কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ায় একটি জমির মালিকানা দাবি নিয়ে সরকারি দুই দফতরের মধ্যে রশি টানাটানি শুরু হয়েছে। দুপক্ষই জমির মালিকানা নিজেদের দাবি করায় বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।
জেলা শহরের সাদ্দাম বাজার এলাকার একচিলতে জমি। আর প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছে কুষ্টিয়ার গণপূর্ত অধিদপ্তর ও কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক ধরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামান্য একটু আগেই রাস্তার বাম পাশে একই জায়গার মধ্যে গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের অফিস। একটিই প্রবেশদ্বার। যার বাম দিকে একপাশে সওজ’র সাইনবোর্ড। আর অপরপাশে ডানদিকে গণপূর্তের সাইনবোর্ড।
প্রবেশদ্বার পেরিয়েই বাম হাতে সওজের কার্যালয়। আর সামনে একটু এগিয়ে ডান দিকে গণপূর্তের কার্যালয়। একই কমপাউন্ডের মধ্যে দুটি দফতরেরর স্টাফ কোয়ার্টারও রয়েছে। আর দুই দফতরের সামনে গ্রীল দিয়ে ঘেরা প্রায় দুই বিঘা জমির বাগান। সেখানে বড়-বড় সেগুন, মেহগনি, আম, কাঁঠালসহ হরেক প্রজাতির প্রায় শতাধিকেরও বেশি গাছ রয়েছে।
জানা গেছে, স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে থেকেই জায়গাটি সিঅ্যান্ডবি’র অধীনে ছিল। তখন সড়ক ও জনপথ এবং গণপূর্ত বিভাগ একসঙ্গে ছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিভাগ দুটি আলাদা হয়ে গেলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ গণপূর্তের জায়গা নিজেদের নামে রেকর্ড করে নেয়। এখন তারা জায়গাটি নিজেদের মালিকানা দাবি করে সেখানে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে চার তলা ভবন নির্মাণের জন্য গত ৮ জুন দরপত্র আহবান করেছে। আগামী ৭ জুলাই দরপত্র খোলার তারিখ রয়েছে। এর মধ্যে তারা বাগানের প্রায় শতাধিক গাছ কাটার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
কুষ্টিয়া গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম দাবি করছেন সম্পূর্ণ জায়গাই তাদের। সড়ক ও জনপথ বিভাগ তাদের জায়গা কৌশলে নিজেদের নামে রেকর্ড করে নিয়ে এখন মালিকানা তাদের বলে দাবি করছে যা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। আর এ নিয়ে বর্তমানে আদালতে মামলাও চলমান রয়েছে। এ অবস্থায় তারা কোনভাবেই সেখানে ভবন নির্মাণ করতে পারেনা।
আর তাছাড়া শহরতলীর চৌড়হাসে তাদের নির্ধারিত স্থান রয়েছে। ওই স্থানে তাদের ভবন নির্মাণের কথা। কিন্তু তারা সেখানে ভবন নির্মাণ না করে গাছ কেটে অন্যের জমিতে চার তলা ভবন নির্মাণের পাঁয়তারা চালাচ্ছে।
অন্যদিকে কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাকিরুল ইলসাম জানান, গণপূর্ত অধিদপ্তর নিজেদের মালিকানা দাবি করে সর্বপ্রথম ২০০৮ সালে কুষ্টিয়ার আদালতে রেকর্ড সংশোধনের মামলা দায়ের করে। যার নং ৪১৮/০৮। ২০১২ সালে আদালত তাদের মামলাটি খারিজ করে দিলে ২০১৪ সালে তারা পুনরায় মামলা দায়ের করে। মামলা নং ৪৪৬/১৪। ২০১৬ সালে আদালত মামলাটি খারিজ করে দিলে পরবর্তীতে তারা ২০১৭ সালে হাইকোর্টে একটি মিস মামলা দায়ের করে। যার নং ১০৫/১৭। হাইকোর্ট ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর মামলাটি খারিজ করে দিয়ে পরের বছর ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর মামলাটি সানি করে নি¤œ আদালতে পাঠিয়ে দেয়। দাবি করেন বার বার আদালতে হেরে গিয়েও গণপূর্ত অধিদপ্তর একের পর এক মামলা দিয়ে অহেতুক বাক-বিতন্ডা তৈরি করছে। এর একটা সুষ্ঠু সমাধান হওয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
গাছ কেটে ভবন নির্মাণের বিরোধিতা করছেন জেলার পরিবেশ কর্মিরা। পরিবেশবিদ খলিলুর রহমান মজু বলেন, একটি দেশের প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য যতটুকু বনভূমি থাকা প্রয়োজন আমাদের তা নেই। এখানে হরেক প্রজাতির প্রায় শতাধিকেরও বেশি গাছ রয়েছে। এখানে গাছ কেটে ফেলে দিয়ে ভবন নির্মাণ করা সঠিক কাজ হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বন বিভাগের অনুমতি ছাড়াই গাছ কেটে নেওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে যা কোনভাবেই আইনসিদ্ধ নয় বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ছালেহ মুহঃ শোয়াইব খান।
তিনি জানান, বন আইন অনুযায়ী যে কোনো দপ্তরে গাছ কাটতে হলে বন বিভাগের অনুমতি নিতে হবে।