পৌরসভাকে দুষলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা
স্টাফ রিপোর্টার
অপরিকল্পিত ড্রেনের পানির চাপে গড়াই নদীর তীর রক্ষা বাঁধ ধসে বিধবা আয়শা খাতুনের বসত ঘরের মেঝের মাটির চলে গেছে নদীতে। ঘরের মধ্যে খালের সৃষ্টি হয়েছে। স্বামী-শ্বশুরের বড় বাড়ি ছিল। সবই গড়াই নদী গ্রাস করেছে। মাথাগোজার শেষ আশ্রয় টুকু ঝুলে আছে ভাঙ্গনের মুখে। কখন যেনো মাটি শুন্য ঘরটি নদীর ভাঙ্গনে চলে যায়। তার মত আরও প্রায় ত্রিশ পরিবার আবার নদী ভাঙ্গনের হুমকীর মুখে পরেছে। ভাঙ্গন সৃষ্টির জন্য পৌরসভাকে দুষছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
গত শুক্রবার রাত থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে উপজেলা সদরের পৌর এলাকার ২, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জলাবন্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একটানা বৃষ্টির পানিতে উপজেলা ভূমি অফিস, উপজেলা নির্বাচন অফিস, যুবউন্নয়ন অফিস, সমাজসেবা অফিস, একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পরেছে। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে পানিতে ডুর যায় মাঠের সবজী, পুকুরের মাছ, বাড়ি, রাস্তা ঘাট। নদীর তীর রক্ষার বাঁধ ধসে পরেছে।
সোমবার সকালে পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জানিপুর শাহ পাড়াই গড়াই নদীর তীর রক্ষার বাঁধের প্রায় ৩০ ফুট নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। বিধবা আয়শা খাতুনের থাকার ও রান্না ঘরের মেঝের মাটি ভেঙ্গে গড়াই নদীতে চলে গেছে। বিধবার ঘরের ভিতর দিয়ে একটি ছোট খালের সৃষ্টি হয়েছে। সত্তুরউদ্ধ বৃদ্ধার মাথা গোজার শেষ আশ্রয় হারাতে বসেছেন।
একই এলাকায় নদী ভাঙ্গনে মুখে পরেছে ভূমিহীন চাঁদ আলী ও শাহানা খাতুন দম্পতির চার খান ১০ ফুট টিনের ছাপড়া ঘরটি। বাঁধে ভাঙ্গন শুরুর পর এই দম্পতি অন্যত্র ভাড়া বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
মঙ্গলবার পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার কর্মকর্তারা সরেজমিন ঘটনা স্থল পরিদর্শন সময় ভাঙ্গরোধে ড্রেনে পানি প্রবাহ বন্ধের উদ্দোগ নেন। গড়াই নদী তীর রক্ষার বাঁধে ভাঙ্গ সৃষ্টির জন্য পৌর সভাভাকে একক ভাবে দায়ী করেন। তারা জানান, নদীর তীর রক্ষার বাঁধের উপর দিয়ে ড্রেনে পানি সিষ্কাশনের যে পদ্ধতি অবলম্বন করা দরকার পৌর কর্তৃপক্ষ সে পদ্ধতি অবলম্বন করেনি। এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমতিও নেয়নি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, পৌর এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শাহ পাড়ায় অপরিকল্পিত ভাবে ১ হাজার ফুট লম্বা ড্রেন নির্মান করা হয়। বিধবার আয়শার ঘরের ভিতর দিয়ে ৫ ফুট গভীর ড্রেনের পানি ১০ ইঞ্চি পাইপ দিয়ে গড়াই নদীতে অপসারণ করছিল পৌর কর্তৃপক্ষ। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির অতিরিক্ত পানির চাপে সোমবার সকালে ড্রেনের সামনে থেকে নদীর তীর রক্ষার বাঁধ ধসে যায়।
