ঘরের আগুনে প্রাণ গেল বৃদ্ধের, দগ্ধ পুত্রবধূ হাসপাতালে

0
103

নিঃস্ব সাত পরিবারের মানবেতর জীবন যাপন

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

দুদিন আগেও তাদের ছিলো সারি সারি ঘর গুলোতে আসবাবপত্র, গহনা, চাল, ডাল ও ফসলাদিতে ছিল ভরপুর। গোয়াল ঘরে বাঁধা থাকতো বড় বড় গরু। এসব এখন শুধুই স্মৃতি। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সর্বনাশা আগুন তাদের সবকিছু পুড়িয়ে নিঃস্ব করে দিয়েছে। হয়েছেন সর্বশান্ত।

কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের বরইচারা গ্রামের সাত পরিবারের দুঃখ- দুর্দশার গল্প এটি। গত বুধবার দুপুরে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে প্রথমে আগুন লাগে ওই গ্রামের মোকাদ্দেস হোসেনের ছেলে আব্দুল্লাহর গোয়ালঘরে। এরপর মূহুর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের সাতটি বাড়িতে। এসময় নিজ ঘরে থাকা মাত্র ৩০০ টাকা উদ্ধার করতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে গ্রাণ যায় সত্তরোর্ধ বৃদ্ধ মোকাদ্দেস হোসেনের। আর গোয়ালঘর থেকে প্রায় আড়াই লাখ টাকা মূল্যের দুইটি গরু উদ্ধার করতে গিয়ে প্রায় ৬০ ভাগ দগ্ধ শরীর নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তার পুত্রবধূ নাজমা খাতুন।

শনিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বরইচারা – আমতলা গ্রামীণ সড়ক ঘেঁসে আব্দুল্লাহদের বাস। বাতাসে পোড়া গন্ধ। পুঁড়ে ছাই হয়ে গেছে টিনসেডের ঘর, আসবাব, গহনা, চাল, ডাল, গরুসহ যাবতীয় কিছু। অবশিষ্ট আছে শুধু ঘরের খুঁটি আর পরনের কাপড়। কেউ ছাই গুলো অপসারণ করছেন। খোলা আকাশের নিচে টাঙানো কাপড়ের নিচে বসে আছেন কেউ কেউ। প্রতিবেশীরা চাল, ডালসহ জীবন ধারণের জন্য বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে যাচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্থদের শান্তনা দিচ্ছেন কেউ-কেউ।

এসময় বিলাপ করতে করতে নিহত মোকাদ্দেস হোসেনের স্ত্রী আছিয়া খাতুন (৬৫) বলেন, ঘরে ৩০০ টাহা ছিল। আগুন ধরলি সোয়ামি টাহা আনতে গিয়ে পুঁড়ে গিছিল। সগ্গলে ধরে হসপিটালে নিছিল। তাও বাঁচে ফিরল না। ৩০০ টাহার শোগে মরেছে গো। আহারে। বেটার বউ এহনও হসপিটালে পাঞ্জা লড়ছে।

ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, আমার ঘরও গেল, মানুষও গেল। এহন আর কি করি। মানষে সামিয়ানা টাঙায় দিছে, চাল ডাল দিচ্ছে। একগাল কোনোমতে খাচ্ছি।

আছিয়ার ছেলে মো. আব্দুল্লাহ বলেন, সবাই দিনমজুর। খেটেখুটে যা করিছিলাম। সবই শ্যাষ। বাকি আছে শুধু ঘরের খ্ুঁটি। নতুন ঘর করার সামর্থ্য নেই। খোলা আকাশের নিচে সারারাত শুয়ে বসে কাটাচ্ছি। তার ভাষ্য, সকলের সহযোগীতা ছাড়া জীবনে ফের ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।

সেদিন দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা আগুন দেখে ছুটে আসেন প্রতিবেশিরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে করেন কুমারখালী ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিটের সদস্যরা। সকলের প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণ আসলেও মোকাদ্দেস হোসেন, তার ছেলে আব্দুল্লাহ, আব্দুল্লাহর ছেলে রাজিব হোসেন, মৃত হাসমতের ছেলে কেরামত আলী ও আবু দাউদসহ অন্তত সাতজন দিনমজুরের টিনশেডের ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, গহনা, ধান, চাল, ফসলাদি ও দুইটি গরু পুঁড়ে ছাই হয়ে যায়। অবশিষ্ট আছে শুধু পরনের কাপড় আর ঘর গুলোর খুঁটি। বর্তমানে তারা খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাদের দাবি বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগে প্রায় ২৫ -৩০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্থ রাজিবের স্ত্রী মাছুরা খাতুন বলেন, কিচ্ছু নেই। লোকজন যা দিচ্ছে। তা খেয়ে পড়ে তাবু টাঙিয়ে থেকে রোজা করছি। আপনারা একটু সাহায্য করুন।

আরও পড়ুন – খোকসায় বিএনপির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ প্রত্যেক পরিবারকে ৩ হাজার টাকা এবং নিহতের পরিবারকে ৫ হাজার টাকা প্রাথমিকভাবে মানবিক সহযোগীতা প্রদান করা হয়েছে। লিখিত আবেদন পেলে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পরবর্তীতে আরো বড় আকারে সহযোগীতা করা হবে।