষার ফলাফল ভালো হবে বলে আশা করছেন। বাবা সোবাহান হোসেনের দেখা দেখি সামাজিক কাজে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। নিজের পড়া লেখার পাশা-পাশি বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, লেখা পড়ার খোজ নেওয়া, প্রবাসীদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ ও টাকা আদান প্রদান, হিসাব রক্ষায় বিভিন্ন আ্যাপসের ব্যবহারে প্রতিবেশী গৃহীনিদের সহযোগীতা দিয়ে থাকেন। প্রতিবেশী শিশু ও নারীদের চিকিৎসায় সহযোগীতা করা তার নিত্যকার কাজ। উচ্চ শিক্ষা নিয়ে সরকারী চাকুরি করা ও গ্রামের শিশুদের উন্নয়নে কাজ করার স্বপ্ন দেখেন।

রবিবার দুপুরে পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে মাসুমা ও তার দুই বান্ধবী রতনা রিয়াও উৎসুক মানুষের সাড়িতে দাঁড়িয়ে ছিল। সবাই ফারার সার্ভিসকে খবর দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত। এ পরিস্থিতি তাকে পিড়া দেয়। সে প্রথমে ঘটনা টি বোঝার চেষ্টা করে। মুহুত্যের মধ্যে তার মাথায় কাজ করে ঘরে বা চুলায় আগুন তখনো লাগেনি। গ্যাস বেড়োনো বন্ধ করে দিলেই হয়। কলেজ মাঠে ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনিঃবাপনের মহড়ার কথা মাথায় আসে। সে উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে পরা গ্যাসে তার দমবন্ধ হয়ে আসছিল। তাই সে নিজের মুখের হেজাবের কাপড়ের একাংশ দিয়ে নাক ঢেকে নেয়।

বিভিন্ন লেখকের ছোট গল্প ও ফেসবুকের বিভিন্ন গল্প কবিতা পড়তে তার ভালো লাগে। ৬ষ্ট শ্রেণি থেকে সে স্কাউটে নাম লেখায়। মানব সেবা ও নিজেকে রক্ষার নানা কৌশল সেখান থেকেই রপ্ত করেছেন। বিস্ফোরণ মুখি গ্যাস সিলিন্ডার নিস্কৃয় করাটা তার কাছে খুবই স্বাভাবিক বলে মনে হয়েছে। মাসুমার কাছে তার বাবা (সোহবান) একটি আদর্শ।

গোপগ্রাম এজেড ফাজিল মাদ্রাসার সহকারী সুপার এইচএম সোবাহান ও শাহানাজ পারভিন দম্পতির চার মেয়ে সন্তানের মধ্যে মাসুমা তৃতীয়। তবে গ্রামের মানুষের কাছে সে তামান্না নামে পরিচিত। তার পিতা সোবাহান হোসেন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাকুরিজীবী হলেও অবসর সময়ে নিজের গ্রামের খাদিজাতুল কুবরা নামে একটি এফতেদায়ী মাদ্রাসার শিশুদের বিনা বেতনে কাস নেন।

শিক্ষার্থী মাসুমার মা শাহানাজ পারভিন। ছোট বেলায় গ্রামের পুকুরের পানিতে পরে যাওয়া শিশুকে উদ্ধার করতে গিয়ে নিজেও পানিতে ডুবে গিয়ে ছিলেন। পরে পরিবারের লোকেরা দুই শিশুকে উদ্ধার করেন। সন্তানদের প্রতি মানুষের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন তিনি। কোন পারিশ্রমিক ছাড়াই গ্রামের নারীদের ইসলামী শিক্ষা দিয়ে থাকেন।

মায়ের সাথে মাসুমা

মাসুমা এবারই ঝুকি নেয়নি। আগেও সে অনেক বার দুর্ঘটনায় পরা মানুষের জন্য ছুটে গেছে। প্রতিবেশী বাচ্চা কাচ্চার কিছু হলে দিনের পর দিন সময় দিয়ে থাকে। নিজের চারটিই মেয়ে সন্তান। বড়মেয়ে সুরাইয়া রেনু মাষ্টারর্সের ছাত্রী। দ্বিতীয় মেয়ে ফাহানা মুসফিকাও মাদ্রাসা লাইনে মাস্টারর্স সমমানের শ্রেনির শিক্ষার্থী। সর্বকনিষ্ঠ মেয়ে মাফুজা আক্তার নবম শ্রেনিতে পরেন। তার মেয়েরা যেন মানুষের জন্য কিছু করতে পারে, এটাই তাদের (সন্তান) শিক্ষা দেওয়া হয়।
কলেজ ছাত্রীর প্রসংসায় পঞ্চমুখ প্রতিবেশী বয়বৃদ্ধ জহুরা খাতুন। তিনি শুনেছেন মাসুমার সাহসের কথা। তবে মনেমনে ভয় পেয়েছিলেন ভালো মেয়েটির যদি কিছু হয়ে যেত।

রতনা রিয়া আর মাসুমা এক সাথে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু কখনযে মাসুমা মৃত্যু কুপের মুখে পৌছে গেছে তা তার সহপাঠিরা বুঝতেই পারেনি। নিজের জীবনের কথা না ভেবে ও যা করেছে তা মনে রাখার মত।

ছাত্রীর সাহসীকতায় সেদিন বড় ধরণের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছেন শিক্ষিকা মায়া রানীর পরিবার। পরিবারটি বড় ধরণের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছেন বলে স্বীকার করেন খোকসা ফায়ার সার্ভিসের সাব অফিসার নজরুল ইসলাম।

ছাত্রী মাসুমার দুঃসাহসীক অভিযানের গল্প শুনে মনেমনে ধন্যবাদ জানিয়েছেন খোকসা সরকারী ডিগ্রী কলেজের ভুগোল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। মেয়েটি আগে থেকে স্কাউটের ট্রেনি প্রাপ্ত। এ ছাড়া কলেজ ক্যাম্পাসে ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীদের অগ্নি নির্বাপক ক্যাম্পিং তাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি আসার আগেই ছাত্রীটি গ্যাসের সুইচ বন্ধ করে দেয়।