পৌর এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ড়ে সবেজমিন গিয়ে দেখা য়ায়, শাহ পাড়ার শতাধিক পরিবার বৃষ্টির মৌসুমে শুরু থেকে জলাবদ্ধ জীবন কাটাচ্ছেন। এখানে পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে নির্মান করা ড্রেন রয়েছে। কিন্তু ড্রেনটি ময়লা আবর্জনায় ভরে যাওয়ায় পানি প্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে পরেছে। এক অংশের পানির তোরে বিধবা আয়শা খাতুনের বসত ঘরের একাংশসহ রান্না ঘরের বেশীর ভাগ নদীতে চলে গেছে।
ড্রেনের উপর দিয়ে একটু এগিয়ে গিয়ে দেখা যায় পৌর সভার টাকায় এক ব্যক্তির পুকুরের উপর সেতু নির্মান করা হয়েছে। আর এই সেত্ইু ঘটিয়েছে যত বিপত্তি। এই পুকুরেই মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে বিশাল দুটি ড্রেনের মুখ। ফলে একদিকে জলাবন্ধতা স্থায়ী হয়েছে। অন্যদিকে আবজনার ভাগারে পরিনত হয়েছে গোটা মহল্লাটি।
বিধবা আয়শা খাতুন দৃঢ়তার সাথে বলেন, ড্রেন করার সময় নদীতে নামানোর পরিকল্পনা না থাকাটা প্রথম ভুল। দ্বিতীয় ভুল হয়েছে তার ঘরের ভিতর দিয়ে পাইন দিয়ে ড্রেনের পানি নদীতে দেওয়া।
আরও পড়ুন –মাদ্রাসা ছাত্রকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের পর চুল কেটে দেওয়ায় মামলা
বিধবা আয়শা খাতুন বলেন, তার সব জমিই নদীতে চলে গেছে। ব্যাটারা (পানি উন্নন বোর্ডের ঠিকাদার) বাঁধ দেওয়ার পর স্বামীর ভিটা অবশিষ্ট সামান্য অংশে ঘর তুলে বসবাস করছিলাম। এবার আবার নতুন করে ভাঙ্গনে তার রান্না করে খাওয়া যায়গা নদীতে চলে গেছে। বসত ঘর ভাঙ্গনের মধ্যে ঝুলে আছে। রাতে কোথায় থাকবেন এ নিয়ে ভাবছেন। তিনি মনে করেন, পৌর সভার কাউন্সিলের ভুলের কারনে তাদের মাথা গোজার শেষ আশ্রয় হারাতে হচ্ছে।
পৌর সভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সেলিম হুসাইন জানান, পৌর সভার পক্ষে নদী ভাঙ্গন রোধ করা অসম্ভব। পানি উন্নন বোর্ড দ্রæত সংস্কার করে এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করা সহ নদী ভাঙ্গন রোধ করতে হবে। কর্মকর্তাদের কাছে ভাঙ্গরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও তোলেন।
পানি উন্নন বোর্ড কুষ্টিয়া বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম জানান, ড্রেনের পানি প্রবাহ বন্ধ না হলে নদী ভাঙ্গন বৃদ্ধি পাবে। পৌরসভার ভুলের জন্য বাঁধে ভাঙ্গন লেগেছে। ভাঙ্গনরোধ ও সংস্কার পৌরসভাকেই করতে হবে। এ সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম রফিক তার সাথে ছিলেন।
পৌরসভার প্রকৌশলী সুজন আলী স্বীকার কলেন, ড্রেনের পানি বাঁধের উপর দিয়ে অপসারণ করা ভুল হয়েছে। এখন ড্রেনের পানি প্রবাহ বন্ধ করা হবে। পরে বাঁধ সংস্কারের সময় ড্রেনের পানি নামানোর ব্যবস্থা করা হবে। ড্রেনের পানি নদীতে অপসারণ করতে না পারলে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জলাবদ্ধতা দুর করা অসম্ভব হয়ে পরবে।