বেসরকারি হাসপাতালের অনিয়মঃ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

0
141

করোনা চিকিৎসায় নিয়োগ পওয়া বেশকিছু বেসরকারি হাসপাতাল সরকারের বেঁধে দেয়া নিয়মনীতি মানছে না। আশ্চর্যের বিষয় হল, করোনা চিকিৎসার তালিকাভুক্ত অনেক হাসপাতালের লাইসেন্সই নবায়ন করা হয়নি। কোন কোন প্রতিষ্ঠান ‘পিসিআর’ পরীক্ষার অনুমোদন নিয়ে রাখলেও তাদের প্রয়োজনীয় মেশিন ও সরঞ্জাম নেই। অনুমোদন ছাড়াই অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করছে কিছু হাসপাতাল।

রিজেন্ট হাসপাতালের মত অসংখ্য প্রতিষ্ঠান করোনা পরীক্ষার নামে রোগীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে, যা নিঃসন্দেহে বড় ধরনের অপরাধ এবং এর দায় সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ এড়াতে পারে না। বস্তুত এসব হাসপাতালের কর্মকা- দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক- পুরো বিষয়টিকে ‘হরিশংকরের গোয়াল’ বানিয়ে ফেলা হয়েছে।

দেশে করোনা আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার রিজেন্ট হাসপাতালসহ ২৯টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ল্যাবকে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও সেবা প্রদানের অনুমতি প্রদান করে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অধিকাংশই লাইসেন্স নবায়ন করেনি- এ তথ্য কর্তৃপক্ষের অজানা থাকার কথা নয়। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোয় করোনা রোগীর সেবা দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন, আইসিইউ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আছে কি না, তা যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে অনুমতি দেয়া বাধ্যতামূলক হলেও কেন সেটা উপেক্ষা করা হল, তা উদ্ঘাটন করে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত।

সরকারি হাসপাতালে ভোগান্তি ও ভিড় এড়াতে অনেকেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শরণাপন্ন হয়েছেন। রাজধানীর উত্তরায় রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা পরীক্ষায় ভয়াবহ জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ার পর এ ব্যাপারে রোগী ও স্বজনদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিঃসন্দেহে বহুগুণ বেড়ে গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তালিকা অনুযায়ী সারা দেশে মোট ১৭ হাজার ২৪৪টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে। দুশ্চিন্তার বিষয় হল, প্রতি অর্থবছরে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নিবন্ধন নবায়ন করা বাধ্যতামূলক হলেও তাদের অন্তত ৫০ ভাগই নিবন্ধন নবায়নের গরজ বোধ করেনি। এসব বিষয় স্বাস্থ্য বিভাগের দেখার কথা।

এ প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক-স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তাহলে কাজটা কী? মূলত তাদের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণেই বছরের পর বছর বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো আইন ও নিয়মনীতি উপেক্ষা করে মানুষের সঙ্গে বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে চলেছে।

আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতালের নিবন্ধন ২০১৪ সাল থেকেই নবায়ন করা হয়নি। প্রচলিত আইনের চোখে অবৈধ এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে করোনা চিকিৎসা সংক্রান্ত চুক্তি কীভাবে সম্পাদন করেছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর-এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি।

দেশের স্বাস্থ্য খাতে নানারকম অনিয়ম-দুর্নীতির কথা সর্বজনবিদিত। করোনাকালীন সংকটে এসবেরই কিছু কিছু প্রকাশ্যে বেড়িয়ে এসেছে মাত্র। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের দৌরাত্বে সাধারণ মানুষ দিনের পর দিন ভোগান্তি, হয়রানি ও ক্ষতির শিকার হলেও স্বাস্থ্য অধিদফতর কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এর একটাই কারণ- ‘উপরি কামাই’।

করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িতদের পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।