পাটুরিয়ায় ফেরিডুবির কারণ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য

0
95

দ্রোহ অনলাইন ডেস্ক

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় কুয়াশা জনিত কারণে নদীতে নোঙর করে রাখা ‘রজনীগন্ধা’ ফেরিডুবি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন দায়িত্বশীলরা। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কর্তৃপ বলছে, বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় ফেরিটি ডুবে যায়।

অন্যদিকে নৌ পুলিশ বলছে, নদীতে ডুবোচরে ধাক্কা খেয়ে ফেরির তলা ফেটে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে ফেরিতে থাকা প্রত্যদর্শী ব্যক্তিরা বলছেন, ফেরিতে পানি উঠে কাত হয়ে ফেরিটি ডুবে যায়।

মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার দিকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট থেকে পাটুরিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে আসে ইউটিলিটি (ছোট) ফেরি রজনীগন্ধা। ফেরিতে ৯টি ট্রাক ছিল। ঘন কুয়াশায় রাত দেড়টার দিকে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাটের অদূরে পদ্মা নদীতে ফেরিটি আটকে যায়। এ সময় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। বুধবার সকাল আটটার পরপরই ফেরিটি ডুবে যেতে থাকে। তখন যানবাহনের চালক, সহকারী ও ফেরিতে কর্মরত লোকজন নদীতে ঝাঁপ দেন।

খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসনের লোকজন ট্রলার নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। এর আগে নদীতে ঝাঁপ দেওয়া কয়েকজন সাঁতরে নদীর তীরে ওঠেন। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ছয়জনকে উদ্ধার করে তীরে নিয়ে আসেন। ততণে ফেরিটি যানবাহন নিয়ে পানিতে ডুবে যায়।

এ ঘটনার পর নৌ পুলিশ জানায়, ফেরির দ্বিতীয় ইঞ্জিন চালক হুমায়ুন কবির নিখোঁজ আছেন। ফেরিতে থাকা জীবিত ২০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের অধিকাংশই মালবাহী ট্রাকের শ্রমিক। বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ হামজার মাধ্যমে একটি ট্রাক উদ্ধার করা হয়েছে।

ফেরিডুবির কারণ নিয়ে বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে ফেরিটি নদীতে নোঙর করা ছিল। সকাল আটটার দিকে বালুবাহী একটি বাল্কহেড ফেরিটিকে সজোরে ধাক্কা দিলে এক পাশ কাত হয়ে ফেরিটি নদীতে ডুবে যায়। ঘন কুয়াশায় বাল্কহেডটি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।

নৌ পুলিশের ফরিদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ফেরিটি দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়া ঘাটের আসার পথে ডুবোচরে ধাক্কা লাগে। এতে ফেরির তলা ফুটো হয়ে গেলে পানি ঢুকতে থাকে। কুয়াশায় পথ দেখতে না পেয়ে পাটুরিয়া ঘাটের ২০০ থেকে ২৫০ গজ অদূরে ফেরিটি নোঙর করে। ধীরে ধীরে পানি ঢুকে সকাল আটটার দিকে ৯টি ট্রাকসহ ফেরিটি নদীতে ডুবে যায়।

ফেরিতে থাকা ট্রাকচালক মজনু মিয়া সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ভোর চারটার দিকে ফেরিতে পানি উঠতে থাকে। এ সময় ফেরির লোকজন পানিনিষ্কাশনের চেষ্টা করতে থাকেন। ধীরে ধীরে এক পাশ কাত হয়ে ফেরিটি ডুবতে থাকে। একপর্যায়ে সকাল আটটার দিকে সব মালবাহী ট্রাকসহ ফেরিটি পানিতে তলিয়ে যায়। এ সময় তাঁরা যে যাঁর মতো নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে তীরে ওঠেন।

ফেরিডুবির ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিসির প থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সানজিদা জেসমীনকে প্রধান করে জেলা প্রশাসনের প থেকে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে তাঁদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বলেন, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।