কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
পলান শেখ। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। হাঁটেন খুড়িয়ে খুঁড়িয়ে। স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে থাকেন শহরের থানাপাড়া জিকে ঘাটের চরে। থানাপাড়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র (মাতৃসদন হাসপাতাল) এর সামনে ছোট পরিসরে চা-পান বিক্রি করে কোন রকম জীবিকা নির্বাহ করেন।
বড় ছেলে বিয়ে করে অনেক আগেই নিজের মত করে সংসার পেতেছেন। প্রতিবন্ধী পিতা মাতা এবং ছোট দুই ভায়ের কোন খোঁজ-খবর সে রাখেনা। মেজো ছেলে শিমুলের বয়স ১২-১৩ হবে। দোকানের সাথে লাগানো জিকে স্কুলের ৮ম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র। প্রতিবন্ধী পিতাকে সার্বক্ষণিক কাজে সহযোগিতা করত শিমুল।
দোকান থেকেই স্কুলে যেত, চালাতো পড়ালেখা। বাবার সাথে চা পান বিক্রি তো আছেই। বিগত ১০ বছর ধরে শিমুল এভাবেই পড়ালেখার পাশাপাশি পিতাকে সহযোগিতা করে আসছে। শিমুলকে ঘিরে প্রতিবন্ধী পিতা পলান শেখের অনেক স্বপ্ন। ছেলে পড়ালেখা করে মানুষের মত মানুষ হবে। ছেলের হাত ধরেই হয়তো অভাব-অনাটনের সংসারে স্বাচ্ছন্দ আসবে। কিন্তু বিধি বাম!
শুক্রবার বিকেলে শিমুল দোকানের সামনে মাতৃসদনের ছাদে উঠে ঘুড়ি উড়াতে যায়। ঘুড়ি ওড়ানোর এক পর্যায়ে অসাবধানতা বশতঃ মাতৃ সদনের দোতালার ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় মারাত্মক আঘাত পায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য আহত স্কুল ছাত্র শিমুলকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে রেফার্ড করে। সেখানে চিকিৎসার এক পর্যায়ে রাতেই শিমুল মৃত্যু হয়। সেই সাথে ভেঙে চুরমার হয়ে যায় প্রতিবন্ধী পিতা পলান শেখের স্বপ্নও। শিমুলের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় জিকে ঘাট এলাকায় শোকের ছায়া নামে।
শনিবার সকাল ১০টায় জিকে ঈদগাহে নামাজে জানাযা শেষে পৌর গোরস্থানে শিমুলের দাফন সম্পন্ন হয়। করোনা মহামারীকে উপেক্ষা করে সদা হাস্যজ¦ল মেধাবী শিক্ষার্থী শিমুলের জানাযায় জনতার ঢল নামে।