তুমি কি খুব বেশী বড় হয়েছো

0
194
ডঃ মুন্সী মুর্তজা আলী

ডঃ মুন্সী মুর্তজা আলী

তুমি কি হয়েছো? তুমি কি খুব বেশী বড় হয়ে গেছ! হয়তো বড় হয়েছো। হয়তো বয়স বেড়েছে। হয়তো বড় শিক্ষিত হয়েছো। হয়তো বড় চাকরী পেয়েছো। হয়তো বড় ব্যবসায়ী হয়েছো। হয়তো বড় ক্ষমতাধর হয়েছো। বড় বিত্তশালী হয়েছো। তুমি বড় হয়েছো। আবার বড় হওনি। শিক্ষা, সম্মান, বিত্ত-বৈভব, ক্ষমতার সাথে যদি তোমার চিত্তের উন্নয়ন না ঘটে। তাহলে বড় হয়েও বড় হওয়া যায় না। আর যদি তুমি ভাব, তুমি বড় হয়েছো। তাহলে তুমি বড় হয়েও বড় হওনি। কারণ বড় হয়ে বড় ভাবতে হয় না। বড় হবার পর বিনয়ী হয়ে থাকলে সাধারণ মানুষই তোমাকে বড় করে তুলবে। আর বড় হবার পর অহংকারী হলে মানুষ তোমাকে বড় ভাববে না।

শিক্ষায় বড় হতে হলে, স্বশিক্ষিত ও সুশিক্ষিত হতে হয়। চাকরীতে বড় হতে হলে, মনেও বড় হতে হয়। ক্ষমতায় কেউ বড় হয় না। ওটা পরিবর্তনশীল। অর্থে বড় হওয়া? ওটাও ক্ষণিকের। তোমার আজ অর্থ ও ক্ষমতা আছে। কালনাও থাকতে পারে। জীবনটাই তো অনিশ্চয়তার। তাহলে এই অনিশ্চিত জীবনে এতো বড়াই করে লাভ কি?

তুমি বড় চাকরী কর। কিন্তু বড় মনের নও। তাহলে তুমি কিসের বড় চাকরীজীবী হলে? তুমি বড় ব্যবসা কর। কিন্তু মানুষকে সাহায্য করতে গেলে তুমি দরিদ্র হয়ে যাও। তাহলে তুমি কিসের বড়লোক বা বড় ব্যবসায়ী? নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে নিজের পারিপার্শ্বিক উন্নয়ন ঘটানো যায়। কিন্তু মনের উন্নয়ন ঘটাতে হলে, পরোপকার করতে হয়।

তুমি বড় চাকরী কর। কিন্তু তোমার থেকে বয়সে বড়দের সম্মান কর না। মুরব্বীদের সম্মান করো না। তাহলে তুমি কিসের বড় চাকরীজীবী হলে। অহংকার কর। কিসের অহংকার? নিজেকে আলাদা শ্রেণীর মনে কর। কিসের শ্রেণী?

অসুস্থ শ্রেণী বিভাজনের গ্যাঁড়াকলকে অনিচ্ছাকৃতভাবে না মানলেও তুমিও শ্রেণীর বাইরে কেউ নও। হয়তো তুমি তথাকথিত উচ্চ শ্রেণীর মানুষ।

উচ্চ শ্রেনী থেকে উচ্চ মনের হওয়াই উত্তম। কারন সেখানে কোন শ্রেণী বৈষম্যনেই। যত শ্রেণী তোমাদের ঐ বাহ্যিক সমাজে!

সকল শ্রেণীর মানুষের মত তোমার শ্রেণীর মানুষেরও অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সমান।পার্থক্য শুধু শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্ষমতা আর শৌর্য বীর্যে। এটা হলো বাহ্যিক পার্থক্য। শ্রেণী পার্থক্যের চেয়ে মানুষের সাথে মানুষের বড় পার্থক্য হলো মানবিকতা ও মনুষ্যত্বের।

