দ্রোহ অনলাইন ডেস্ক
শেখ হাসিনা নারীনেত্রী হওয়ার কারণেই বারবার জঙ্গিদের এমন হত্যাচেষ্টার মুখে পড়তে হয়েছে বলে পর্যবেণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় সমাবেশস্থলের পাশে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রেখে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় ১০ জনের মৃত্যুদÐ বহাল রেখে হাইকোর্ট থেকে প্রকাশিত রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপিতে এমন পর্যবেণ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার ৮৬ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়। এর আগে রায় প্রদানকারী বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান রায়ে স্বার করেন। গত ১৭ ফেব্রæয়ারি বিচারপতিদ্বয় সংপ্তি রায় দিয়েছিলেন।
৮৬ পৃষ্ঠার রায়টি বাংলায় প্রকাশ করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাষ্ট্রপরে আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ।
জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রবিবার এই রায়ের অনুলিপি জমা দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চে রাষ্ট্রপে মামলা পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ বলেন, ওই মামলার রায় লেখা সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে রায়ের অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে।
কোটালিপাড়ায় শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় (৭৬ কেজি ওজনের বোমা মামলা হিসেবে পরিচিত) ১০ জনের মৃত্যুদÐ, একজনের যাবজ্জীবন ও একজনের ১৪ বছরের কারাদÐ বহাল রেখে গত ১৭ ফেব্রæয়ারি রায় দেন হাইকোর্ট। এই রায়ে নি¤œ আদালতে ১৪ বছরের কারাদÐপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক সরোয়ার হোসেন মিয়াকে খালাস দেয়া হয়। ফাঁসির রায় অনুমোদনের জন্য নি¤œ আদালত থেকে পাঠানো ডেথ রেফারেন্স ও কারাবন্দি আসামিদের করা আপিল আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এই রায় দেন হাইকোর্ট।
মৃত্যুদÐ বহাল রাখা আসামিরা হলেন- ওয়াসিম আখতার ওরফে তারেক হোসেন ওরফে মারফত আলী, মো. রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম ওরফে শিমন খান, মো. ইউসুফ ওরফে আবু মুসা হারুন ওরফে মোসাহাব মোড়ল, শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বক্কর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই ও মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আব্দুর রাজ্জাক ওরফে আবু ওমর।
এছাড়া মেহেদি হাসান ওরফে গাজী খান ওরফে আবদুল ওয়াদুদকে যাবজ্জীবন এবং আনিসুল ওরফে আনিস ও মো. মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমানকে দেয়া ১৪ বছর সশ্রম কারাদÐ বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। তবে কারাবন্দি এই দুজনের এরই মধ্যে সাজাভোগ করা হয়ে গেলে তাদের কারাগার থেকে মুক্তি দিতে বলা হয়েছে। আর নি¤œ আদালতে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদÐপ্রাপ্ত সরোয়ার হোসেন মিয়াকে খালাস দেয়া হয়েছে।
হরকাতুল জেহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান মামলাটিতে মূল আসামি ছিলেন। কিন্তু অন্য মামলায় এই জঙ্গি নেতার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এই মামলা থেকে তার নাম বাদ দেয়া হয়েছে।
২০০০ সালের ২১ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ কলেজের মাঠে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলের পাশ থেকে ৭৬ কেজি ওজনের একটি বোমা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কোটালিপাড়া থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করা হয়।
২০০১ সালের ১৫ নভেম্বর মুফতি হান্নানসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়। আদালতে স্যা দিয়েছেন ৩৪ জন। অন্য মামলায় হুজি নেতা মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এই মামলার রায়ে তার নাম বাদ দেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবার মতায় আসার পর ২০০৯ সালের জুন মাসে অধিকতর তদন্ত করে আরও নয়জনকে অভিযুক্ত হিসেবে যুক্ত করে সম্পূরক চার্জশিট দেয়া হয়। তখন মামলাটি পাঠানো হয় ঢাকা-২ দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনালে। সেই ট্রাইব্যুনালে ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট বিচার শেষ করে রায় দেয়া হয়। রায়ে ১০ জঙ্গির মৃত্যুদÐ ঘোষণা করা হয়। এই রায়ে গুলি করে তাদের প্রত্যেকের মৃত্যুদÐ কার্যকর করার কথা বলা হয়। এরপর হাইকোর্টে রায় গেলে ১০ জঙ্গির মৃত্যুদÐ বহাল রাখা হয়। সোমবার সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশিত হলো।