কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
বাবা দিনমজুরের কাজ করে। মা গৃহিনী। পরিবারে অভাব, অনটন ও দৈন্যতা তাদের নিত্যসঙ্গী। তবে এ সব দৈন্যদশা কাটিয়ে নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে মেলে ধরেছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার আশিকুর রহমান আশিক। স্বপ্ন পড়াশোনা শেষ করে পুলিশ কর্মকর্তা হবেন। দেশ সেবার পাশাপাশি হাল ধরবেন সংসারে। পাজর ভাঙা পরিশ্রম থেকে রেহায় দিবেন বাবা – মাকে।
তবে সম্প্রতি তার শরীরে বাসা বেধেঁছে এক ধরেনের রোগ। চিকিৎসক জানিয়েছে এই রোগকে ‘ প্যারালাইজড ‘বলা হয়। ফলে তার জালে আর ধরা দিলোনা পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন। আর এখন অর্থাভাবে থমকে গেছে চিকিৎসা এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার বাসনা। প্রতিমাসে অন্তত একবার হলেও থেরাপি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। কিন্তু গেল ছয় মাসে অর্থাভাবে একবার নেওয়া হয়নি থেরাপি। ফলে ধীরে ধীরে তাঁর শরীরের ডান হাত, কাঁধ ও ডান পার্শ্ব শক্তি হারাচ্ছে।
আশিক উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের তুষার মালিয়াট গ্রামের মো. আরিফুল ইসলামের ছেলে। এছাড়াও তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) সমাজতত্ত¡ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। দুই ভাইবোনের মধ্যে আশিক বড়। ছোটবোন স্থানীয় একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবা পেশায় একজন দিনমজুর ও মা গৃহিণী। তাদের নিজস্ব কোনো জায়গা জমি নেই। তার দাদা মৃত কেছমত আলী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। কয়েক বছর আগে একখন্ড সরকারি জমিসহ বীর নিবাস নামে একটি পাকা ঘর দিয়েছেন সরকার। সেখানে বাস করেন তারা।
আশিকুরের ভাষ্য, চিকিৎসক তাকে বলেছেন উন্নত চিকিৎসা করালে সুস্থ হয়ে উঠবেন তিনি। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন তিন – চার লাখ টাকা। সুস্থ হলে পুলিশ না হোক, অন্তত ব্যাংকের চাকুরি করার প্রত্যাশা তার।
গতকাল দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জিকে খালের ধারে অবস্থিত বীর নিবাস নামের একটি ছোট্ট ঘর। ঘরের একটি কক্ষের বিছানার উপর বসে অকেজো হাতটি নড়াচড়া করার চেষ্টা করছেন আশিক। তার চোখে মুখে হতাশার চাপ। সুস্থ জীবনে ফিরে আসার আকুতি।
এসময় চবি শিক্ষার্থী আশিক বলেন, ২০২৩ সালের নভেম্বরে একদিন হঠাৎ ডান হাত ও ডান পাশ্বের কিছু অংশ অকেজ হয়ে যায়। তখন চট্টগ্রাম পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গেলে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন চিকিৎসক। উপার্জনের একমাত্র অবলম্ব এইচপি ব্র্যান্ডের ল্যাপটপটি বিক্রি করে পরীক্ষা – নিরীক্ষা করা হয়। পরে চিকিৎসক বললেন, এটি এক প্রকার প্যারালাইজড রোগ। তখন থেরাপির সঙ্গে দামি দামি ওষুধ লিখলেন চিকিৎসক। প্রথম কয়েকমাস ওষুধ সেবন করলাম। কয়েকবার চিকিৎসকের কাছেও গেলাম। তবে অর্থাভাবে গেল ছয়মাস চিকিৎসা বন্ধ আছে।
তিনি আরো বলেন, চিকিৎসক দ্রুত দেশের বাইরে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এতে খরচ লাগতে পারে তিন – চার লাখ। চিকিৎসায় বিলম্ব হলে সারা শরীর প্যারালাইজড আক্রান্ত হবার শঙ্কা রয়েছে। তবুও অর্থাভাবে থমকে আছে জীবন ও স্বপ্ন।
আশিকের বাবা আরিফুল বলেন, গরীব মানুষ। খাওয়ার টাকায় নাই। চিকিৎসা হবি কিভাবেন। ছেলে সব সময় মন খারাপ করে ঘরের ভিতরে থাকে। আপনারা এটু সাহায্য করলে ছোয়ালডা বাঁচাতে পারতেন।
সমাজের বিত্তবান ও স্বহৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে সহযোগীতা চেয়েছেন আশিক ও তার পরিবার। আশিককে সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা— ইসলামি ব্যাংক, হিসাবের নাম: আশিকুর রহমান, হিসাব নম্বর: ২০৫০৭৭৭৬৭০৬৪৩৬৯১০, পান্টি শাখা। সাহায্য পাঠানো যাবে মুঠোফোন নাম্বারেও – ০১৯৭০০২৯৮২৪ (নগদ,বিকাশ) ০১৯৭০০২৯৮২৪৯ (রকেট)।
আরও পড়ুন – খোকসায় শিশু ও বৃদ্ধাকে পৃথক যৌন হয়রানির অভিযোগ
লিখিত আবেদন করলে সাধ্যসত সহযোগীতার আশ্বাস দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম। সরকার ও প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন তিনি।