ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ঝিনাইদহের চিত্রা নদীর দুই পারে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বর্তমান অর্ন্তবতীকালীন সরকারের পানি সম্পদ উপদেষ্টার নির্দেশে ইতিমধ্যে দখলবাজদের চিহ্নিত করে তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সুত্র জানাগেছে, চিত্রা নদীর বুকে গজিয়ে ওঠা স্থাপনা ও পুকুর আগামী বছরের শুরুতে উচ্ছেদ করা হবে।
চিত্রা নদী দখলমুক্ত হলে এক সময়ের প্রমত্তা নদীটি আবারো প্রাণ ফিরে পেতে পারে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।
ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি সুত্র জানায়, ঝিনাইদহ জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ১২টি নদ-নদী রয়েছে। এরমধ্যে চিত্রা নদীর ১৭১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মধ্যে ঝিনাইদহ রয়েছে ৫৭ কিলোমিটার। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটী, দোড়া, কালীগঞ্জ, তত্বিপুর ও মালিয়াট ইউনিয়নের উপর দিয়ে যশোরের অভয়নগর উপজেলায় মিশেছে চিত্রা। এই নদীর উপ্তত্তিস্থল চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদী থেকে।
সরজমিন দেখা গেছে, ঝিনাইদহ অংশে বেশির ভাগ নদী জুড়েই অবৈধ স্থাপনা ও শত শত পুকুর রয়েছে। নদীর তীরবর্তী বাজার এলাকায় অবৈধ দোকানপাট ও বাড়িঘর তৈরী করেছে দখলবাজরা। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না, জিয়ানগর, বংকিরা, হাজরা, লক্ষিপুর, মোহাম্মদপুর ও গোবিন্দ এলাকায় নদী বক্ষে পুকুর কেটে মাছ চাষ করা হচ্ছে।
কোটচাঁদপুরের তালসার, ইকড়া, কালীগঞ্জ শহরের পুরাতন বাজার, বলিদাপাড়া, হেলাই, নিমতলা, নদীপাড়া ও ফয়লা এলাকায় দখল হয়ে গেছে চিত্রা। নদীর বুকে চাষাবাদ করছে মানুষ। নদীর মাটি কেটে ব্যক্তিগত কাজেও লাগাচ্ছেন কেউ কেউ। কালীগঞ্জ উপজেলার সিংদহ গ্রামে নদীর মধ্যে ৮টি পুকুর কেটে প্রভাবশালীরা মাছ চাষ করছেন। ফলে এক সময়ের প্রমত্তা নদী চিত্রা তার যৌবন হারিয়ে মৃতপ্রায়। দখলবাজদের কারণে নদীর কোথাও সরু কোথাও মৃত হয়ে হারানো ঐহিত্য নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
চিত্রা নদীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ নিয়ে ঝিনাইদহের মানবাধিকার কর্মী অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান টুকু জানান, সরকারের এ ধরণের সিদ্ধান্ত খুবই যুগান্তকারী। জেলার নদ-নদীগগুলো বাঁচানোর এখনই উপযুক্ত সময়। কারণ রাজনৈতিক সরকারের আমলে প্রভাব বিস্তারের আশক্সক্ষা থাকে।
ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস বলেন, প্রতিটি জেলায় একটি করে নদী দুষন ও দখল মুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান অর্ন্তবতীকালীন সরকার। সেই হিসেবে ঝিনাইদহ জেলায় চিত্র নদীকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে দখলদারদের চিহ্নিত করে তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। নদীর বেশির ভাগ অংশ কোটচাঁদপুর ও কালীগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত।
তিনি বলেন, চিত্রা নদীর ৩০ কিলোমিটারে ৯৪টি অবৈধ স্থাপনা পাওয়া গেছে। এরমধ্যে রয়েছে ভবন, পুকুর, দোকান, বাজার, ঝুলন্ত স্থাপনা ও মুরগীর খামার।
আরও পড়ুন – খোকসায় ছাত্র অধিকার পরিষদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত
নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস জানান, হালনাগাদ তথ্য মতে চিত্রা নদীর কালীগঞ্জ অংশে ৬২টি, কোটচাঁদপুরের লক্ষিপুর বাজারে ১১টি ও একই উপজেলার ধোপাবিলা গ্রামে ২১টি স্থাপনা ও পুকুর উচ্ছেদের তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। আগামী নতুন বছরের শুরুতেই এই উচ্ছেদ অভিযান পারিচালনা করা হবে।