চায়ের দোকানির মৃত্যুকেন্দ্র করে হামলায় তিন পুলিশ আহত

0
70

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পুলিশের অভিযানের সময় এক জাসদ নেতার ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিক্ষুদ্ধ জাসদ নেতা-কর্মীদের মারপিটের শিকার আহত তিন পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন ভেড়ামারা থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) সালাউদ্দীন, পুলিশ কনস্টেবল এখলাছ উদ্দীন ও মিজানুর রহমান।

ঘটনার তদন্তে পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো: মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, এ ঘটনায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অবস) পলাশ কান্তি নাথকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হচ্ছেন মিরপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল খালেক এবং ডিআই ওয়ান শেখ ওবায়দুল্লাহ। কমিটিকে আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত পূর্বক লিখিত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

এদিকে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এটিকে হত্যাকান্ড বলে দাবি করে অভিযুক্ত ছয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুুতি চলছে।

শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের চন্ডীপুর গ্রামে ভেড়ামারা থানার ছয় পুলিশ সদস্য অভিযানে গেলে পুলিশ হেফাজতে রফিকুল ইসলাম দুদু (৪৫) নামে এক চা বিক্রেতার মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। নিহত রফিকুল ইসলাম দুদু একই গ্রামের আজিজ মন্ডলের ছেলে। পেশায় তিনি একজন চায়ের দোকানদার ছিলেন। তাঁর ছোট ভাই মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক চাঁদগ্রাম ইউনিয়ন জাসদের সাধারণ সম্পাদক।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁদগ্রাম ৪ নং ব্রীজের কাছে রফিকুলের চায়ের দোকান। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ভেড়ামারা থানা পুলিশের এস আই সালাউদ্দীন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ওই এলাকায় অভিযানে যান। এসময় পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে ব্রীজ থেকে রফিকুল লাফ দেন। পুলিশ সেখানে ধাওয়া করে তাকে আটক করে। পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

পুলিশের কারণেই রফিকুলের মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগ এনে তিন পুলিশকে মারধর করে তাদের বাজারের একটি দোকানে আটকিয়ে রাখে জাসদের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা। এ সময় পুড়িয়ে দেওয়া হয় পুলিশের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি। প্রায় তিন ঘন্টা পর রাত ১০ টা ২০ মিনিটের দিকে ক্যাপ্টেন লাম ইয়ানুল ইসলামের নেতৃত্বে কুষ্টিয়া থেকে সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে অবরুদ্ধ তিন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে থানা পুলিশের হেফাজতে দিয়ে আসেন।

এদিকে রফিকুল ইসলামকে ওয়ার্ড জাসদের নেতা উল্লেখ করে তাকে হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে এবং দোষী পুলিশ সদস্যদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় জাসদ। জাসদের দপ্তর সস্পাদক সাজ্জাদ হোসেনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রফিকুল ইসলাম দুদুকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ঘাড় ভেঙ্গে মুমূর্ষু অবস্থায় ব্রীজ থেকে নিচে ছুড়ে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা অভিযোগ ছিল না।

নিহত রফিকুল ইসলামের ভাই চাঁদগ্রাম ইউনিয়ন জাসদের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক জানান, নিহত ব্যক্তি একজন চায়ের দোকানদার। তার বিরুদ্ধে কোন মাদক মামলা নেই। সে মাদকের সাথে জড়িতও না। পুলিশ অন্যায়ভাবে তাকে আটক করতে এসে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত ছয় পুলিশকে আসামী করে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন – ঝিনাইদহে আদালত আঙ্গিনায় পরিষ্কার পরিছন্নতা অভিযান

ভেড়ামারা থানার ভারপপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ শহিদুল ইসলাম জানান, চায়ের দোকানের আড়ালে রফিকুল ইসলাম দুদুর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ ছিল। এই সংবাদ নিশ্চিত হয়ে ৬ সদস্যর পুলিশের একটি দল সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় তাকে আটকও করা হয়। তিনি পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে ব্রীজ থেকে লাফ দেন। পুলিশও তাকে ধাওয়া দিয়ে আবারো আটক করে। এক পর্যায়ে তিনি অসুস্থ অনুভব করলে, তাকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে তিনি মারা যান। এরপর বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা পুলিশের উপর চড়াও হয়ে হামলা চালায়। তিন পুলিশ সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রাখে এবং পুলিশের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়।

আরও পড়ুন – খোকসায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত

তিনি আরও জানান, তিন পুলিশ সদস্যকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে শনিবার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে রফিকুল ইসলাম দুদুর মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে দুপুরের দিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং নিজ গ্রামে বাদ আসর জানাজা শেষে স্থানীয় গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।