বিএনপির বহিস্কৃত নেত্রী পুনম চতুর্থবারও নির্বাচিত হলেন

0
77

স্টাফ রিপোর্টার

জেলা মহিলা দলের বহিস্কৃত সিনিয়র সহসভাপতির ইসরাত জাহান পুনম টানা চতুর্থ বার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও তিনি সবকটি কেন্দ্রে বিপুল ভোটের ব্যবধানে প্রথম হয়েছেন। সদ্য শেষ হওয়া এই নির্বাচনে প্রায় ৫২ হাজার ভোট পেয়েছেন তিনি। স্বাধীনতার পরবর্তী ৪৮ বছর ধরে তাদের পরিবারের কেউ না কেউ জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। পুনমের চতুর্থ বিজয় তারই ধারাবাহিকতা।

প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত খোকসা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ইসরাত জাহান পুনম আবারও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এটা তা টানা চতুর্থ বিজয়। দেশের প্রথম মহিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাবেয়া খাতুন ও খোকসা পৌরসভার প্রথম মেয়র আনোয়ার আহমেদ তাতারী দম্পতির সন্তান আনিস উজ্জামানের ঘরে ২৮ বছর আগে বধূ হয়ে আসেন পুনম। শ্বশুরের অনুপ্রেরণায় বিয়ের আট বছরের মাথায় ২০০৯ সালে প্রথম বার উপজেলা জেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের নির্বাচনে অংশ নেন। সে বছর প্রায় ৩৩ হাজার ভোট পেয়ে তিনি নির্বাচিত হন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ ও ২০১৯ সালের নির্বাচনে একই পদে বিপুল ভোটের ব্যাবধানে নির্বাচিত হন তিনি। গত ৮ মে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে তিনি প্রায় ৫১,৫২৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। উপজেলার ৫০টি ভোট কেন্দ্রের সবকটিতে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থির থেকে ৫শ থেকে ১৫শ ভোট বেশি পেয়েছেন। প্রতিটি নির্বাচনে তিনি ২৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়ে আসছেন। প্রত্যেক বারই গড়ে তার ভোট বেড়েছে ১৮ হাজারের মত।

বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভোটারদের চাহিদায় কুষ্টিয়া জেলা মহিলা দলের সিনিয়র সহসভাপতি ইসরাত জাহান পুনম ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী হন। আর এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে দল থেকে বহিস্কার করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। দল তাকে বহিস্কার করলেও ভোটাররা তাকে বিপুল পরিমানে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছে।

৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে ভাইস চেয়ারম্যান ইসরাত জাহান পুনমের সাথে দেখা করতে তার থানা পাড়ার বাড়িতে যাওয়া হয়। যেন প্রথাগত ভাবেই বাড়ির সদর দরজার লোহার বিশাল গেটটি খোলাই ছিল। ভিতরে তখন ভাইস চেয়ারম্যান নিজে হাতে ভোটারদের মিষ্টি আর শরবত খাওয়াচ্ছিলেন। আট পৌরে পোশাকে কর্মব্যস্তায় তিনি ঘেমে উঠছিলেন। ওড়নার আঁচল দিয়ে মুখ মুছছিলেন আর কথা বলছিলেন। তাকে সহযোগীতা করছিলেন তারই দুইবোন খাইরুন নেছা মুন্নি ও ফরহাদ জাহান ফারহা।

নতুন ভাইস চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করতে আসাদের সাঙ্গে হায় হ্যালো করা, বসতে আসন দেওয়া। চা, বিস্কুট, মিষ্টি, শরবত দেওয়া থেকে সব কাজ করছিলেন নিঃসন্তান এই জন প্রতিনিধি। পৌর বিএনপির সাধারন সম্পাদক নাফিজ আহমেদ রাজু তার ছোট দেবর। তার উপর বিএনপি কড়া নজর রয়েছে। তাই তিনি ভোটের মাঠেতো দূরের কথা বিজয়ের পরেও পারিবারিক ভাবেও সহযোগীতা করতে পারছে না।

