ড. মুন্সী মুর্তজা আলী
বন্ধু এমন একটা সম্পর্ক, যে সম্পর্কে আত্মীয়তা কিংবা রক্তের সম্পর্ক নেই। তবুও সকল সম্পর্ক ছাড়িয়ে এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক কখনো কখনো সম্পর্কের সফলতার এক চূড়ায় অবস্থান করে। আবার এই বন্ধুত্বের কারনে মানুষের জীবনে ব্যর্থতাও নেমে আসতে পারে। সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ভর করে বন্ধুত্ব নির্বাচনের উপর। জীবনটা অনেক বৃহৎ। এই বৃহৎ জীবনে কত বন্ধু আসবে, যাবে; তার কোন হিসাব রাখাই কষ্টসাধ্য। নুতন বন্ধুত্ব হবে। পুরাতন বন্ধু দূরে চলে যাবে। আবার কখনো কখনো পুরাতন বন্ধুর সাথে নুতন করে বন্ধুত্বও হবে। স্বাধীনতা অর্জন করার থেকে স্বাধীনতা রক্ষা করা যেমন কঠিন। তেমনি বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন করার চেয়ে বন্ধুত্বের সম্পর্ক করার পর সেই সম্পর্ক ধরে রাখাটাই বেশী কঠিন। তাই যার বা যাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে চান, বন্ধুত্ব করার আগে ভেবে নিতে হবে, সে বা তারা কেমন মানুষ। তার সাথে আপনার মনের মিল হবে কিনা? সে আপনার সমস্যা বুঝবে কিনা? আপনার ভালোলাগা কে গুরুত্ব দিবে কিনা? আপনিও তার জন্য কতটুকু ছাড় দিতে পারবেন? এসব বিভিন্ন বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। নইলে বন্ধুত্ব হবার পর বেশীদিন বন্ধুত্ব টিকে না। মনে হতে পারে, বেশী বন্ধু থাকা মনে হয় ভাল। মোটেওনা। বেশী বন্ধু থাকার চেয়ে বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপনের পর সেই বন্ধুত্ব ধরে রাখাটাই উত্তম। একসময় ভাবতাম, বেশী বন্ধু থাকলে মনে হয় নিজেকে অন্যরকম চুড়ায় স্থাপন করা যায়। বেশী বন্ধুত্ব করলে বন্ধুত্বের সার্কেল বড় হয়। তবে এটা রক্ষণাবেক্ষনের জন্য সময় ব্যয় করতে হয় এবং সামান্য হলেও বেশ ঝামেলার কারনও বটে। তাই বন্ধুত্ব নির্বাচনে বেশী ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক স্থাপনের পরিবর্তে সঠিক ব্যক্তি নির্বাচন করাটাই জরুরী। কারণ, বন্ধুরাই একসময় নিজের ক্ষতির কারন হয়। শত্রু ক্ষতি করতে পারবে বলে মানুষ শত্রু থেকে সাবধান থাকে। তাই শত্রু সহজে তাকে ক্ষতি করতে পারেনা। তবে মানুষবন্ধু থেকে সাবধান থাকে না বলেই কখনো কখনো সে বন্ধুর কাছ থেকে ক্ষতির সম্মুখিন হয়।
পৃথিবীতে অনেক মানুষের দুর্ঘটনা ঘটেছে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কাছ থেকে। তাই বন্ধুদের কাছ থেকেও সাবধান থাকা উচিত। তাই বন্ধুত্ব নির্বাচনে কিছুটা কৌশলী হওয়া দোষণীয় নয়। বন্ধুত্বের ভিতর ক্যাটাগরী রাখবেন না। তবে সমমনা ও নিজের মর্যাদার সাথে মিল রেখে বন্ধুত্ব করাটা মঙ্গল। সব বন্ধুর সাথে সমানভাবে মিশবেন না এবং বন্ধু ভেদে নিজের মনের গোপন কথা শেয়ার করবেন না।
পাঠক, আপনারা হয়তো আমার লেখা পড়ে ভাবছেন, আমি বন্ধুত্ব স্থাপনের বিপক্ষের একজন মানুষ? মোটেও না। আমারও অনেক বন্ধু আছে। তবে, ভুলেও জুনিয়রদের সাথে বন্ধুত্বে জড়াবেন না।
বন্ধুত্ব ধরে রাখা খুব সহজ আবার কঠিনও বটে। যেটা আমি আগেও একবারউল্লেখ করেছি। যাদের সাথে বন্ধুত্ব ধরে রাখা সহজ, তারাই প্রকৃত বন্ধু। আর যাদের সাথে বন্ধুত্ব ধরে রাখা কঠিন, তারা প্রকৃত বন্ধু নয়। বন্ধুত্বে মান অভিমান থাকতে পারে। তবে বেশী নয়। যারা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বন্ধুত্ব নষ্টকরে, তাদের সাথে বন্ধুত্ব নয়। কোন বন্ধুর সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বিচ্ছেদ হবার পর তার সাথে নুতন করে সম্পর্ক না জড়ানোই উত্তম। কারন তার সাথে পুনরায় সম্পর্ক স্থাপনের পর আবারও সম্পর্ক খারাপ হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। নিজে যতটুকু বন্ধুর কাছ থেকে আশা করবেন, তার থেকে বেশী বন্ধুকে দেবার মানসিকতা রাখবেন। নইলে বন্ধুত্ব করবেন না। যদি মনে করেন, বন্ধু যতটুকু আপনার জন্য করবে, আপনি তার বেশী একটুও করবেন না। তাতে বন্ধুত্ব হবে। কিন্তু ঘনিষ্ঠতা বাড়বে না। আর যদি নিক্তি দিয়ে পরিমাপ করেন, বন্ধু যতটুকু করবে আপনি তাকে ততটুকুই করবেন- এরকম মনে হলে বন্ধুত্বের বন্ধন অটুট হবেনা। নিজে বন্ধুর জন্য বেশী করার চেষ্টা করবেন। আশা করবেন কম। তাহলেই সম্পর্ক সুদৃঢ় হবে। অর্থ দিয়ে বন্ধুকে বিচার করবেন না এবং বন্ধুদের সাথে অর্থের সম্পর্কে জড়াবেননা। এতে সম্পর্কের অবনতি হয়। তবে নিজে যেমন তেমন মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করলেই ভাল।
বেশী সংখ্যক বন্ধু থেকে ভাল মনের ও গুনের বন্ধু থাকাটাই যুক্তিসিদ্ধ। আর যেসব বন্ধু আপনার বদনাম অন্যের কাছে করে এবং আপনার সামনে এসে প্রশংসা করে। এদেরকে গুডবাই বলুন। আজ এ পর্যন্তই। গুড বাই।