দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত, সহিংসতায় নিহত ৬

0
110

দ্রোহ অনলাইন ডেস্ক

দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনী সহিংসতায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক।

নিহতদের মধ্যে নরসিংদীর তিনজন, কক্সবাজারে একজন, চট্টগ্রামে একজন ও কুমিল্লায় একজন রয়েছেন। বিকেল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়।

বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে দেশের ৮৩৫টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। তবে ভোট চলাকালীন ভোটকেন্দ্রে ঢুকে জোর করে ব্যালট পেপারে সিল মারা, প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেওয়াসহ ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, রায়পুরার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থদের মধ্যে নির্বাচনি সহিংসতায় গুলিতে তিন জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও প্রায় ১০ জন। বৃহস্পতিবার ভোরে বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের টিরাবিল ঈদগাঁ ও চান্দেরকান্দি গ্রামে নৌকা ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
রায়পুরা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সত্যজিৎ কুমার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনি সহিংসতায় এখন পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন জন মারা গেছেন। নরসিংদী জেলা হাসপাতালে একজনের লাশ, সদর হাসপাতালে আরও একজন এবং অন্যজনের লাশ তার নিজ বাড়িতে রয়েছে।

তিনি আরও জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আশরাফুল হক ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রর্থী টেলিফোন প্রতীকের জাকির হোসেনের মধ্যে দ্ব›দ্ব চলে আসছে। এ ধারাবাহিকতায় ভোরে টিরাবিল ঈদগাঁ ও চান্দেরকান্দি গ্রামে এই দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে বাঁশগাড়ির নবাববাড়ি এলাকার সিরাজ মিয়ার ছেলে দুলাল মিয়া (৩৭) নিহত হন। তিনি বর্তমান চেয়ারম্যান আশরাফুল হকের ভাতিজা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এদিকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালের আরএমও ডা. মিজানুর রহমান জানান, সকালে জেলা হাসপাতালে বাঁশগাড়ি এলাকার সুবহানপুর গ্রামের হক মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীরের (২৫) গুলিবিদ্ধ লাশ আসে।

অন্যদিকে সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. আমিরুল ইসলাম শামীম জানান, সকালে বাঁশগাড়ি বটতলিকান্দি গ্রামের আব্দুল হেকিম মিয়ার ছেলে সালাহ উদ্দিনের (৩৭) গুলিবিদ্ধ লাশ এসে পৌঁছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন জানান, ভোটের আগে সংঘর্ষ হওয়ায় পরবর্তী নিরবচ্ছিন্নভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। তবে বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থকরা মাঝে-মধ্যে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লেও পুলিশি তৎপরতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, সদর উপজেলায় কুরুশখুল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ আখতারুজ্জামান (৩০) নামে একজন মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার সকালে ইউনিয়নের তেতৈয়ায় এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। আখতারুজ্জামান খুরুশকুল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী (বর্তমান মেম্বার) শেখ কামালের ছোটভাই। ঘটনার পর থেকে ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ আধাঘণ্টা বন্ধ ছিল।

কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ এর সিপিএসসি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান জানান, এ ঘটনায় মেম্বার প্রার্থী শেখ কামালসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। সেখান থেকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে আহত আখতারুজ্জামান মারা যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী।

এদিকে চট্টগ্রাম প্রতিবেদক জানান, ফটিকছড়ি উপজেলার লেলাং ইউনিয়নে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকের সংঘর্ষে শফি উদ্দিন (৫৫) নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের গোপালঘাটা আনন্দ বাজার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এ সময় দুই পরে সংঘর্ষে কমপে ১০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ফটিকছড়ি থানার ওসি রবিউল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ব্যবসায়ী শফি উদ্দিন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী মুরাদের সমর্থক। দুপুরে মেম্বার প্রার্থী মুরাদের সমর্থকদের সঙ্গে অপর প্রার্থী জাকারিয়ার সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, মেঘনা উপজেলার মানিকাচর ইউনিয়নের আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে হামলায় শাওন নামে একজন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) দুপুর ১২ টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হারুন অর রশীদের লোকজন হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর নৌকা ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এ সময় পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। সংঘর্ষে শাওনসহ ৮-১০ জন আহত হন।

মেঘনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ড. বর্ষা লরেন, হাসপাতালে নেওয়ার আগেই শাওনের মৃত্যু হয়। পরে মেঘনা থানা লাশ পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে।

দেশের দশম ইউপি নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৮টি ইউপির তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু পরে তালিকা থেকে একটি ইউপি বাদ দেওয়া হয়। স্থগিত করা হয় সাতটি ইউপির ভোট। এছাড়া বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় পাঁচটি ইউপির সবাই নির্বাচিত হন।

দ্বিতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে ৮১ জন, সংরতি নারী সদস্য পদে ৭৩ জন ও সাধারণ সদস্য (মেম্বার) পদে ২০৩ জন বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ইসির যুগ্ম-সচিব এসএম আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানান।

বিনা ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। ১৮টি জেলার ২৮টি উপজেলায় এসব প্রার্থী বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে সব পদে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হওয়ায় এই উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে কোনো ভোটগ্রহণ হচ্ছে না।

এর আগে, প্রথম ধাপে ৩৬৯ ইউপির ৬৯ জন চেয়ারম্যান ভোটের আগে নির্বাচিত হন। ফলে প্রথম দুই ধাপের নির্বাচনে ১৫০ জন চেয়ারম্যান বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। মূলত দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি এই নির্বাচনসহ সব নির্বাচন বর্জন করায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

প্রথম ধাপে দেশের ৩৬৪ ইউপির ভোট হয়েছে। তৃতীয় ধাপে এক হাজার ৩ ইউপির ভোট হবে আগামী ২৮ নভেম্বর। আর চতুর্থ ধাপে ৮৪০ ইউপিতে আগামী ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।