সন্তান ও সম্পদহীন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পুনম বলেন, প্রয়াত শ্বশুরের আদেশ মেনে বিপদে পরা মানুষের পাশে দাড়ানোই তাদের ধারাবাহিক বিজয়ের মূলমন্ত্র। বিপদে পরা মানুষ যাতে ছুটে আসতে পারেন সে জন্য তারা বাড়ির প্রধান দরজা খোলা রাখেন। কেউ এলে তাকে কিছু না দিতে পারলেও তার কথা শোনার সময় দেন। পক্ষ-প্রতিপক্ষ, দল-বিরোধী দল বা শিবিরের কেউ বিপদে পরলে তার কাছে ছুটে যান। বিপদে পরা বা ক্ষুধার্তের জন্য কিছুই না করতে পারলেও তাকে এক খানা বিস্কুট চা আর সমবেদনা নিয়ে পাশে দাড়ালেই মানুষ মনে রাখে।

তিনি আরও জানান, তার শ্বশুর শ্বাশুরী অত্যন্ত সাধারণ মানুষ ছিলেন। তারা বিপদে পরা মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন। আর এতেই মানুষ তাদের ৫০ বছর মনে রেখেছেন। তাদের বাববারই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। এখনো দিচ্ছেন। সবাই কাড়ি-কাড়ি টাকা ব্যয় করে ভোট করেন। কিন্ত তার শ্বশুর শ্বারীর নির্বাচনে ব্যয় করত সাধারণ ভোটারা। সেই রেওয়াজ মাফিক এখন ভোটারাই নির্বাচনে ব্যয় করেন। এ বছরে জামানত, পোষ্টার, মাইক প্রচার সহ সব মিলিয়ে তার ব্যয় হয়েছে ৩ লাখ টাকার কম। এ টাকা দিয়েছেন আত্মীয় স্বজনরা।

জেলা মহিলা দল থেকে বহিস্কার সম্পর্কে তিনি বলেন, বিরোধীরা তদবির করে তাকে অপদস্ত করতে বহিস্কারের নাটক সাজিয়েছে। এ আদেশের ফলে তার ভোটারা সংগঠিত হয়েছে। দলমতের বিবেচনা না করে আনোয়ার খানের পুত্রবধূ হিসেবে আমাকে ভোট দিয়েছেন। আগামীতে নিজে না পাল্টালে তার ভোটাররা পাল্টাবে না। তাকেই ভোট দেবেন।

ভাইস চেয়ারম্যান ইসরাত জাহান পুরম মনে করেন, টাকা আর সম্পদের গুরুত্ব না দিয়ে বিপদে পরা মানুষের পাশে দাঁড়ালে তারা যুগযুগ মনে রাখে। মানুষ সব ভুলে গেলেও বিপদের সময়ে পাশে দাঁড়ানো মানুষকে তারা ভোলে না। বিপদ মুক্ত হলে সে প্রতিদান দেবার চেষ্টা করেন। আর এ কারনে মানুষ তাদের ভালোবেসে বারবার ভোট দিয়ে তাদের সন্মান অক্ষুন্ন রেখেছে। এ কারনে তিনি সর্বস্থরের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

ভাইস চেয়ারম্যান পুনমের নিজের সন্তান নেই। দুই দেবর আর ভোটারদের সন্তাদের নিজের সন্তান বানিয়ে নিয়েছেন। দীর্ঘ সময় ধরে ভোটারদের মনের মধ্যে নিজের ও পরিবারের প্রতি আস্তা ধরে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, শ্বশুরের দেখানো পথ তাকে বারবার সফলতা এনে দিয়েছে। স্বাধীনতার পরবর্তী ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তার শ্বাশুরী রাবেয়া খাতুন বৃহত্তর খোকসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। এরপর শ্বশুর আনোয়ার আহমেদ তাতারী দীর্ঘদিন একই ইউনিনের চেয়ারম্যান ও পরে খোকসা পৌরসভার প্রথম ও দ্বিতীয় ভোটে মেয়র নির্বাচত হয়েছিন। তাদের ধারাবাহিকতায় তিনি ভোটের রাজনীতিতে এগিয়ে আছেন। মানুষের প্রতি ভালোবার প্রতিদান হিসেবে ১৫ বছরে তার ভোট বেড়েছে প্রায় দুই গুন হারে।