তাই, তুমি যত বড়ই হও না কেন, তোমার মর্যাদা তোমার গুরুজনদের নীচে। তাই বলে তোমার মর্যাদা নেই তা নয়। তোমারও একটা মর্যাদা আছে। তুমি নিজে তোমার মর্যাদা দিতে পারবে না। অন্যরাই তোমাকে মর্যাদাবান ভাববে ও মর্যাদার আসনে বসাবে। নিজে মর্যাদার আসনে বসতে গেলে মানুষের মন থেকে পড় যাবার সম্ভাবনাই বেশী। এটা কোন লোক দেখানো আসন নয়। এটা হল ভদ্রাসন। তুমি শুধু বিনয়ী হবে।

এরপরও বড়াই করবে? কিসের বড়াই কর? শরীরের? ওটা ক্ষয়ে যাবে। জ্ঞানের? জ্ঞানী কখনো বড়াই করে না। রুপ যৌবন? ওটাও ক্ষণিকের। তুমি কিন্তু সবচেয়ে ভালবাস তোমার নিজেকে। বেশী ভালবাস তোমার শরীরের প্রত্যেকঅঙ্গ প্রত্যঙ্গকে। তোমার বয়স বাড়ার সাথে সাথে তোমার শরীরের সমস্ত অংগতোমার কথা শুনবে না। কারণ বয়সের ভারে তোমার মনের বয়স এক থাকলেও তোমার শরীরের বয়স কিন্তু কমবে না। তোমার শরীরের বয়স বেড়েই চলবে। সময়ের ব্যবধানে তোমার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তোমার অনুভুতিতে সাড়া দিবেনা।

নশ্বর পৃথিবীতে সবই ক্ষয়ে যাবে। সবই অস্থায়ী। স্থায়ী বা চিরস্থায়ী বলে কিছু নেই। একদিন পৃথিবীও ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই পৃথিবীও চিরস্থায়ী নয়। তাই, যেসব নিয়ে বড়াই কর; সেটা চিরস্থায়ী নয়।

অর্থ এবং প্রাচুর্য্যও চিরস্থায়ী নয়। ক্ষমতারও হাত বদল হয়। তোমার আজ প্রভাব প্রতিপত্তি আছে। কাল নাও থাকতে পারে। তবে তোমার যে জ্ঞান আছে। সেটা কেউ কেড়ে নিবে না। তাই জ্ঞান আরও অর্জন করো। জ্ঞান দান কর। বেশী সম্পদ ও ক্ষমতা অর্জন করে তা ধরে রাখতে পারবে না। এগুলোর হাতবদল হবেই। তাই জ্ঞান দিয়ে মানুষকে ভালবেসে মানুষের ভালবাসা ধরে রাখ। তোমার মৃত্যুর পরও মানুষ তোমাকে মনে রাখবে।

এবার আসি একটু অন্য প্রসঙ্গে। তোমাকে শোধরানোর উপায় বলে দিই। তোমার বিগত দিনের কথা বর্তমানে তুমি এক নিমেষে ভাবতে পার। তেমনি আজকের বর্তমান যখন অতীত হবে। তখনো এক নিমেষেই আজকের কথা ভবিষ্যতে ভেবে সব শেষ হয়ে যাবে। ভাল কাজ করলে ভাল লাগবে। আর খারাপ কাজ করলে আপসোস করেও ভাল কিছু করতে পারবে না এবং সেসময়ও ফিরে পাবে না। তাই বড়াই কর না। কারন সবই ক্ষণস্থায়ী। তাহলে তোমার শ্রেণী, অর্থ আর ক্ষমতা কি করে সারা জীবন তোমার অধীন থাকবে? তাই বড় হও। আপত্তি নেই। তবে মানুষের মত মানুষ হয়ে মৃত্যুবরণ কর।

ভেব দেখ, জীবন সায়হ্নে এসে মনে হবে, জীবনটা ক্ষণিকের। মনে হবে, কতদ্রুতই না শেষ হয়ে গেল জীবন। সব কাজ শেষ হবে না। অনেক কাজ পড়ে থাকবে। অনেক হিসাবে মেলাতে পারবে না। অস্তগামী সূর্যের মত মনে হবে। তাই অহংকার করে লাভ কি?

“বড় হও মানুষের মনে
জীবন শেষে শান্তি পাবে মরনে!

অধ্যাপক
ডঃ মুন্সী মুর্তজা আলী
লোক প্রশাসন বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।