নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ স্কুল ছাত্রের সন্ধান মেলেনি

0
71
নিখোঁজ অষ্টম শ্রেণির ছাত্র নূসাদ আমানের ফাইল ছবি

স্টাফ রিপোর্টার

বন্ধুদের সাথে গড়াই নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ অষ্টম শ্রেণির ছাত্র নূসাদ আমানের স্কুল ব্যাগ কেটস আর ইউনিফরমের পাশে বসে ছেলের জন্য আহাজারি করছিলেন মা। বাবা তাকে শান্তনা দেবার চেষ্টা করছিলেন। তিনি নিজেও মাঝে মাঝে ডুকরে কেঁদে উঠছিলে। মাটিতে হুমরী খেয়ে পরছিলেন। তাদের আহাজারিতে নদী পারে জড়ো হওয়া হাজারো জনতা শোকে মুহ্যমান হয়ে পরেছিল।

সোমবার সকালে কুষ্টিয়ার খোকসার জানিপুর পুরাতন বাজারের বোর্ড হাউস এলাকার মিলুর ঘাটে নিখোঁজ হয় স্কুল ছাত্র নূসাদ আমান। সে উপজেলার জানিপর ইউনিয়নের পশ্চিম একতার গ্রামের প্রবাস ফেরত শামীম হাসানের ছেলে। উপজেলা সদরের থানা পাড়ার পাঁচ বিল্ডিং এলাকায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে। সে খোকসা জানিপুর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র। নূসাদ আমান নিখোঁজ হওয়ার সময় তার সহপাঠি সানি, সাকিন ও বর্ণ এক সাথে নদীতে গোসলে নেমেছিল।

প্রত্যক্ষদর্শী সহপাঠিরা জানান, নুসাদ আমান তাদের সাথে গড়াই নদীর বোর্ড হাউস এলাকায় ঘুরতে যায়। হঠাৎ করে তাদের মাথায় নদীতে গোসোলের চিন্তা আসে। স্কুলের পোশাক খুলে বইয়ের ব্যাগ নদীর ধারে রেখে চার বন্ধু পানিতে নামে। একপর্যায়ে নূসাদ আমান নদীতে ফেলা জিও ব্যাপের উপর থেকে ঝাপ দেয়। সে পানিতে ডুবে যাওয়ার মূহুত্যে হাত উচু করে নিজেকে রক্ষার মিনতি জানায়। বন্ধুরা চেষ্টাও করে কিন্তু আমানকে আর উদ্ধার করতে পারেনি। নদীর পানির ¯্রােতে সে হারিয়ে যায়।

নুসাদ আমান নিখোজের খবর ছড়ির পড়ার সাথে সাথে মা বাবা ও তার ছোট ভাই নদীর ঘাটে ছুটে আসেন। নদীর ঘাটে ছেলে খুলে রেখে যাওয়া পোশাক কুড়িয়ে এনে কাছে নিয়ে বিলাপ করছেন মা শাহানা ইসলাম। নিখোঁজ ছাত্রের বাবা শাহানাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিল। আবার বিলাপ করতে করতে মাটিতে বসে পরছিলেন।

নিখোঁজ শিক্ষাথীর সাথে থাকা সহপাঠি বর্ণ আহম্মেদ জানান, তারা চার বন্ধুসহ একই শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রী সকালে স্কুল ছুটির ফাঁকে বোর্ড হাউস এলাকায় কফি খাওয়ার জন্য আসে। এ সময় তারা নদীর কুলে স্কুল ডেস খুলে রেখে গোসলে নামে। নিখোঁজ আমানই তাদের ভরসা দিয়েছিল, সে তার ভাইয়ের সাথে নদীতে আগেও গোসল করেছে। এক পর্যায়ে সে (আমান) নদীতে ঝাপ দেয়। ডুবে যাওয়ার সময় সে হাত উঁচু করে সাহার্য চেয়েছিল। সবাই মেলে তাকে উদ্ধারের চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। নিজের সহপাঠিকে চোখের সামনে ডুবে যেতে দেখে তারা নিরুপায়ের মত কেঁদে উঠেছিল।

স্কুল ছাত্র নিখোঁজের খবর পেয়ে খোকসা ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরি দল সকাল পৌরে ১১ টায় ঘটনাস্থলে পৌঁচ্ছায়। তারা ব্যর্থ হলে বিকাল ৪ টায় খুলনা থেকে আসা ডুবুরিরা নদীতে স্পট অনুসন্ধান শুরু করেছে। সন্ধ্যায় এ রিপোট লেখা পর্যন্ত নিখোঁজ ছাত্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

খুলনা থেকে আসা ফায়ার সার্ভিসের ৬ সদস্যের ডুবরি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন লিডার শফিকুল ইসলাম। দলনেতা জানান, প্রথম এক ঘন্টা তারা স্পট অনুসন্ধ্যান করেছেন। নিখোঁজ ছাত্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তারা এখন বড় পরিসরে অনুসন্ধান শুরু করবে।

খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আননুর যায়েদ জানান, সহপাঠীরা মিলে স্কুল থেকে নদীর ধারে বেড়াতে গিয়েছিল। সেখান থেকে একজন পানিতে পড়ে নিখোঁজ হয়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশের পক্ষ থেকে উদ্ধার অভিযানের তদারকি করা হচ্ছে।

খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, ঘটনাটি জেনেছি। ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরী দল উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে।