পুকুরে ঝাপ দিয়ে নিখোঁজ কৃষককে উদ্ধার করেছে পুলিশ

0
139

স্টাফ রিপোর্টার

পূর্ব বিরোধের জের ধরে কৃষক রেজাউল আলম রাজা (৪৮) এর উপর একরাতে দুই দফায় হামলা করে প্রতিপক্ষ। তাকে পাশের গ্রামের দোকান থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে স্ত্রী সন্তানের সামনে বেধরক মারপিট করে হামলাকারীরা। নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে পুকুরে ঝাপ দিয়ে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। প্রায় ৪ ঘন্টা চেষ্টার পর রাতেই থানা পুলিশ নিখোঁজ কৃষককে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রবিবার রাত ৭ টার দিকে খোকসার জানিপুর ইউনিয়ন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বহরমপুর গ্রামে কৃষক রেজাউল আলম রাজার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার শিকার কৃষক এই গ্রামের মৃত দাউদ বিশ্বাসের ছেলে। প্রতিপক্ষের নির্যাতন থেকে নিজেকে রক্ষায় রাতের আধারে পুকুরে ঝাপ দিয়ে আত্মগোপন করেন। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর পরিবারের লোকেরা তাকে উদ্ধারে পুকুরের পানিতে নেমে খোঁজাখুজি করেন। পুকুরের পানিতে নিখোঁজ কৃষক রাজার লুঙ্গি ও স্যান্ডে পাওয়া যায়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায় না। এক পর্যায়ে খোকসা থানা পুলিশ ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়ে নিখোঁজ কৃষককে উদ্ধারের নামে। থানা পুলিশ প্রায় ৪ ঘন্টা চেষ্টার পর রাত পৌনে ১১ টায় নিখোঁজের বাড়ি থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরের খাজুরতলা বিল থেকে বিবস্ত্র আহত কৃষক রাজাকে উদ্ধার করে। তার সারা শরীর জুড়ে প্রতিপক্ষের হামলার ক্ষত চিহ্ণ রয়েছে।

আহত রাজার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, রাতের খাবার খেয়ে বাড়িতেই ছিলেন রেজাউল আলম রাজা। হঠাৎ প্রতিপক্ষের ৫/৬ জন লোক বাড়ির মধ্যে ঢুকে তার (রাজার) ওপর আক্রমন করে। এ সময় সে পালিয়ে পাশের গ্রাম একতারপুরের একটি দোকানে লোকালয়ে আশ্রয় নেয়। হামলাকারীরা সেখান থেকে তাকে ধরে আবার বাড়ির উঠানে নিয়ে আসে। দুই শিশু কন্যা ও তার সামনে রাজাকে মাপিট করতে থাকে। তারা হামলাকারীদের থামাতে হাতে-পায়ে ধরতে থাকেন। এক পর্যায়ে সে আবার আত্মরক্ষায় পুকুরের পানিতে ঝাপ দেয়। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর পরিবারের লোকেরা রাজাকে উদ্ধারের জন্য পুকুরের পানিতে খোজাখুজি করে। তার সন্ধান না পেয়ে পুলিশকে জানান। পরে পুলিশের সহায়তার দূরের একটি বিলের কাঁদা পনির ভেতর থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।

দু’দফা হামলার শিকার চিকিৎসাধীন রেজাউল আলম রাজা হামলাকারীদের নির্যাতনের বর্ণনাদেন। তিনি হামলা কারীদের ভয়ে পালিয়ে লোকালয়ে যান। কিন্তু সেখান পালিয়েও রক্ষা পান নি। দ্বিতীয় দফায় লোকজনের ভিতর থেকে তাকে ধরে নিজের বাড়ির উঠানে নিয়ে আসে। স্ত্রী ও শিশু সন্তানদের সামনে মারতে মারতে বিবস্ত্র করে ফেলা হয়। তখন তিনি বাধ্য হয়ে পুকেরে ঝাপদেন। হামলাকারীদের ভয়ে পুকুর পারি দিয়ে বাড়ি থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দুরে খাজুড়তলার বিলের গভীরে গিয়ে আশ্রয় নেয়। পরের পুলিশ তাকে উদ্ধাার করে আনেন।

বাবার উপর হামলা কারীদের নির্যাতন দেখেছে ৬ শ্রেণির শিশুশিক্ষার্থী রিজিয়া ও ৪ শ্রেণির ছাত্রী ফারিয়া। তারা হামলাকারীদের পায়ে পর্যন্ত ধরেছে। কিন্তু তাদের কথা শোনেনি হামলাকারীরা। তাদের বাবার লুঙ্গি পর্যন্ত খুলে ফেলে হামলাকারীরা।

বাড়িতে প্রথম হামলার পর কৃষক রাজা পাশের গ্রাম একতার পুরে লিটনের চায়ের দোকানে আশ্রয় নেয়। রাতেই ওই দোকানীর সাথে দেখা করে কথা বলা হয়। তিনি জানান, দোকানে ১০/১২ জন লোক ছিল। রাজা হন্তদন্ত হয়ে সেখানে আশ্রয় নেয়। এর মধ্যে ৫/৬ জন যুবক রাজাকে ধরে নিয়ে যায়। তিনিসহ ঘটনা স্থলে উপস্থিত সবাই হামলাকারীদের চিনেছেন। তারাও এলাকার লোক। হামলাকারীদের শেকড় অনেক গভীরে থাকায় গ্রামের সবাই তাদের সমিহ করে চলেন।

জানিপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর মজনু মন্ডল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় রাজনীতির গ্রæপিং এর শিকার বহরমপুরের সাধারন মানুষ। গত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে পর থেকে দুই পক্ষ প্রায় ১০টি মামলা করেছে। প্রতিপক্ষের হামলার ভয়ে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য শামীম বিশ্বাসসহ প্রায় ৮০টি পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গিয়েছিল। অনেকেই গ্রামে ফিরে এসেছেন। অনেকেই আর ফেরেনি।

আহতের চাচা বাদশা বিশ্বাস বলেন, গত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের পর নৌকা প্রতিকের প্রার্থী পরাজিত হওয়ার পর কমপক্ষে ১০ বার হামলা হয়েছে। দুই পক্ষ থেকে ১০টি মামলাও করা হয়েছে। তারা বারবারই হামলার শিকার হচ্ছেন। কৃষক রাজার ওপর হামলার এ ঘটনায় তিনি নিজে বাদি হয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।

গ্রাম ছাড়া ইউপি সদস্য শামীম বিশ্বাস বলেন, নির্বাচনে জয়লাভ করেও তিনি গ্রাম ছেড়েছেন ১৫ মাস আগে। তার লোকজন নৌকা প্রতিকের প্রার্থীর হয়ে ভোট করেছিল। তাদের প্রার্থী পরাজিত হয়। এর পর থেকে প্রতিপক্ষ ধারাবাহিক ভাবে হামলা করেছে। গ্রামের সব মানুষ কৃষি নির্ভর। তারা গ্রামের বাইরে থাকায় চাষবাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাদের অনেকেই গ্রামে ফিরেছেন। মামলা করে কোন লাভ হয় না। তাই তিনি ঠাই হারিয়ে ফেলেছেন। প্রতিপক্ষ যখন খুশি যাকে ইচ্ছা মারছে। ফসল তছরুপ করছে। মামলা হলেই জামিন হয়ে আসে।

কৃষকের উপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত রাসেল বিশ্বাসের দেখা মেলেনি। তবে ফোনে কথা বলা হয়। এ ঘটনায় নিজের দায় এড়িয়ে গিয়ে বলেন, কৃষকের উপর হামলার ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। ছেলে পেলে কিছু করলেও করতে পারে। ঘটনার সময় তিন গ্রাম দূরে ছিলেন।

তিনি দাবি করেন, পারিবারিক জমি সম্পত্তি নিয়ে নিজের মধ্যে বিরোধ। রাজনৈতির বিরোধ নয়।

থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা হাবিবুল্লাহ সাথে রাতেই ঘটনাস্থল বহরমপুরে দাঁড়িয়ে কথা হয়। তিনি জানান, ঘটনার পর পরই ঘটনা স্থলে পৌচ্ছান। কয়েক ঘন্টা রুদ্ধশ্বাষ অভিযান চালিয়ে কৃষক রাজাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে দীর্ঘ দিনের বিরোধ। একাধিক মামলা আছে। তৃতীয় পক্ষ কলকাঠি নারায় এ বিরোধ শেষ হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন।