গড়াই নদীর ভাঙ্গ রোধ প্রকল্প: ৭শ মিটার প্রকল্পের ২শ মিটার করেই শেষ

0
49

স্টাফ রিপোর্টার

হিজলাবট দ্বীপচরের চারটি আবাসন ও আশ্রায়ণ প্রকল্প এলাকায় গড়াই নদীর অব্যহত ভাঙ্গন রোধে নেওয়া ৭০০ মিটার দীর্ঘ প্রকল্পের ২০০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে কাজের ইতি টানা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে পানি কমার সাথে সাথে আবার নদী ভাঙ্গন বৃদ্ধি পাওয়া আশঙ্কা করা হচ্ছে। হুমকীর মুখে পরেছে মসজিদ, শিশুদের স্কুলসহ ১৭০ ভুমিহীনের বসতবাড়ি। ভাঙ্গন রোধে প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ শুরু করার দাবিতে ভূমিহীনরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দৌঁড়ে বেড়াচ্ছেন। সবাই আশ্বাস দিয়েছেন কিন্তু কাজ আর শুরু হচ্ছে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত শুষ্ক মৌসুমে খোকসা উপজেলার ওসমানপুর ইউনিয়নের দ্বীপচর আবাসন প্রকল্প এলাকায় গড়াই নদীতে ভাঙ্গন শুরু হয়। নদীর পূর্ব তীরের এসব আবাসান প্রকল্প এলাকার নদী ভাঙ্গন রোধে ৭০০ মিটার জিও ব্যাগ ফেলার প্রকল্প তৈরী করের ঢাকায় পাঠানো হয়। কিন্তু প্রকল্পের দুই প্রান্তে মোট ২০০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পের মাঝের ৫০০ মিটারের বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। অনুমোদিত অংশের কাজ ইতোমধ্যে শেষ করা হয়েছে। বাদপড়া অংশে বরাদ্দের জন্য উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ আলোচনা চলছে।

ভূমিহীনদের অভিযোগ, দ্বীপচর আবাসন ও আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় নদী ভাঙ্গন শুরুর সাথে সাথে তার বিভিন্ন দপ্তরে ছুটা-ছুটি করেছিল। অনেক তদবিরের পর প্রকল্পো অনুমোদন করানো হয়। কিন্তু তাদের চোখে ধুলো দিয়ে ভাঙ্গনের মুখে সামান্য কিছু জিও ব্যাগ ফেলে নদীর তীর রক্ষার কাজ শেষ করা হয়েছে। তাদের বলা হয়েছিল পানি কমলে কাজ করা হবে। এখন বলা হচ্ছে প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ না থাকার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

দ্বিপচরের আশ্রয়নের বসতি ভূমিহীনরা প্রকল্প শুরু করার বাদি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেছেন। প্রত্যেকেই তাদের আশ্বস্ত করেছেন অচিরেই কাজ শুরু করা হবে কিন্তু পানি নামতে শুরু করেছে কাজ শুরু না হওয়া তারা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হিজলাবট মৌজায় গড়াই নদীর মাঝে জেগে ওঠা বিশাল চরই দ্বীপচর। চরের পশ্চিমে মূল গড়াই নদী অংশে ভাঙ্গ তীব্র হয়েছে। ভূমিহীনদের বসত বাড়ির ৭৫ গজের মধ্যে নদী ভাঙ্গন চলে এসেছে। আবাসনের মাঝখানে শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয় (স্থানীয় ভাবে পরিচালিত), মসজিদ ও পুকুর। গড়াই নদীর পুর্ব তীরের দ্বীপচর আবাসন প্রকল্পের উজান ও ভাটিতে বেশ কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। পানি কমতে শুরু করায় ভাঙ্গন কবলিত এলাকা জুড়ে নতুন করে কলার গাছের চারা গজাচ্ছে। নদী রক্ষা প্রকল্প এলাকায় কোন সাইনবোড পাওয়া যায়নি। ইতোমধ্যেই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ভূমিহীন লাল্টু, আলাউদ্দিন ওরফে আলাই, রবিউল সহ প্রায় ৪৫ জন ভূমিহীনের নামে বন্দবস্ত দেওয়া প্রায় শতবিঘা জমির সিংহ ভাগ।

আবাসন প্রকেেল্পর বাসিন্দার মজিবর রহমান জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ভূমিহীনদের চোখে ধুলো দিয়ে নাম মাত্র কাজ করে উঠে গেছে। প্রকেেল্পর মাঝ খানের ৫০০ মিটার কাজ না করায় আবার নতুন করে নদী ভাঙ্গন শুরু আশঙ্কা করছেন তিনি। ভূমিহীনদের চাষের জন্য বরাদ্দ দেওযা প্রায় সব জমি নদীর পেটে গেছে। এবার যাবে বাড়ি। ভাঙ্গন রোধ করা না গেলে আবাসান নিশ্চিহ্ণত হয়ে যাবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যসহকারী আব্দুল আজিজ বলেন, নদী ভাঙ্গরোধে জরুরী এ প্রকল্প এলাকায় অনেক বেশি জিও ব্যাগ ফেলার কথা ছিল। কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় ৩০০ মিটার করার পর হঠাৎ করে কাজ বন্ধ করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন না করা হলে নদী ভাঙ্গন বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন তিনিও।

আরও পড়ুন – দূর্গা পূজায় অপ্রীতিকর ঘটনায় ১৭ জন আটক : আইজিপি

পানি উন্œয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, তারা ৭০০ মিটার নদীর তীর রক্ষার প্রকল্প তৈরী করে ঢাকায় পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু প্রকল্পটির কাট-ছাট করে উজানে একশ মিটার আবার ভাটিতে একশো মিটার তীর রক্ষার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। মাঝের বাঁকী ৫০০ মিটারে জিও ব্যাগ ফেলার জন্য পরে বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল। গড়াই নদীর দ্বীপচর এলাকায় পাশাপাশি চারটি আবাসন ও আশ্রয়ণ রয়েছে। তাই ভাঙ্গন রোধের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। কিন্ত রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে আর বরাদ্দ আসেনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা ফোনে জানান, ভাঙ্গন উপদ্রæত এলাকার লোকজন এসেছিল। স্থানীয় তহশিলদারকে রিপোট করে জমা দিতে বলা হয়েছে। রিপোট পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসন বরাবর পাঠায়ি দেওয়া হবে।

তিনি আরও জানান, যেখানে ভাঙ্গন লেগেছে। সেখানে সরকারী জমি ইজারা নিয়ে ভূমিহীনরা ঘর বাড়ি তুলে বসবাস করছে। সরকারী ভাবে নির্মান করা আবাসন হ্যলিপেডে। ভাঙ্গন থেকে অনেক দূরে।

উল্লেখ্য, হিজলাবট দ্বীপচরে ৯০ এর দশকে প্রথমে ১০০ ও পরবর্তীতে ৭০ পরিবারের জন্য সরকারী ঘর ও জমিসহ দুটি পৃথক আবাসন প্রকল্প চালু করা হয়। সরকারী ভাবে চরের মাঝখানে অফিস, কমিউন্টি সেন্টারও নির্মান করে দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ের খানপুর ও হিলালপুর মৌজার সীমান্তে ৩৫ পরিবারের জন্য টিন সেড বসত ঘরে আশ্রায়ণ গড়ে তোলা হয়। এখানেও কমিউনিটি সেন্টার সহ অফিস ছিল। এটি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।

সর্বশেষ আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে মোড়াগাছা হেলিপ্যাডে মজিব শতবর্ষের আশ্রায়ণ প্রকল্প তৈরী করা হয়।