ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া অভিশ্রুতি বৃষ্টির লাশ হস্তান্তর হচ্ছে না

0
148

দ্রোহ অনলাইন ডেস্ক

রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনে আগুনে নিহত সাংবাদিক ও ইডেন ছাত্রী অভিশ্রুতি বৃষ্টির লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। তার পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা থাকায় ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া লাশ হস্তান্তর করা হবে না।

ঢাকার রমনা কালীমন্দিরের সভাপতি উৎপল সাহা বলেন, মন্দিরের পক্স থেকে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং জেলা প্রশাসক বরাবর অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর পরিচয় নিয়ে যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে, তার সমাধানে ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করা হয়েছে।

অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর পরিচয় নিয়ে শুক্রবারও দিনভর ছিল ধোঁয়াশা। দুপুরে মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে যান কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার সবুজ শেখ। তিনি অভিশ্রুতিকে নিজের মেয়ে দাবি করেন। কিন্তু বিপত্তি বাধে নাম-পরিচয় নিয়ে। সবুজ শেখের দেখানো এনআইডি কার্ডে বাবার নামের জায়গায় সবুজ শেখ থাকলেও মেয়ের নাম লেখা বৃষ্টি খাতুন। এ কারণে প্রতারক ভেবে পুলিশ সবুজ শেখকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

সবুজ শেখের দাবি, নিহত অভিশ্রুতি শাস্ত্রীই তার মেয়ে বৃষ্টি খাতুন। কিন্তু সে ঢাকায় এসে নিজেকে হিন্দু হিসেবে পরিচয় দিত, নিয়মিত মন্দিরে যেত।

এনআইডিতে কুষ্টিয়ার ঠিকানা দেখে শনিবার আমাদের এ প্রতিবেদক বিস্তারিত জানতে অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর গ্রামে যান। সেখানে বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং বেতবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি আমার বিদ্যালয়ে ছাত্রী ছিল। ২০১৫ সালে সে এসএসসি পাস করে। এরপর বৃষ্টি কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। পরে ইডেন কলেজে ভর্তি হয়। সম্প্রতি আমার ছেলেকে ঢাকায় ভর্তির ব্যাপারে বৃষ্টি সহায়তা করে।

মা বিউটি বেগম বলেন, আমার তিন মেয়ে। এর মধ্যে বড় বৃষ্টি, মেজ মেয়ে ঝর্ণা একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট মেয়ে বর্ষা পড়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী। কিছুদিন আগে বৃষ্টি আমার কাছে টাকা চায়। তার শরীরে সমস্যা ছিল। জানতে চাইলে শুধু বলতো, খুবই সমস্যায় আছি, পরে বলব।

ঢাকার রমনা কালীমন্দিরের সভাপতি উৎপল সাহা বলেন, অভিশ্রুতি শাস্ত্রী ৮ থেকে ৯ মাস ধরে মন্দিরে যাতায়াত করতেন, পূজায় অংশ নিতেন। সেই সূত্রেই তার সঙ্গে পরিচয়। অভিশ্রুতি জানিয়েছিলেন, তার মা–বাবা বেনারসে থাকতেন। তারা মা মারা যাওয়ায় দাদুর হাত ধরে ঘটনাচক্রে ছোটবেলায় তিনি কুষ্টিয়ায় এসেছিলেন। অভিশ্রুতি দাদু মারা গেলে একটি পরিবার তাকে দত্তক নিয়েছিল। তবে পরিবারটি মুসলিম না হিন্দু ছিল, তা তিনি বলেননি।

তিনি আরও বলেন, পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর অভিশ্রুতি শাস্ত্রী যে ধর্মের হবেন, সেই রীতিতে তাকে সৎকার করতে হবে।

বৃহস্পতিবার বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকান্ডে মারা যান অভিশ্রুতি শাস্ত্রী। তার মরদেহ শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের হিমঘরে রাখা হয়েছে। এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার আঙুলের ছাপ সংরণ করা হয়।

অভিশ্রুতি সদ্য ইডেন মহিলা কলেজ থেকে দর্শন বিভাগ থেকে স্নাতক পরীা দিয়েছেন। ঢাকার মৌচাকের সিআইডি অফিসের বিপরীতে একটি মেসে থাকতেন। পড়াশোনার পাশাপাশি সাংবাদিকতায় নিয়োজিত ছিলেন।

অভিশ্রæতির বান্ধবী জশোয়া জানান, অভিশ্রুতি বাঁচার প্রচন্ড ইচ্ছা ছিল। ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসত। ইচ্ছা ছিল পৃথিবীর অনেক জায়গা ঘুওে দেখবে। কিন্তু এসব আর কিছুই হলো না। মুহূর্তে চলে গেল।

দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের চিফ রিপোর্টার গোলাম রাব্বানী জানান, চাকরির বায়োডাটায় তার নাম অভিশ্রুতি শাস্ত্রী। তবে এটি তার পারিবারিক নাম কি-না জানি না। তিনি বলেন, মাসখানেক আগে অসুস্থতার কারণে চাকরি ছেড়েছিলেন। অভিশ্রুতির শরীরে ‘সিস্ট’ ধরা পড়ে। অপারেশনের পর তিনি সুস্থ হন।