স্টাফ রিপোর্টার
প্রতিবন্ধী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হাসেন আলী (৫০)। তিন চাকার হুইল চেয়ার ঠেলে গ্রামে গ্রামে কাটা ফাটার মলম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বয়সের ভারে এখন আর হুইল চেয়ার ঠেলে বেশী দূরে যেতে পারেন না। তাই ব্যাটারী চালিত হুইল চেয়ারের জন্য তার মিনতি। রাস্তায় দেখা হলে দু’হাত উচিয়ে চিৎকার বলেন, একখানা গাড়ির ব্যবস্থা হলে কামকাজ করে খাতি পারতাম (কাজ করে খেতে পারতেন)।
কুষ্টিয়ার খোকসার গোপগ্রাম ইউনিয়নের সাতপাখিয় বিহারিয়া গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে হাসেন আলী। দশ বছর বয়সে লুঙ্গি তৈরীর কারখানায় যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় বাম পা হারান। ডান পা ডঁ অসার হয়ে যায়। হারিয়ে ফেলেন কর্মক্ষমতা। প্রথম দিকে ট্রেনে ট্রেনে ভিক্ষা করতে শুরু হরে। বছর দশেক আগে স্থানীয় একটি সেবা সংস্থার তাকে একটা তিন চাকার হুইল চেয়ার দেয়। আর সে চেয়ার পাওয়ার পর আগের পেশা ছেড়ে দেন। হুইল চেয়ার ঠেলে স্থানীয় হাটবাজার ও গ্রাম পাড়া মহল্লায় হাকডাক ছেড়ে বৌ ঝিদের কাছে কাটা ফাটার মলম বিক্রি শুরু করেন। করোনার অতিমারীর সময় থেকে ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। দিনে ২/৩শ টাকা রোজগার করতে পারছেন না। এ ছাড়া বয়সের ভারে এখন আর চেয়ার ঠেলতে পারেন না। দুই হাত ঝিজি (অবস) ধরে আসে। সামান্য দূরে গিয়ে আবার দোম নিতে হয়। এ ছাড়া করোনায় বসে খেয়ে পুজি হরিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু সংসার বড় হয়েছে। এখন ৪ সন্তান স্ত্রী ও সে মিলে ৬ জনের সংসার।
বুধবার সকালে খোকসা পৌর এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ডের পাতিলডাঙ্গী যাবার রাস্তায় আল-হেলাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দেখা হয় প্রতিবন্ধি হাসেন আলীর সাথে। সামান্য কিছু মলমের পসরা সাজিয়ে হাক ডাক ছাড়তে ছাড়তে একমাত্র বাহন হুইল চেয়ার ঠেলে এগিয়ে চলেছে। দূর থেকে দেখেই আত্মহারা হয়ে একই ভঙ্গিতে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন “ কাকা চেষ্টা করনে, আর পরছিনে। এই গাড়ি আর ঠেলা যাচ্ছে না।” আত্মবিশ্বাসের সাথে আরও বলেন আপনি চেষ্টা করলেই হয়। তার পরে সংসারের নানান সমস্যা। মেয়েরা বড় হচ্ছে। ছেলেদের কর্ম সংস্থান হয়নি। চলতি বছরের পাওয়া প্রতিবন্ধী ভাতার টাকার প্রথম কিস্তি হ্যাকারা নিয়ে নিয়েছে। দিন যাচ্ছে একবেলা পর এক বেলা খেয়ে। তবে ব্যাটারী চালিত এক খান হুইল চেয়ার হলেই যেন তার সমস্যার সমাধান হবে।